কক্সবাজার-টেকনাফ রোডে ইয়াবা পাচারের উৎসব চলছে। ইয়াবা প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যতই কঠোর হচ্ছে, ততই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইয়াবা পাচার। কিছুতেই যেন বন্ধ করা যাচ্ছে না ইয়াবার কারবারিদের দৌরাত্ম্য। পাচারকারীরা নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করে তাদের অপকর্ম অব্যাহত রেখেছে। বিশেষ করে ডিসেম্বরের শুরু থেকে হঠাৎ করে অবিশ্বাস্যভাবে বেড়েছে ইয়াবা পাচার। গত ১০ দিনে ইয়াবার কয়েকটি বড় চালান ধরা পড়ছে টেকনাফ ও মেরিন ড্রাইভ সড়কে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, বাংলাদেশ মিয়ানমারের টেকনাফ সীমান্ত এলাকায় ইয়াবা সিন্ডিকেট নানাভাবে সক্রিয় রয়েছে। চলতি মাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১০টি বড় চালান ধরা পড়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিনই জেলা শহর, উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি ইয়াবার ছোটখাটো চালান ধরছে। সে সঙ্গে ধরা পড়ছে পাচারকারীরাও। তবে ধৃতদের মধ্যে অধিকাংশই মিয়ানমারের নাগরিক। শুক্রবার ভোররাতে টেকনাফে ৮ লাখ ইয়াবা ও ৬টি অস্ত্র গুলিসহ তালিকাভুক্ত ৪ জন মাদক কারবারীকে আটক করেছে র্যাব। উপজেলার হ্নীলা ইউপির রঙ্গীখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। ১০ই ডিসেম্বর পৃথক অভিযানে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ ও শাহপরীর দ্বীপ প্যারাবন এলাকা থেকে পৃথক দুটি অভিযানে ২ লাখ ৮০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করেছে কোস্ট গার্ড। ৯ই ডিসেম্বর ভোরে টেকনাফ উপজেলায় বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ইমাম হোসেন নামের এক মাদক কারবারি নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে এক লাখ ২০ হাজার পিস ইয়াবা, একটি দেশীয় তৈরি বন্দুক, তাজা কার্তুজ ও ধারাল ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। ৮ ডিসেম্বর হ্নীলা ইউপির দমদমিয়া ওমরখাল সংলগ্ন নেচার পার্ক এলাকা থেকে ১০ হাজার ইয়াবাসহ মোহাম্মদ রমজান নামের এক কারবারিকে আটক করে বিজিবি। ৭ই ডিসেম্বর হ্নীলা জাদিমোরা নাফনদীর কিনারা থেকে ৪৪ হাজার ইয়াবাসহ হ্নীলা ইউনিয়ন জাদীমোরা ২৭-নং রোহিঙ্গা ক্যামেপ সি-ব্লকের বাসিন্দা মৃত আলী হোসেনের ছেলে মো. হাফেজ আহমদ(২৫)কে আটক করে বিজিবি। ৫ই ডিসেম্বর ৬০ হাজার ইয়াবা ও অস্ত্রসহ ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদকে আটক করে বিজিবি। ধৃত ফরহাদ হ্নীলা ইউনিয়ন পশ্চিম লেদা এলাকার মৃত আমীর হোসেনের পুত্র এবং হ্নীলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সমপাদক। ৪ঠা ডিসেম্বর হ্নীলা সীমান্ত এলাকা থেকে আবারও ৪ কোটি, ৫০ লাখ টাকার ইয়াবা উদ্ধার করে বিজিবি। এসময় হ্নীলা জাদিমোড়া এলাকার আব্দুল মোনাফের পুত্র শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী আমীর হামজা (৩৫) ও টেকনাফ পৌরসভা অলিয়াবাদ এলাকার মো. হোসেনের পুত্র মো. আইয়ুব (২৫) কে আটক করা হয়। ২রা ডিসেম্বর পৃথক ২টি অভিযান পরিচালনা ১ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা মূল্যমানের ৪৪ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে বিজিবি। এসময় ইয়াবার মালিক আব্দুল মজিদ (৩৯) কে আটক করে। ১লা ডিসেম্বর হ্নীলা প্রধান সড়ক থেকে ১০ কোটি টাকার ইয়াবাসহ আবুল কালাম নামে এক রোহিঙ্গা মাদক পাচারকারীকে আটক করে র্যাব। সে মিয়ানমার থেকে আসা মংডু মাংগালা এলাকার মৃত ইউসুফের পুত্র। একইভাবে গত নভেম্বর মাসে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় র্যাব সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ৯ কোটি, ৪৫ লাখ, ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের ১ লাখ, ৮৯ হাজার, ১৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। উক্ত অভিযানে মাদক বিক্রির নগদ টাকাও জব্দ করা হয়। পাশাপাশি মাদক কারবারে জড়িত ৬ জন অপরাধীকেও আটক করা হয়। র্যাব-১৫ সিপিসি-১ টেকনাফ শাখার দায়িত্বরত কোমপানী কমান্ডার লেঃ মির্জা শাহেদ মাহাতাব এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। জানা যায়, উখিয়া ও টেকনাফ এলাকার অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে প্রশাসনিক নজরদারি খুবই দুর্বল। বিকেল চারটার পর পুরো নিয়ন্ত্রণ রোহিঙ্গা মাঝি ও মৌলভীদের হাতে চলে যায়। তবে রোহিঙ্গারা চাইলে যে কেউ সেখানে ইচ্ছেমতো যাওয়া আসা করতে পারে। এ সুযোগে তারা ইয়াবা কারবারে জড়িয়ে পড়ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। উখিয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, এমন কোন অপরাধ নেই, যা রোহিঙ্গারা করছে না। তাদের বড় একটি অংশ এখন ইয়াবা কারবারে জড়িত হয়ে পড়েছে। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে কিছু ধরা পড়লেও বেশির ভাগই অধরা থেকে যাচ্ছে। তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়ানোর উপর জোর দিয়ে বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে নিয়মিত পুলিশি নজরদারি দরকার।