বিশেষ সংবাদদাতা :
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার শুধুমাত্র ঝাউগড়ার উত্তপাড়া এলাকায় তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে স্থানীয় একটি চক্র। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে কেউ চক্রের সদস্যদের নাম প্রকাশ করতে সাহস পাচ্ছেনা। তবে একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, চক্রটি স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়ধারী কথিত কয়েক ব্যক্তি। তারা এখন এলাকা থেকে ‘গা ’ডাকা দিয়েছেন। এদিকে তিতাসের করা মামলায় গ্রেফতার এড়াতে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন প্রায় চার শতাধিক পরিবারের কর্তা ব্যক্তিরা। একমাত্র উপার্জন ক্ষম ব্যক্তিরা পলাতক থাকায় অনেক পরিবারের সদস্যরা খেয়ে না খেয়ে জীবন-যাপন করছেন। এদিকে অনেক নারীর অভিযোগ, রাতে আসামি গ্রেফতারের অভিযানে গিয়ে রীতিমতো তান্ডব চালাচ্ছে পুলিশ। এতে নারী, শিশু ও বৃদ্ধাদের মধ্যে রাত নামলেই আতংক দেখা দিচ্ছে। অনেকের বাড়িতে ঘরের দরজা ও জানালাসহ প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রান্নার মাটির চুলা ভেঙে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ উঠেছে, নিরহী অনেক ব্যক্তিকে মামলায় আসামি ও গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার সরেজমিন গেলে, পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া শহিদুল্লাহর স্ত্রী সুফিয়া বেগম বলেন, ‘গ্যাসের সংযোগ বৈধ বা অবৈধ আমরা জানি না। আমরা সংযোগ নিতে গিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। এলাকার কয়েক জনলোক গ্যাস সংযোগে উৎসাহিত করেছেন। আমার স্বামী একজন কৃষক। তিনি ঘটনার দিন বাড়িতে ছিলেন না। তাকে দুপুরের খাবার খাওয়া অবস্থায় ঘর থেকে আটক করা হয়।’ একই এলাকার পিয়ারা বেগম বলেন, ‘গ্যাসের সংযোগ নিতে আমার কাছ থেকে প্রায় ৪০ হাজার নিয়েছে। সংযোগ বৈধ কিংবা অবৈধ এটি আমরা জানি না। তবে সংযোগের পর আমাদের নামে কোনো বিলের কাগজ আসেনি।’ একই এলাকার একনারী নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘রাতে পুলিশের সদস্যরা অভিযানের নামে নারীদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছেন। অনেককেই মারধরও করছেন। অনেকের ঘরের দরজায় লাঠি মেরে ভেঙে দিচ্ছে।’ একই অভিযোগ জলিল, জয়নাল ও অহিদ মেম্বারের পরিবারসহ অনেক পরিবারের। পুলিশের বিরুদ্ধে আসামি গ্রেফতারের অভিযানে গিয়ে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগের করেছেন। নাম না প্রকাশের শর্তে স্থানীদের মধ্যে অনেকেই জানান, উত্তরপাড়া এলাকায় প্রায় ৪৫০টি পরিবারকে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ নিতে উৎসাহিত করেছেন এই এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি। তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। অথচ নিরীহ মানুষ মোটা অংকের টাকা দিয়ে গ্যাস নিয়ে এখন মামলায় তাদের আসামি করা হয়েছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার আড়াইহাজার থানার ওসি বলেন, পুলিশের সদস্যরা আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছেন। কেউ পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে থাকলে, সেটি মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তবে নিরীহ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, যারা টাকা নিয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগে উৎসাহিত করেছেন। তাদের ব্যাপারেও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আড়াইহাজার এসআই শফিক বলেন, আসামি গ্রেফতারে অভিযানে গিয়ে পুলিশ কাউকে গালমন্দ করেনি বা কোনো কিছু ভাংচুরও করেনি। পুলিশের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তিনি আরও বলেন, তদন্ত স্বাপেক্ষেই আসামিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। নিরহী কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। প্রসঙ্গত, তিতাস গ্যাস টিএন্ডডি কোম্পানীর লিঃ-এর যাত্রামুড়া রুপঞ্জ জোনাল বিপনন অফিসের প্রকৌশলী মো. মিজবাহ-উল- রহমান বাদি হয়ে ৬ ডিসেম্বর রাত ১১টায় মামলাটি করেন। মামলায় ৩৩ ব্যক্তির নাম উল্লেখ্য করাসহ আরও অজ্ঞাত ৪ থেকে ৫ শতাধিক গ্রামবাসীকে আসামি করা হয়েছে। এরই মধ্যে পুলিশ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছেন। আড়াইহাজার থানায় মামলা নং-২(১২)২০২০ইং
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।