জিহাদুল ইসলাম, কালিয়া, নড়াইল সংবাদদাতা :
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দৃষ্টি আকর্ষন করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কল্যাণে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক, শ্যামল দাশ টিটুর কিছু কথা- বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক শ্যামল দাশ টিটু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দৃষ্ট আকর্ষন করে বলেন- আপনাকে অনেক ধন্যবাদ করোনাকালীন সময়ে উচ্চাভিলাষী বাজেট প্রদানের জন্য। ঠিক এই সময়ে এমন অর্থবহ বাজেটের খুব দরকার ছিলো। কারন যে কোন সংকটময় মুহুর্তে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এবং বিভিন্ন স্তরের দুর্দশাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে সহায়তা প্রদান করতে উচ্চাভিলাষী বাজেটের কোন বিকল্প নেই। করোনা মোকাবেলা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য বিভিন্ন খাতে প্রনোদনা, সহজ শর্তে ঋন প্রদানসহ বেশ কিছু খাতে সহায়তা দেবার জন্য বেশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবারের বাজেটে। ফলে বেশ কয়েকটি খাতের ব্যবসায়ীরা স্বাচ্ছন্দবোধ করছে এবং ব্যবসা বানিজ্য সচল রাখতে সক্ষম হচ্ছে অনেকে। বাংলাদেশে আমরা যদি ব্যবসায়ীদের শ্রেনী বিন্যাস করি তাহলে কি দাঁড়াবে ? শতকরা হিসেবে সংখ্যাই বা কি হবে? সরকার ও ব্যাংক থেকে কোন শ্রেণী কেমন সুবিধা পেয়ে থাকে ? এই ক্ষেত্রে এগুলো বিশ্লেষণ খুবই জরুরী কারন কোন শ্রেণীর সংখ্যা কত এবং কারা কতোটা সুবিধা ভোগ করে, বা বঞ্চিত হয়, তা জানাটা আরও জরুরী। আর এই করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদানের জন্য যে উচ্চাভিলাষী বাজেট প্রদান করা হয়েছে , সেখানে মুলতঃ কারা কতোটা সুবিধা ভোগ করবে বা বঞ্চিত হবে, তাও পরিস্কার করা দরকার। সেগুলো সম্পর্কে মোটামুটি একটা পরিস্কার ধারণা পেতে নিম্নে ব্যবসার শ্রেণী অনুযায়ী কিছু তথ্য তুলে ধরা হলোঃ ১) বড় ব্যবসায়ীঃ বাংলাদেশে কাদেরকে বড় ব্যবসায়ী বলা হয়? সাধারণত বড় বড় গ্রুপ কোম্পানী গুলো অথবা অর্থের মাপকাঠিতে যাদের ব্যাংক ঋণ অনেক বেশী, তাদেরকে বড় ব্যবসায়ী ধরা হয়। এদের সংখ্যা বড়জোড় ৫% এর বেশী হবে না । এই শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা সবদিক দিয়েই বড় বড় সুবিধা ভোগ করে থাকে। আর বর্তমানে দেশও পরিচালনা করছে বলা যায় । ফলে ঋণের টাকা আদায় করতে ব্যাংক এই শ্রেণীকে উল্টো ভয় পায়। প্রয়োজনে ব্যাংক সুদ মওকুফ করতে হয়। এই ৫% ব্যবসায়ী সরকারী সুবিধা ও ব্যাংকের ঋণ ৭৫ % এর অধিক ভোগ করে থাকে। আবার এটাও সত্য যে, এবার বাজেটে যতোসব প্রনোদনা ও সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, তার অধিকাংশ ভোগ করবে কিন্তু এই শ্রেণীই। ২) মাঝারী ব্যবসায়ীঃ সাধারণত বড় বড় সিংগেল কোম্পানী বা ব্যবসা বানিজ্য প্রতিষ্ঠানকে মাঝারি ব্যবসায়ী ধরা হয়ে থাকে। এদের সংখ্যা বড়জোড় ২০ % হবে। ব্যাংক ঋণ এবং সরকারী সহায়তা পেতে এদের ঘাম ছুটে যায়। নিজেদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতার উপর নির্ভর করেই ব্যাংক ঋণ ও সরকারী সহায়তা আদায় করে নিতে হয়। ব্যাংক ঋণের কারণে সবসময় ব্যাংকের নজরদারীতে থাকতে হয়। ব্যবসায়ে কোন কারনে লস করলে ব্যাংকের দায় কাধে নিয়ে