নিজস্ব সংবাদদাতা:
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, রাজনীতিবিদ হতে চাওয়া না চাওয়ার বয়সটা হওয়ার আগেই আমি রাজনীতিতে চলে এসেছিলাম। জীবনের এই বয়সটায় এসে মনে হয় আমাদের কৈশোর, যৌবনটা ছিলো অভিশপ্ত। আমার বাবা, দাদা এমনকি মায়ের পরিবারও রাজনৈতিক পরিবার। রাজনৈতিক পরিবেশে বড় হয়েছি। রাজনীতি করবো এমন কোনো পরিকল্পনা করার আগেই ১৯৭৫ সালের ঘটনা ঘটে যায়। তখন আমার বয়স ১৪। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ১৭ আগস্ট আমার বাবাকে গ্রেফতার করা হল। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা আমার মেঝ ভাইকে তুলে নিয়ে গিয়ে বুকে ৪২টা ছিদ্র করেছিলো। ৭৫ এ আমরা ৪-৫ জন বন্ধু মিলে হাতে লিখে পোস্টার লাগিয়েছিলাম, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাই। সেদিন আমার পিঠে একটি সাইকেল পিটিয়ে ভাঙ্গা হয়েছিলো। তখন একটা জেদ হলো, এর প্রতিবাদ করতে হবে। এ জন্য বললাম, আমাদের কৈশোর, যৌবন অভিশপ্ত। বঙ্গবন্ধু যদি না মারা যেতেন তাহলে আমরা আরো উন্নত কৈশোর, যৌবন পেতাম। মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) রাতে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টক শোতে তিনি এইসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা যারা ৭৫ এর আগের মানুষ, আমাদের যে জেনারেশনটা। আমার জানতাম না বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলাদেশে আসবেন। আমাদের একটাই দাবি ছিলো বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার। ফলে আমরা ব্যালেন্স পলিটিক্স করতে শিখিনি। প্যালেস্টাইন স্টাইলে পলিটিক্স শিখেছি, বিক্ষুদ্ধ। আমাদের টার্গেট ছিলো একটা। মরবো কি বাঁচবো জানতাম না। আমরা এখনো সে জায়গা থেকে বের হতে পারিনি। আমরা মেধা দিয়ে নয় আবেগ দিয়ে রাজনীতি করেছি। এখন মনে হয় আবেগ দিয়ে রাজনীতি করার সময় শেষ হয়ে গেছে। এখন রাজনীতি মাথা দিয়ে হয়। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে শক্ত ভাষায কথা বলার সাহস কোথায় পান এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সত্যই সুন্দর, সুন্দরই সত্য। আমি যদি সত্য না বলতে না পারি তাহলে আমার এই অবস্থানে থাকার কোনো অধিকার নেই। আমি জনতার সেবক আবার প্রশাসন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। প্রশাসন যদি এখন রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণ করতে যায় আমি তার জন্য দুঃখিত। আমি সে রকম রাজনীতিবিদ নই। প্রয়োজন হলে ছেড়ে দেবো কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবো না। আমার প্লানও আছে আমি ক্ষমতায় থাকতে ক্ষমতা ছাড়বো। কারণ আমি ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী মনে করি না। আমার কাছে মন্ত্রী হওয়াটা বড় কথা না। আমার চেয়ার চাই মানুষের হৃদয়ে। নারায়ণগঞ্জের দলীয় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে দ্ব›দ্ব কোথায় এমন প্রশ্নের উত্তরে শামীম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জে কারো সঙ্গে আমার দ্ব›দ্ব নেই। আওয়ামী লীগ পুরোটাই এক। তবে কিছু কিছু ব্যক্তি আছে। যারা প্রধানমন্ত্রীকে উৎখাত করার জন্য এখনো তৎপর। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছে, এখনো বলছে। আমি যখন দেখি জামাতের বড় নেতা গোয়েন্দা সংস্থার কাছে বক্তব্য দেয়, কেন কাকে কোথায় দেয়া হয়েছে, কাকে রক্ষা করার জন্য। কে বড় সমস্যা গোলাম আজম নাকি খন্দকার মোস্তাক? মোস্তাক না থাকলে পেছনের দরজা কেউ খুলত না আর বঙ্গবন্ধু মরতেন না। ওসমান পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের রাজনীতিতে আসা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যে রাজনীতি এখন হচ্ছে সে রাজনীতিতে আমি আমার ছেলেকে শুধু একটা কথাই বলেছি, এখন নয়। চতুর্থ প্রজন্মে আমি আর রাজনীতি চাই না। আমি আমার ছেলে ও মেয়ে দুজনকে বলেছি, যদি যেতেই হয় তাহলে অর্থনৈতিকভাবে নিজের অবস্থান তৈরি করো। যাতে রাজনীতিতে নিজেকে বেচতে না হয়।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।