বগুড়া থেকে এনামুল হক রাঙ্গা : বগুড়ার শাজাহানপুরে এক নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে তারই সাবেক স্বামী। পরিচয় গোপন করে মোবাইল ফোনে সম্পর্ক গড়ে তোলার পর ওই নারীকে বাড়ি থেকে ডেকে আনেন, পরে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় তাকে। ঘটনার সাথে জড়িত নিহতের সাবেক স্বামী সোহেল সাকিদারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি গাবতলী উপজেলার মালিয়ানডাঙ্গা গ্রামের জাহার আলীর ছেলে। বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) গ্রেফতারকৃত সোহেল সাকিদার ধর্ষণ এবং হত্যার বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন। জানা যায় , গত ২৮ এপ্রিল শাজাহানপুর উপজেলার পশ্চিম আশেকপুর গ্রামের ধানক্ষেত থেকে সালমা (২৫) নামের এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কিছুদিন আগে তার স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হওয়ার পর বাবার বাড়িতে চলে আসেন। ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরে সড়ক বিভাগের জায়গায় তৈরি করা ঘরে সালমা তার দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। পাশ্ববর্তী একটা ব্যাগ ফ্যাক্টরিতে কাজ করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। ২৮ এপ্রিল পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করতে গিয়ে মরদেহের গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস দেয়া এবং তার নিজের পায়জামা দিয়ে দুইহাত বাঁধা দেখতে পান। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করেন- ধর্ষণের পর ওড়না পেঁচিয়ে খুন করা হয়েছে। এরপর পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞার নির্দেশনায় সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতান চক্রবর্তী তত্ত্বাবধানে তদন্ত শুরু হয়। নিহতের পরিবারের সাথে কথা বলে পুলিশ জানতে পারে সালমার সাবেক স্বামী সোহেল সাকিদার (৩০) তাকে উত্যক্ত করত এবং মেরে ফেলার হুমকি দিত। সেই সূত্র ধরে পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে জানতে পারেন সাম্প্রতিক সময়ে সালমা শহরের কলোনি এলাকার এক ব্যক্তির সাথে অনেক সময় ধরে কথা বলতেন। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে সেই ব্যক্তিকে শনাক্ত করে আটক করার পর তিনি পুলিশকে জানান, তার মোবাইলটি কয়েকদিন আগে সিমসহ হারিয়েছে। তখন তদন্তকারী দল উচ্চতর তদন্ত কৌশল ব্যবহার করে হারিয়ে যাওয়া সেই মোবাইল ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করে। পরে গ্রেফতার করলে দেখা যায় তিনি সালমার সাবেক স্বামী সোহেল । সোহেলকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে নিজেকে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায় ঘটনার সাথে তিনজন জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আরো দুইজনের নাম প্রকাশ করেন। প্রযুক্তিগত তদন্তে অন্য দুইজন জড়িত থাকার প্রমাণ পায়নি পুলিশ। সোহেল জানান, কলোনির সেই ব্যক্তির চুরি করা ফোন দিয়ে নিজের পরিচয় গোপন করে সালমার সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরপর ২৭ এপ্রিল রাত দশটার দিকে সালমাকে বাড়ির বাইরে ডেকে আনেন। সালমা তাকে চিনতে পেরে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করলে সোহেল গামছা দিয়ে তার মুখ বেঁধে ফেলে এবং পরবর্তীতে হাত বেঁধে ধর্ষণ করে এবং সালমার ওড়না গলায় পেঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে নিজের বাড়িতে চলে যান। বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বার্তা২৪.কমকে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্রেফতারকৃত সোহেল বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসমাউল হুসনা এর আদালতে ১৬৪ ধারায় নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দী প্রদান করেছেন।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।