Logo
HEL [tta_listen_btn]

২০১৯ সালের দেশ কাঁপানো ৩ হত্যাকাণ্ড

২০১৯ সালের আলোচিত কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশ ও বিশ্বের নামকরা সব গণমাধ্যমে আলোচনার ঝড় উঠে। দেশের সাধারণ মানুষ একই সুরে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এসব হত্যার বিচার চায়। আলোচিত এ সব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বরগুনায় রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা। অধ্যক্ষের যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ করায় ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ডেকে নিয়ে তার সহপাঠীরা পিটিয়ে হত্যা করে।

তবে আশার কথা হল দেশ কাঁপানো এই হত্যাকাণ্ডগুলোর মুল আসামিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে পেরেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে নুসরাত হত্যা মামলার রায় দিয়েছেন আদালত।

প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা

২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা সাতজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।

এরপর ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ভাগে বিভক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন।

হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড গত ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।

মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মুসা এখনো পলাতক। এছাড়া নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি উচ্চ আদালতের নির্দেশে জামিনে রয়েছেন। আর বাকি আসামিরা কারাগারে রয়েছেন।

নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা

পরিকল্পিতভাবে ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহানকে মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবন সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে ডেকে নিয়ে হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে অগ্নিদগ্ধ করা হয়। ১০ এপ্রিল রাতে নুসরাত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর আগে ৮ এপ্রিল নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। পরে সেই মামলা হত্যা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।

এরপর ২৪ অক্টোবর বেলা সোয়া ১১টার দিকে ফেনী জজ কোর্টের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে হত্যা মামলায় প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলাসহ ১৬ জনের ফাঁসির রায় দেয়া হয়।

পরে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামির মধ্যে চার আসামিকে (১৩ নভেম্বর) বুধবার ফেনী কারাগার থেকে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। এর আগে (১২ নভেম্বর) মঙ্গলবার এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামিকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

একই সাথে এ ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে আট বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

এছাড়াও, তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয়মাসের জেল দেওয়া হয়েছে। নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় হওয়া মামলায় তার এই সাজা হয়।

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড

২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ফেসবুকে স্ট্যাটাসের জেরে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ, আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও তদন্তে পাওয়া তথ্যানুযায়ী চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, শিবিরকর্মী সন্দেহে আবরারকে খুন করা হয়েছে। আসামিরা ওই হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ নিয়েছেন। চার্জশিটে যে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ২১ আসামি কারাগারে রয়েছেন। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৬ জন এবং এজাহারের বাইরে পাঁচজন আসামি রয়েছেন।

অভিযোগপত্রে উল্লেখিত আসামিরা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৩তম ব্যাচ), মুহতাসিম ফুয়াদ (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৪তম ব্যাচ), অনিক সরকার (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়ো মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), মনিরুজ্জামান মনির (পানিসম্পদ বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), মো. মাজেদুর রহমান (ম্যাটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ), মোজাহিদুর রহমান (ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), হোসেন মোহাম্মদ তোহা (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ), জিসান (ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), মো. আকাশ (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), মো. শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ), নাজমুল শাদাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ), এহতেশামুল রাব্বি তানীম (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ), মোয়াজ আবু হোরাইরা (কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ), মুনতাসির আল জেমি (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ), অমিত সাহা (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), মুজতবা রাফিদ (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ইসতিয়াক হাসান মুন্না (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), শামসুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ), মিজানুর রহমান (পানিসম্পদ বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ) ও মাহামুদ সেতু (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৪তম ব্যাচ)।

অন্যদিকে আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের দাবিতে দুই মাসের বেশি একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের পর ৪ ডিসেম্বর (বুধবার) ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

এছাড়া আবরার হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মোট ২৬ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে বুয়েট প্রশাসন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Theme Created By Raytahost.Com