নিজস্ব সংবাদদাতা:
জিসা মণি কান্ডেফেঁসে যাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই শামীম আল-মামুন। পুলিশের তদন্তে গাফিলতি ও নির্যাতনের মুখে তিন আসামির স্বীকারোক্তির প্রমাণ পাওয়া গেছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২৭ পৃষ্ঠার বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। তবে জবানবন্দি নেওয়া ম্যাজিস্ট্রেটের কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। আদালত এই বিষয়ে পরবর্তী শুনানির তারিখ ১৩ জানুয়ারি নির্ধারণ করেছেন। স্কুলছাত্রীকে অপহরণ মামলায় তিন আসামির ‘ধর্ষণের পর হত্যার’ জবানবন্দি ও দেড় মাস পর সেই স্কুলছাত্রী জিসা মণির ফিরে আসার ঘটনায় বিচারিক তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা ফেরদৌসকে।
ফারহানা ফেরদৌস ওই প্রতিবেদনের মতামত অংশে হাইকোর্টকে জানান, ‘বিচারিক অনুসন্ধানে মামলার এজাহার, সাক্ষীদের প্রদত্ত জবানবন্দি, ভিকটিমের ২২ ধারায় প্রদত্ত জবানবন্দি, আসামিদের ১৬৪ ধারায় প্রদত্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, জব্দকৃত আলামতসহ মামলাটির সার্বিক দিক পর্যালোচনা করা হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৭ ধারা অনুযায়ী আসামিদের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর, ১৬৪ ধারায় আসামিদের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটদের কোনও অনিয়ম বিচারিক অনুসন্ধানকালে প্রতীয়মান হয়নি। তবে পুলিশ হেফাজতে (পুলিশ রিমান্ড) থাকাকালীন তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম আল-মামুনের বিরুদ্ধে আসামিদের মারধর, ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে স্বীকারোক্তি প্রদানে বাধ্য করার অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, গত বছরের ৪ জুলাই নিখোঁজ হয় দেওভোগের একটি সরকারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী জিসা মণি। এই ঘটনার একমাস পর ৬ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় অপহরণ মামলা করেন জিসার বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন। গ্রেফতার করা হয় বন্দর উপজেলার বুরুন্ডি খলিলনগর এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে আব্দুল্লাহ (২২), বুরুন্ডি পশ্চিমপাড়া এলাকার সামসুদ্দিনের ছেলে রকিব (১৯) ও নৌকার মাঝি খলিলকে (৩৬)। নির্যাতনের মুখে আসামিরা আদালতে জবানবন্দি দেয় যে, জিসা মণিকে অপহরণের পর গণধর্ষণ করে তারপর শীতলক্ষ্যায় তার লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর ২৩ আগস্ট সশরীরে ফিরে আসে জিসা মণি। সে জানায়, প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গিয়ে স্বামীর সাথে আত্মগোপনে ছিল এতদিন। এই ঘটনায় স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকগুলোতে সংবাদ প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয় সারাদেশে। বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মণির। এরপর আদালত আইনজীবীকে লিখিতভাবে হাইকোর্টে আবেদন করতে বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ আগস্ট ওই ঘটনায় রিভিশন আবেদন দাখিল করা হয়। রিভিশন আবেদনে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় করা মামলা এবং মামলা পরবর্তী প্রক্রিয়ার শুদ্ধতা, বৈধতা এবং যৌক্তিকতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এছাড়া ওই মামলার নথি তলবেরও আবেদন করা হয়। নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, মূল মামলার বাদী এবং আসামিদের বিবাদী করা হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ জীবিত থাকার পরও নারায়ণগঞ্জের স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আসামিদের স্বীকারোক্তি আদায় সংক্রান্ত সদর থানার কার্যক্রমের বিষয়ে বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে নারায়ণগঞ্জের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে এই প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সে নির্দেশের ধারাবাহিকতায় ৪ জানুয়ারি হাইকোর্টে সিলগালা করে প্রতিবেদনটি দাখিল করা হয়। আদালত এই বিষয়ে পরবর্তী শুনানির তারিখ ১৩ জানুয়ারি নির্ধারণ করেছেন।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।