Logo
HEL [tta_listen_btn]

আড়াইহাজারে পোল্ট্রি খামারে মড়ক  ২০ লাখ টাকার ক্ষতি

আড়াইহাজারে পোল্ট্রি খামারে মড়ক  ২০ লাখ টাকার ক্ষতি

এম এ হাকিম ভূঁইয়া, বিশেষ প্রতিনিধি:
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় ২টি পৌরসভা, ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। বিভিন্ন এলাকায় ১৫ বছরের ব্যবধানে বিপুল সংখ্যক পোল্ট্রি খামার গড়ে উঠেছে। এসব খামারের মধ্যে কক, ব্রয়লা ও লেয়ার পালন করাা হচ্ছে। অনেকের সংসার চলছে এর আয় থেকে। কিন্তু হঠ্যাৎ দুই মাসের ব্যবধানে খামারগুলোতে মড়ক দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের মধ্যে এরই মধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক খামারের মুরগি রোগ আক্রান্ত হয়ে মরে গেছে বলে জানা গেছে। মোটা অংকের অর্থ ব্যয় করেও ওষুধ ব্যবহার করেও মড়ক ঠেকাতে পারছে না খামারিরা। এতে খামারিদের প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনেকই এখন সর্বস্বান্ত। ঋণ নিয়ে খামার করে তারা এখন দিশেহারা। খামারিদের অনেকেই উপজেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উদাসহীনতাকে এর জন্য দায়ি করছেন। সরেজমিন গেলে স্থানীয় ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের ঘাড়পাড়া এলাকার পোল্ট্রি ফিড ব্যবসায়ী মিজান জানান, তার অধীনে স্থানীয় ব্রাহ্মন্দী এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় শতাধিক পোল্ট্রি খামার রয়েছে। এসব খামারে তিনি ফিড ও ওষুধ সরবরাহ করে থাকেন। কক, ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগি পালন করা হচ্ছে। তবে রোগ আক্রান্ত হয়ে এরই মধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক খামারে বিভিন্ন বয়সের মুরগি মরে গেছে। এতে খামারিদের প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তার ব্যবসাও এখন ধস নেমেছে। লোকসান হওয়ায় তিনি খামারিদের কাছ পাওনা মোটা অংকের অর্থ আদায় করতে পারছে না। তার অভিযোগ প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তারা রোগ শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে তাদের কিছুটা উদাসহীনতাও ছিল। তবে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের দাবি খামারিদের বিভিন্ন পরামর্শ ও মুরগির চিকিৎসায় তাদের কোনো গাফিলতি বা উদাসহীনতা ছিল না। ঘাড়পাড়া এলাকার মোবারক নামে এক খামারি জানান, তিনি বাড়িতে একটি সেড তৈরি করে তাতে ১ হাজার পাঁচশত সোনালী কক মুরগি পালন করছিলেন। তবে হঠ্যাৎ ২৫ দিন বসয় থেকে খামারে মুরগির মোড়ক শুরু হয়। প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডা. আবু কাউসারের ব্যবস্থা পত্রের মাধ্যমে মুরগির চিকিৎসা করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে খামারের অধিকাংশ মুরগি মারা গেছে। এতে তার প্রায় ২ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। একই এলাকার খামারি তাজুল ইসলাম বলেন, তিনি ১৯৯৯ সাল থেকে খামার করে আসছেন। এক মাস আগে তার খামারে হঠ্যাৎ ৩২ দিন বয়সের ৫০০ গ্রাম ওজনের ১ হাজার পাঁচশত কক মুরগির মধ্যে অধিকাংশ মুরগিই মারা গেছে। তিনি আরো বলেন, প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তারা মুরগির রোগ শনাক্ত করতে পারেনি। তাদের প্রদানকৃত ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী মোটা অংকের অর্থ ব্যয় করে ঔষুধ ব্যবহার করেও কোনো ফল হয়নি। তিনি আরো বলেন, স্থানীয় সাজেদা ফাউন্ডেশন থেকে ঋণ নিয়ে তিনি খামার করে দেনার চাপে এখন দিশেহারা। ৮ নং ওয়ার্ডের ব্রাহ্মন্দী পূর্বপাড়া এলাকার খামারি রুবেল বলেন, আমি ২০০১ সাল থেকে খামার করে আসছি। বর্তমানে খামারে ২,৮৩০ পিস লেয়ার মুরগি পালন করছিলাম। হঠ্যাৎ রোগ আক্রান্ত হয়ে ১৬ দিন বয়স থেকে মুরগির মোড়ক শুরু হয়। এখন খামারে মাত্র ১৫০পিস মুরগি আছে। তিনি আরো বলেন, চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করেও রোগ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এতে আমার প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। আমি এখন সর্বস্বান্ত। একই অবস্থা এই এলাকার আরো অনেক খামারির। বেকারত্ব ঘুচাতে তারা খামার করে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখন দিশেহারা। ৩ মাসের ব্যবধানে খামারে মুরগি রোগ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। আড়াইহাজার উপজেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডা. আবু কাউসার বলেন, ‘খামারিদের পরামর্শ বা মুরগির রোগ বালাই দমনের ক্ষেত্রে আমি বা আমাদের কর্মকর্তারই কোনো ব্যর্থতা, গাফিলতি ও উদাসহীনতা নেই। আমাদের কাছে খামারিরা আসলে তাদের সঠিক পরামর্শই আমরা দিয়ে থাকি।’ এদিকে জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বাসনা আক্তার বলেন, ‘আমাদের কিছুটা হলেও সীমাবদ্ধতা আছে। তার পরও আমাদের পক্ষ থেকে খামারিদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Theme Created By Raytahost.Com