বন্দর সংবাদদাতা:
ছেলের গ্রেপ্তারের খবরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মা রাশিদা বেগম। খবর শোনার পর থেকে কেঁদেই চলছেন তিনি। মাকে সান্তনা দিয়ে মাথায় পানি ঢালছেন একমাত্র মেয়ে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কদমরসূল অঞ্চলের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের শাহী মসজিদ এলাকায় রায়হান কবিরের বাড়িতে দেখা গেছে এমন চিত্র। গত শুক্রবার প্রবাসীদের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। বাবা শাহ্ আলম ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীর এবিএফ নিটওয়্যার নামে একটি রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। মালয়েশিয়া থেকে রায়হানের পাঠানো টাকায় ভালোই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় করোনাভাইরাস মহামারীতে মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের সঙ্গে সরকারের আচরণ নিয়ে সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর বিপত্তিতে পড়েন রায়হান কবির। ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে রায়হান। পরে মালয়েশিয়া গিয়ে পার্টটাইম চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা করছিল সে। সেখানে বিএ পাস করার পর গত ঈদুল ফিতরের আগে একটি কোম্পানিতে স্থায়ী চাকরি হয় তার। গ্রেপ্তারের দুই দিন আগেও ছেলের সাথে কথা হয়েছিল বলে জানালেন বাবা মো: শাহ্ আলম। সাক্ষাৎকারের বিষয়টি জানতো পরিবার। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন তারা। এখন ছেলের গ্রেপ্তারের খবর শুনে দুশ্চিন্তায় মা রাশিদা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। রায়হানের বাবা বলেন, গত কয়েকদিন ছেলের সাথে কথা বলতে পারি নাই। গত পরশু ম্যাসেজে কথা হইসে। এখন ছেলের ছেলের কথা শুনে তার মাও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। শ্বাসের রোগী সে। সকাল থেকেই মায়ের মাথায় পানি ঢালছে একমাত্র মেয়ে। শাহ্ আলম মুঠোফোনে প্রেস নারায়ণগঞ্জকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদ করতো। মানুষের ভালো চেয়েছে সবসময়। নিজের ছেলে বলে বলছি না, এলাকায় আইসা খবর নিয়ে দেখতে পারেন।’ ‘মানুষের জন্য কথা বলতে গিয়া বিপদে পইড়া গেল আমার ছেলে। অ্যাম্বাসির সাথে যোগাযোগ কইরা নাকি ছেলেরে আনা যাইবো। আমরা তো আর কিছু করতে পারতাছি না। আপনারা কিছু লেইখা পারলে কিছু করেন।’ কান্নাজড়িত কন্ঠে বলছিলেন শাহ্ আলম। স্থানীয়দের মাঝে প্রতিবাদী তরুণ হিসেবে পরিচিতি ছিল রায়হান কবিরের। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তার কণ্ঠ ছিল সর্বদা সোচ্চার। দেশে থাকাবস্থায় ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত রায়হান নিজের বই ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করতেন শিক্ষার্থীদের। নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়েত আলম সানি জানান, জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিল সে। পরে মালয়েশিয়া যাবার পর সেখানেও ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। রায়হান মালয়েশিয়া ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তাদের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করার পর মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের একটি অংশের প্রস্তাবিত সাংগঠনিক সম্পাদক তিনি। সানি বলেন, জনসেবামূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিল রায়হান। এলাকার মানুষের তার পরিচয় ছিল প্রতিবাদী কণ্ঠ হিসেবে। সাধারণ ছাত্রদের দাবির পক্ষে সবসময় কথা বলেছে সে। এমনকি মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে পুলিশেও দিয়েছে সে। যতদিন সে দেশে ছিল ততদিন কোন ধরনের খারাপ রিপোর্ট তার নামে ছিল না এলাকায়
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।