করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে জাতীয় ও বৈশ্বিক মহাদুর্যোগ মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে বিএনপি। দুর্যোগ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তায় ৮৭ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনে সরকারের কাছে প্রস্তাব করেছে বিএনপি। শনিবার (০৪ এপ্রিল) করোনা সংকট মোকাবিলায় অর্থনৈতিক প্যাকেজ প্রস্তাবনা ঘোষণার জন্য দলের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ডাক দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইসাথে দেশের বরেণ্য অর্থনীতিবিদদের সমন্বয়ে একটি আপত্কালীন অর্থনৈতিক টাস্ক ফোর্স গঠনেরও দাবি করেছে বিএনপি।
এর জন্য প্রয়োজনে সরকারের সাথে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করে ফখরুল বলেন, ‘জাতীয় ও বৈশ্বিক মহাদুর্যোগ মোকাবেলায় যে কোনো গঠনমূলক ও কল্যাণমুখী উদ্যোগে শামিল হতে বিএনপি প্রস্তুত রয়েছে। এ দুর্যোগ পরিস্থিতিতে দম্ভ, অহংকার ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরিহার করে সরকারকেই এই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা এই মহাদুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব।’
তিনি বলেন, ‘কাশি-জ্বর হলেই তা করোনা নাও হতে পারে। তাই এখন প্রয়োজন পরীক্ষা, পরীক্ষা আর পরীক্ষা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে সরকারের রোগ পরীক্ষা এবং আক্রান্তের পরিসংখ্যানের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অথচ কোরিয়া, সিংগাপুরসহ যে সব দেশ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করেছে তারাই সফলতা পেয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অপরদিকে বাংলাদেশে বেশিরভাগ মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেও আইইডিসিআর (জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান)- এর হটলাইনে ফোন করে সেবা পাচ্ছে না। বাংলাদেশে গত দুই মাসে আট লাখ মানুষ করোনা হট লাইনে ফোন করেন। ২৮ মার্চ পর্যন্ত মাত্র এক হাজার ১০০ জনকে টেস্ট করা হয়েছে। তার মধ্যে ৪৮টি কেইস করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বারবার তাগিদ সত্ত্বেও বাংলাদেশ সর্বনিম্ন টেস্টিং দেশের অন্যতম।’
বিএনপি মনে করে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের গার্মেন্টসসহ রপ্তানি শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা খাতে ৫ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনার ঘোষণা করেছেন, তা যথেষ্ট নয়। বিএনপির অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে তাঁর ভাষণে বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাঁচিয়ে রাখার কোনো পরিকল্পনা বা এ জন্য বরাদ্দের কথা বলেননি। বিএনপির মহাসচিব বলেন, তাদের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য জিডিপির ৩ শতাংশ অর্থের সমন্বয়ে ৮৭ হাজার কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল ঘোষণা করতে হবে। এর মধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে স্বল্প-মেয়াদি, অনতিবিলম্বে। কিছু মধ্যমেয়াদি এবং কিছু দীর্ঘমেয়াদি। স্বল্প-মেয়াদি খাতে ৬১ হাজার কোটি টাকা, আর মধ্য-মেয়াদি খাতে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে ৮ হাজার কোটি টাকা অদৃশ্য খাত এবং অন্যান্য খাতে ব্যয় করা যাবে। যাতে শাটডাউন প্রত্যাহার হলে সব খাতের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সাধারণ ছুটি-পূর্ব স্তরে ফিরে আসতে সক্ষম হয়। মির্জা ফখরুল ইসলাম জানান, অর্থনৈতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিএনপির এই প্রস্তাবনা জরুরিভাবে বাস্তবায়নের জন্য তারা সরকারের কাছে পাঠাবেন
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।