রাস্তায় বসতে হয়। নতুবা জেল খাটতে হয়। আবার বাজেট থেকে সরকারী সহায়তা ও ঋণ পেতেও ভোগান্তি হয়। কেউ কেউ হয়তো সামান্য সুবিধা ভোগ করতে পারবে। ৩) ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীঃ বড় ও মাঝারি ব্যবসায়ী বাদে সকলেই ক্ষুদ্র বা ছোটখাটো ব্যবসায়ীর আওতায় পরে । এই শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল অব্দি বিস্তৃত। শহরের ফুটপাতের ব্যবসা থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জের মুদি দোকান ও হাট বাজারের সকল প্রকার খুচরা ব্যবসায়ী এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত । এক কথায় এই শ্রেণীকে সাধারণ ব্যবসায়ী বলা হয়। এই শ্রেণীর সংখ্যা প্রায় ৭৫% হবে বলে অনেকের ধারনা। এই শ্রেণী সাধারণত ব্যাংক ঋণ পায়না। ফলে বিভিন্ন এনজিও এবং কো-অপারেটিভ নামক চিটিং কোম্পানি থেকে ১০ হাজার থেকে শুরু করে ২/৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে থাকে। এখানে সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো যে, এই ক্ষুদ্র অর্থাৎ গরীব ব্যবসায়ীদেরকে ব্যাংকের সুদের ৩ গুন হারে সুদ গুনতে হয়। দৈনিক বা সাপ্তাহিক কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। সময়মতো কিস্তি পরিশোধ করতে না পারলে ব্যাবসার মালামাল বা গরু ছাগল নিয়ে যায়। আরও কষ্টের ব্যাপার হলো যে, এই শ্রেণী সাধারণত সরকারী কোন আর্থিক সহায়তা পায় না। পেলেও তা নামমাত্র। দেখা যাবে এবারের এই উচ্চাভিলাষী বাজেট থেকেও ব্যাপক এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী গোষ্ঠী সুবিধা বঞ্চিত হবে বলেই ধরে নিতে হবে। উপরোক্ত তথ্যানুযায়ী এক কথায় বলা যায় যে, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে শতকরা প্রায় ৭৫ জন সকল ক্ষেত্রেই সুবিধা বঞ্চিত এবং উচ্চ হারে সুদ গুনার কারনে অনেককে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখনো দেশের অধিকাংশ জনগন আপনার উপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে আপনার কাছে জনগণের চাওয়া পাওয়া বা আশা আকাংক্ষাও একটু বেশী। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দরীদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত বা অবহেলিত জনগোষ্ঠী আপনাকে গরীবের বান্ধব মনে করে। তাই এবারের এই উচ্চাভিলাষী বাজেট থেকে একটা অংকের টাকা দিয়ে যদি এনজিও এবং কো-অপারেটিভ থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের গৃহীত ঋণ পরিশোধ সাপেক্ষে ব্যবসার চলতি মুলধন হিসেবে সরকারী ব্যাংকে চলতি ঋণে রূপান্তর করা যায় , তাহলে মনে হয় আপনার দ্বারা সত্যিকার অর্থে দেশের ব্যাপক দরীদ্র জনগোষ্ঠী উপকৃত হবে। করোনাকালের এই উচ্চাভিলাষী বাজেট থেকে কিছু সুবিধা ভোগ করার হক রয়েছে দেশের ক্ষুদ্র এই ব্যাপক জনগোষ্ঠীর। অতএব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন, দেশের প্রায় ৭৫% ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কল্যাণে এনজিও এবং কো-অপারেটিভ থেকে গৃহীত ঋন পরিশোধ সাপেক্ষে তাদের ঋণকে সরকারী ব্যাংকে চলতি ঋণ হিসেবে রূপান্তর করতে উক্ত উচ্চাভিলাষী বাজেট থেকে একটা অংক বরাদ্দ দেয়া হোক। তবেই উচ্চাভিলাষী এই বাজেট থেকে সকলেই কিছু না কিছু উপকৃত হবে। ধন্যবাদ।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।