Logo
HEL [tta_listen_btn]

বন্দরে গণধর্ষণের পর হত্যার শিকার কিশোরীকে দেড় মাস পর জীবিত উদ্ধার নিয়ে তোলপাড়

বন্দরে গণধর্ষণের পর হত্যার শিকার কিশোরীকে দেড় মাস পর জীবিত উদ্ধার নিয়ে তোলপাড়

বন্দর সংবাদদাতা:
নারায়ণগঞ্জের বন্দরে গণধর্ষণের পর হত্যার শিকার এক কিশোরীকে দেড় মাস পর জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। উদ্ধার হওয়া কিশোরীর নাম জিসামণি। সে শহরের দেওভোগ এলাকার জাহাঙ্গীর হোসেনের মেয়ে ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেনির ছাত্রী বলে জানা গেছে। নিখোঁজ হওয়ার এক মাস পর মামলা হলে পুলিশ বন্দর এলাকা থেকে একজন মাঝিসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে বন্দরের বুরুমদি এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে আবদুল্লাহ(২২) বুরুমদি পশ্চিমপাড়া এলাকার সামসুদ্দিনের ছেলে অটোরিকশা চালক রকিব (১৯) ও বন্দরের ইস্পাহানী এলাকার নৌকার মাঝি খলিল(৩৬)। গ্রেপ্তারকৃতরা গত ৯ আগষ্ট নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মিল্টন হোসেন ও জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আহমেদ হুমায়ূন কবিরের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে পুলিশ জানায়। কিশোরীকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে গ্রেপ্তারকৃত ৩জন বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেল হাজতে রয়েছেন। এ দিকে বিনা অপরাধে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি চেয়েছেন তাদের পরিবার। রকিবের বড় ভাই সজিব জানান, রিমান্ড এবং ক্রসফায়ারে ভয় দেখিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাদের কাছ থেকে দুই বারে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে নারায়ণগঞ্জ পুুলিশ সুপারের নির্দেশে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির ৩ সদস্য হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) এএসপি (ট্রাফিক)ও ডিআইও ওয়ান । সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বিষয়টি সুপ্রীম কোর্টের নজরে এনেছেন। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান, রোববার বন্দরের কুশিয়ারা এলাকার একটি মোবাইল ফোনের দোকান থেকে জিসার মার কাছে কল আসে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে এক লোক বলে, আপনার মেয়ের সঙ্গে কথা বলুন, জিসার মা আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করেন। আমার মেয়েতো খুন হয়েছে। ওই লোক তখন মেয়েকে ফোন ধরিয়ে দেন। জিসা তখন মাকে বলে , আমি বেঁচে আছি। তোমরা আমাকে ৪ হাজার টাকা পাঠাও। আমি চলে আসব। মেয়ের সঙ্গে কথা শেষ করে জিসার মা ফোনে যোগাযোগ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাথে। পুলিশের পরামর্শে বিকাশের মাধ্যমে ২ হাজার টাকা পাঠান ওই দোকানে। এরপর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ওই দোকানের যায় পুলিশ। জিসাকে টাকা নেয়ার জন্য আসতে বলেন। জিসা দোকানে এলে তাকে উদ্ধার করে থানার আনা হয়। জিসা পুলিশকে জানায়, ইকবাল নামে এক ছেলেকে দেড় মাস আগে বিয়ে করে বন্দরের কুশিয়ারা এলাকায় বসবাস করছে তারা। পরে ফোর্স পাঠিয়ে ইকবালকে আটক করে থানায় আনা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিসার মা রেখা আক্তার জানান, বন্দরের কুশিয়ারা এলাকা ইকবাল নামে একটি ছেলে সাথে গত দেড় মাস ছিলো জিসা। জিসাকে বিয়ে