Logo
HEL [tta_listen_btn]

সিলেটে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ!

স্টাফ রিপোর্টার : মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের পরিদর্শক খায়রুল আলম সহ তার সঙ্গীয় ফোর্সের বিরুদ্ধে মাদক বিরোধী অভিযানের নামে নিরীহ লোকজনকে আটক করে ঘুষ আদায়,ক্যাশ টাকা ও মোবাইল ছিনতাইয়ের মত গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগে প্রকাশ, গত ২৮ শে নভেম্বর বেলা ১২ টা থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়য়ের পরিদর্শক খায়রুল আলমের নেতৃত্বে একদল কর্মকর্তা চুনারুঘাট উপজেলার শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজার পয়েন্টে অবস্থান করেন। বেলা ১ টার সময় সিলেট গোয়াইন ঘাটের পাখি মিয়া নামক এক ইয়াবা কারবারিকে ধাওয়া করলে ওই ইয়াবা কারবারি পাখি মিয়া দৌঁড়ে পালানোর সময় উবাহাটা গ্রামের তৈয়ব আলী নামক এক নিরীহ পথচারীর গায়ের উপরে পড়ে যায়।

তৎক্ষনাত মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ইয়াবা কারবারি পাখি মিয়া সহ নিরীহ পথচারী তৈয়ব আলীকে জাপটে ধরে তাদের ব্যবহৃত কালো রঙের মাইক্রো গাড়িতে উঠিয়ে নেয়। বেলা দেড়টার পর থেকে আটক হওয়া নিরীহ পথচারী তৈয়ব আলীর মোবাইল নং (০১৩১৭৫৫৯৪৩৫) থেকে তার ছেলের (০১৭৯৪৫৮৩৬৮৯) নং মোবাইলে ফোন দিয়ে অভিযানে থাকা একজন কর্মকর্তা জানান “তোমার বাবাকে ছাড়াতে হলে ১০ মিনিটের মধ্যে ২০ হাজার টাকা পাঠাও, নেও তোমার বাবার সাথে কথা বল “। এ কথা বলে আটক হওয়া পথচারী তৈয়ব আলীর কানে ফোন দেয়। তৈয়ব আলীও অফিসারের কথামতো তার ছেলেকে ফোনে বলে ” তাড়াতাড়ি টাকা জোগার করে দিয়ে দাও,টাকা দিলে ওরা আমাকে ছাইড়া দিবে “।

তৈয়ব আলীর দিনমজুর পরিবার ২০ হাজার টাকা জোগার করতে দ্বিকবিদিক ছুটতে থাকে। বেলা ৩ টা ১৯ মিনিটে তৈয়ব আলীর ছেলে শাকিল আহমেদ লিটন শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজার মসজিদ মার্কেটের মাসুদ স্টোরের বিকাশ এজেন্ট নং (০১৯৯৬৯৩২৮৪৭) ও বিকাশ পার্সোনাল নং (০১৬৩৯৮৪০৩০৩) থেকে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দেয়া বিকাশ পার্সোনাল (০১৯৩৬৮৬৬৭৩৩) নাম্বারে ১০ হাজার করে একই সময়ে দুই ধাপে ২০ হাজার টাকা পাঠায়। টাকা পাঠানোর পরে আটক হওয়া নিরীহ পথচারী তৈয়ব আলীর ফোনে কল দিলে রিসিভ করে অফিসার বলেন আধা ঘণ্টা পর যোগাযোগ কর। আধাঘন্টা পর যোগাযোগ করলে দেখা যায় আটক হওয়া তৈয়ব আলীর ফোন বন্ধ। সন্ধ্যা ৬ টার পর চুনারুঘাট থানা থেকে তৈয়ব আলীর ছেলের মোবাইলে কল আসে যে,তৈয়ব আলী থানা হাজতে।

পরে তৈয়ব আলীর পরিবারের লোকজন থানা হাজতে গিয়ে দেখে ইয়াবা কারবারি পাখি মিয়া ও পথচারী তৈয়ব আলী থানা হাজতে আটক অবস্থায় রয়েছে। হাজতে থাকা তৈয়ব আলীকে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, “চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়ির অপেক্ষায় শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজার দাঁড়িয়েছিলাম। এমন সময় হটাৎ করে এই লোক (পাখি মিয়া) দৌড়ে এসে আমার উপরে পড়ে যায়। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা (মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের গোয়েন্দারা) আমাকে ধরে গাড়িতে তুলে নিয়ে আসে। আমি মাদক ব্যবসায়ী নই একথা জানার পর তারা বলে বাড়ি থেকে ফোন করে টাকা আনা তাহলে তোকে ছেড়ে দিব, আমার মোবাইল দিয়ে তারা ফোন দিয়ে আমার ছেলের কাছে টাকা চায়, এবং আমাকে দিয়েও টাকা চাওয়ায় “।

বাড়ি থেকে টাকা আসার পর অফিসাররা বলে যে, ” লোকজনের সামনে তোমাকে ধরছি, ছাড়লে সমস্যা হবে, তবে এক সপ্তাহের মধ্যে জামিন হয়ে যাবে। তারা আমার মোবাইল ও পকেটে থাকা নগদ ১২ হাজার টাকাও ছিনিয়ে নিয়ে যায় “। হাজতে থাকা পাখি মিয়াকে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, “২০ হাজার টাকা আমার ( পাখি মিয়ার) মোবাইলে আনাইছে এবং অফিসার মোস্তফা কামাল আমার পকেটের নগদ ৪৫ হাজার টাকা, মোবাইল ও মারধর করে বিকাশের পিনকোড নিয়ে যায় “। মামলার এজহারে দেখা যায়, পাখি মিয়াকে ১০০০ পিস ইয়াবা পাওয়া গেছে বলে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং পথচারী তৈয়ব আলীর বিকাশে ২০ হাজার, নগদ ১২ হাজার মোট ৩২ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার পরও তাকে মাদক কারবারির সহযোগী হিসেবে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

এদিকে জব্দ তালিকায় নগদ টাকা বা মোবাইল এসবের কিছুই দেখানো হয়নি। এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে মামলার বাদী পরিদর্শক খায়রুল আলমের সাথে যোগাযোগ করলে আটককৃত ব্যক্তিদের কাছে কোনো মোবাইল ফোন পাননি বা তাদের কাছে কোনো প্রকার টাকা পয়সা চাননি বলে অস্বীকার করেছেন। গ্রেফতার ব্যক্তিদের কাছে যদি মোবাইল না-ই থাকতো তাহলে এজহারে বেলা দেড়টায় গ্রেফতার দেখানো তৈয়ব আলী গ্রেফতার অবস্থায় তার নিজের নাম্বার থেকে অফিসার ও সে নিজে ( তৈয়ব আলী) টাকা চাওয়া সহ ৪ টা পর্যন্ত পরিবারের সাথে কথা বলে কিভাবে! এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।

গ্রেফতারের পর থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিসার কয়েকদফা কল করে যে টাকা চেয়েছে তার কল রেকর্ড ভিকটিমের পরিবারের কাছে যেমন রয়েছে তেমনি সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটরেও থাকতে পারে। যা ডিজিটাল পদ্ধতি অবলম্বন করে তদন্ত করলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঘুষ,দূর্নীতি ও নিরীহ মানুষকে হয়রানির বিষয়ের সত্য উদঘাটন হবে বলে সচেতন মহলের ধারণা। এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে ভিকটিমের পরিবার লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Theme Created By Raytahost.Com