‘সরকার আমাগো ত্রাণ ঠিকই দেয়। কিন্তু আমরা কিছুই পাই না। আমাগো খাওন দেন, আমরা ঘর থেকে বাইর হমু না। সরকার যা আদেশ করবো তাই আমরা মানমু।’ কথাগুলো বলছিলেন সরকারি ত্রাণ না পাওয়া নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার কাশীপুর ইউনিয়নের বিক্ষোভরত এলাকাবাসী।
বুধবার (৮ এপ্রিল) সকালে খাদ্য সহায়তার দাবিতে বাংলাবাজার এলাকায় বিক্ষোভ করেন তারা। এ সময় এই বিক্ষোভে তিন চার শতাধিক নারী-পুরুষ জড়ো হন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, করোনার কারণে সরকার দুই দফায় ছুটি ঘোষণা করায় কাজ বন্ধ হয়ে গেছে দিনমজুর মানুষদের। ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। পুরো শহর লকডাউন হয়ে আছে। এই সংকটকালীন সময়ে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বাররা তাদের কোনো খোঁজ নিচ্ছেন না। সরকারি কোন খাদ্য সহযোগিতাও পাননি তারা। ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে অনিয়ম রোধে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকাবাসী।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফজলুল হক বলেন, এই এলাকায় কোনো ত্রাণ দেওয়া হয়নি। ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নিছে দশদিন আগে। এখন পর্যন্ত কিচ্ছুই পাইনি।
৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রিকশাচালক শাহীন বলেন, কেউ একটা দানা চাউলও পায় নাই। আমরা ভাত চাই, কাপড় চাই। সরকার আমাগো লাইগা অনেক কিছু দেয়। কিন্তু আমরা পাই না।
এদিকে ত্রাণ বরাদ্দ কম এসেছে জানিয়ে কাশীপুর ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মো. বাহাউদ্দিন বলেন, সরকার ত্রাণ না দিলে তো আর আমরা কিছু করতে পারি না। ১২ হাজার পরিবারের লিস্ট করছি, ত্রাণ আসছে ১০১০ পরিবারের। মেম্বাররা কেউ কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে দিতাছে।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম সাইফউল্লাহ বাদল বলেন, অনেক পরিবার না খেয়ে আছে আমরা নিজেরাও জানি। তবে সরকারি যে বরাদ্দ এসেছে তুলনামূলকভাবে খুবই কম। জেলা প্রশাসন থেকে যে পরিমাণ দেয়া হয়েছে আমরা ওয়ার্ড ভিত্তিক সরবরাহ করছি। এক সাথে সব এলাকায় দেয়াতো সম্ভব না। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কারণে স্বেচ্ছাসেবক বা কর্মী অনেক কম। তারা হিমশিম খাচ্ছে।
চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ বাদল দাবি করেন, সম্প্রতি এই এলাকায় ১ হাজার পরিবারকে জেলা প্রশাসন থেকে পাঠানো খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। বেসরকারি ও ব্যক্তিগত ভাবেও দেয়া হচ্ছে। লকডাউন করা ৩শ’ পরিবারের মধ্যে ১শ’ পরিবারকেও দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিদেরও দেয়া হবে।
তিনি দাবি করেন, এলাকার এক ছাত্রদল কর্মী ও তার বাবা বিএনপি কর্মী মিলে এলাকায় ছড়িয়েছে আজকে ত্রাণ দেয়া হবে। এ খবর পেয়ে মানুষ দলে দলে ছুটে এসেছে। তবে আজকে ত্রাণ দেয়ার কোন ঘোষণা আমরা আগে থেকে দেইনি। দেশের এই দুর্যোগের সময়েও বিএনপির লোকজন করোনাভাইরাস ও ত্রাণ দেয়াকে পুঁজি করে রাজনীতি করছে বলে তিনি দাবি করেন।
চেয়ারম্যান বলেন, এখন রাজনীতি করার সময় না। আমারো করোনা হতে পারে। আমি চেষ্টা করছি নিঃস্বার্থ ভাবে সরকারের দেয়া ত্রাণ দুঃস্থ মানুষের হাতে তুলে দিতে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সব জায়গায় মানুষ ত্রাণ পাবে। তালিকা অনুযায়ী সকলের ত্রাণ পর্যায়ক্রমে পৌঁছে দেওয়া হবে।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।