করে তারা সেখানে ছিলো বলে জানান তিনি। জিসা মনি জানান, ইকবালকে বিয়ে করে তাদের বাড়িতে ছিল সে। তাকে কেউ ধর্ষণ করেনি। সে সুস্থ আছে । বাবা মায়ের কথা মনে পড়ায় ফিরে এসেছে। গত ৪ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিল জিসামণি। ১৭ জুলাই এ ব্যাপারে সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়। অনেক খোঁজাখুজির পরও মেয়েকে না পেয়ে গত ৬ আগষ্ট সদর মডেল থানায় অপহরণ মামলা করেন জিসার বাবা। তদন্তের দায়িত্ব পান সদর মডেল থানায় পরিদর্শক শামীম আল মামুন। কারাগারে থাকা আব্দুল্লাহর মা শিউলী আক্তার বলেন, আব্দুল্লাহ ওয়ার্কশপে কাজ করতো। আমার ছেলের একটি স্টেটমেন্ট ছিলো যে, আমি ওর সাথে ঘুরাফেরা করছি। আর কিছু করি নাই। বিনা কারণে আমার ছেলেরে এত কিছু সহ্য করা লাগছে। যদি আমার ছেলে কিছু করতো তাহলে মেয়েটা জীবিত ফিরে আসলো কেমনে? আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামীমকে দুই দফায় দশ হাজার টাকা দিয়েছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, প্রথমে যখন ধইরা আনে তখন টর্চার যাতে না করে সেজন্য ৭ হাজার টাকা দিছি। পরে আরও ৩ হাজার টাকা দিছি। টাকা না দিলে তারে মাইরা ফালানোরও হুমকি দিছে। টাকা দেওয়ার পর সে (এসআই শামীম) কইছে আমার ছেলেরে মারবো না। কিন্তু তারে মাইরা মিথ্যা স্বীকারোক্তি দেওয়াইছে। নৌকার মাঝি খলিলের স্ত্রী শারমিন আক্তার বলেন, সন্দেহ কইরা আমার স্বামীরে ধইরা আনছে। পরে পুলিশ বলছে, ওই মেয়েরে নাকি আমার স্বামী মাইরা ফেলছে। এখন তো দেখতাছি এই মাইয়া বাঁইচা আছে। আমার স্বামীরে কেন পুলিশ ফাঁসাইলো সেইটা আমি জানতে চাই। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, স্বামী কামাইয়া না আনলে না খাইয়া থাকি। এই কয়টা দিন আমার তিনটা মাইয়া নিয়ে আমি মাইনষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছি। পোলাপান থুইয়া কাম কইরা যে খামু হেইডাও পারতাছি না। এসআই শামীমের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেন শারমিনও। তিনি বলেন, টাকা না দিলে জেলে ভইরা দেওয়ার হুমকি দিছিল শামীম স্যার। টাকা না দেওয়ায় আমার স্বামীরে সারা রাইত ঝুলাইয়া পিডাইছে। এই কথা শোনার পর আমি অনেক কষ্ট কইরা সাত হাজার টাকা দিছি। আমার স্বামীরে যেন না মারে। কিন্তু তারা আমার স্বামীরে ফাঁসাইয়া দিল। এ ব্যাপারে রকিবের মা রাশিদা জানান, আমার ছেলেকে বিনা অপরাধে মারধর করল। আবার টাকাও নিল। বিনা দোষে জেলে বন্দি করা হল। আমি এর বিচার চাই। রকিবের ভাই সজিব জানান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শামীম রিমান্ডে এনে তার ভাইকে মারধর এবং ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে সোমবার ২০ হাজার টাকা নেয়।একইভাবে ভয় দেখিয়ে কয়েক দিন আগে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। সে রিমান্ডে এনে মারধরের হুমকি দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয়ার হুমকি দেয়। এলাকাবাসী জানান, মোবাইলে ফেইস বুকের মাধ্যমে জিসার পরিচয় হয় বন্দরের বুরুমদি এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে আবদুল্লার সঙ্গে। ৪ জুলাই ভাগ্নে রকিবের মোবাইল ফোনে জিসাকে ডেকে আনে আবদুল্লাহ। সারাদিন আবদুল্লাহর সঙ্গে অটোরিকশা ও নৌকায় ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যায় নিখোঁজ হয় জিসা


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Theme Created By Raytahost.Com