Logo
HEL [tta_listen_btn]

নারায়ণগঞ্জে  করোনা ভাইরাসের  হটস্পট  খুলেছে গার্মেন্ট কারখানা

নারায়ণগঞ্জে  করোনা ভাইরাসের  হটস্পট  খুলেছে গার্মেন্ট কারখানা

সোলায়মান হাসান:

করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ ও লকডাউনের মধ্যে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত নারায়ণগঞ্জ জেলায় বেশ কয়েকটি গার্মেন্ট কারখানা খুলেছে রোববার ২৬ এপ্রিল। এদিন সকাল থেকে কয়েকটি কারখানায় সীমিত পরিসরে কাজ শুরু হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বিসিকে ফকির নিটওয়্যারস লিমিটেড ফ্যাক্টরি খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালিকপক্ষ। এছাড়া মডেল গার্মেন্টও খুলছে।
ফকির নিটওয়্যার বিজ্ঞপ্তিতে স্বল্প পরিসরে কারখানা খোলা রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। এর পাশাপাশি শুধুমাত্র ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ভেতরে অবস্থানকৃত শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে যোগদানের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
২৫ এপ্রিল শনিবার ফকির নিটওয়্যারস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির আক্তারুজ্জামান স্বাক্ষরিত প্রতিষ্ঠানের প্যাডে এই বিজ্ঞপ্তি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ফকির নিটওয়্যারস লিমিটেড এর সকল শ্রমিকদের জানানো যাচ্ছে যে, ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী জরুরী রপ্তানী আদেশের স্বার্থে আগামী ২৬ এপ্রিল রোববার থেকে বিজিএমইএ এর নিয়ম নীতি অনুযায়ী এবং যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্তৃপক্ষ কারখানা স্বল্প পরিসরে চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য যে, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও এর আশেপাশের এলাকায় বর্তমানে অবস্থানকৃত শ্রমিকদের সমন্বয়ে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আরো উল্লেখ্য যে, পরবর্তী বিজিএমইএ ও সরকারী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এর বাহিরে অবস্থানকৃত শ্রমিকদের কারখানায় না আসার জন্য নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এছাড়া কারখানায় নিয়োজিত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের সার্বক্ষণিক মনিটরিং করার বিষয়ে ইতোমধ্যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
আরো উল্লেখ্য যে, পরবর্তী বিজিএমইএ ও সরকারী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এর বাহিরে অবস্থানকৃত শ্রমিকদের কারখানায় না আসার জন্য নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এছাড়া কারখানায় নিয়োজিত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের সার্বক্ষণিক মনিটরিং করার বিষয়ে ইতোমধ্যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাট্রিবিউনের সংবাদে বলা হয়, এ অবস্থায় পোশাক কারখানাগুলো সীমিত আকারে খুলে দেওয়ার বিষয়ে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবের কারণে নিটওয়্যার পণ্যের ক্রেতা দেশগুলো প্রায় চার বিলিয়ন অর্ডার ক্যান্সেল করে দেয়। কিন্তু এখনো বাংলাদেশের হাতে প্রায় ছয় বিলিয়ন অর্ডার বুকিং দেওয়া আছে। কিন্তু ক্রেতা দেশগুলোর চাহিদা অনুযায়ী এই অর্ডার যদি সরবরাহ করা না যায় এবং যেসব দেশে গার্মেন্টস কারখানা খোলা রয়েছে (চীন ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া) ক্রেতা দেশগুলো যদি তাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে, তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশের শ্রমিকরা। এই অবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে এবং শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করেই সরকারের নির্দেশনা মেনে এবং ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সীমিত আকারে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের সব জায়গায় গার্মেন্টস কারখানার নিটিং, ডাইং ও স্যাম্পল সেকশন খোলা হচ্ছে। তবে এখনই খোলা হচ্ছে না গার্মেন্টস কারখানার সুইং সেকশন। আর সুইং সেকশনে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক কাজ করে। নিটিং, ডাইং ও স্যাম্পল সেকশনে স্বল্প সংখ্যক শ্রমিক কাজ করে। তাই এই সেকশনগুলো খোলা হচ্ছে। তবে যেসব কারখানার জরুরি প্রয়োজন রয়েছে, সে সব কারখানার সুইং সেকশন শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করে খোলা যাবে।
বিকেএমইএর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করেই ও অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা নিয়ে এবং ক্রেতা দেশগুলোর চাহিদা অনুযায়ী সীমিত আকারে নারায়ণগঞ্জসহ বিকেএমইএর অন্তর্ভুক্ত কারখানাগুলো খোলা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, যেসব বায়াররা বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে অর্ডার দিয়ে থাকে, তারা একটি সার্কেলের মাধ্যমে অর্ডার দেয়। অর্থাৎ একটি মানসম্পন্ন কারখানায় অর্ডার করলে, সেই অর্ডারের পণ্য ৯০ দিনের মধ্যে বায়ারকে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ওই বায়ার পণ্য সরবরাহ করার আগেই ওই কারখানাকে নতুন অর্ডার সরবরাহ করে। অর্থাৎ এমন সার্কেলের মাধ্যমে গার্মেন্টস কারখানাগুলো চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। সেই আলোকে বর্তমানে মানসম্পন্ন গার্মেন্টসহ যারা দুর্বল প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের হাতেও কমবেশি অর্ডার রয়েছে।
তিনি বলেন শ্রমিকের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য বিকেএমইএ ও বিজিএমইএ যৌথভাবে দেশের পাঁচটি এলাকায় যেখানে শ্রমিক অধিষ্ঠিত বলে চিহ্নিত নারায়ণগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, আশুলিয়া এবং চট্টগ্রামে শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য পাঁচটি করোনা পরীক্ষার পিসিআর ল্যাব স্থাপন করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের আধুনিক কমপ্লায়েন্স গার্মেন্টস মডেল ডি ক্যাপিটালের মালিক মাসুদুজ্জামান জানান, রবিবার থেকে তার কারখানার নিটিং ও ডাইং সেকশন সীমিত আকারে খুলে দেওয়া হবে। পরবর্তী দিক নির্দেশনা পেলে গার্মেন্টস কারখানার সুইং সেকশনও খোলা হবে।
তিনি আরও বলেন, তার কারখানায় সরকারি নির্দেশনা মেনে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে শ্রমিকেরা যাতে কাজ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কারণ শ্রমিক আছে বলেই আমরা কারখানার মালিক। শ্রমিকের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা প্রতিটি কারখানার মালিকের উচিত।
তিনি জানান, সামাজিক চাপের কারণে ক্রেতারা যেসব অর্ডার বাতিল করেছিল, সেই পণ্যগুলো নেওয়ার জন্য বর্ধিত সময়ের আবেদন করেছে। তাদের সেই বর্ধিত সময় মেনে নিয়েই পণ্য সরবরাহ করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ যেসব বায়ার অর্ডার বাতিল করেছিল তারা বাংলাদেশকে ৯০ দিনের পরিবর্তে ১৮০ দিনের সময় চেয়েছে টাকা পরিশোধের জন্য। বাংলাদেশ তাতেই রাজি হয়েছে। কারণ দুর্যোগের এই মুহূর্তে এত বড় অর্ডারগুলো যদি একের পর এক বাতিল হয়ে যায় তবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিকেএমইএ`র সাবেক সভাপতি ও প্লামি ফ্যাশনের মালিক ফজলুল হক জানান, কারখানার নিটিং ও ডাইং সেকশন রবিবার থেকে খোলা হচ্ছে। পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী সুইং সেকশন চালু করা হবে।
তিনি আরও বলেন, গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে অর্ডার রয়েছে। এরই মধ্যে যেসব অর্ডার ক্যানসেল হয়েছে এবং যেসব অর্ডার বুকিং রয়েছে সেগুলোর সরবরাহ করার জন্যই কারখানা চালু করা হচ্ছে। অন্তত কিছুটা ক্ষতি যাতে পুষিয়ে নেওয়া যায়


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Theme Created By Raytahost.Com