নিজস্ব সংবাদদাতা:
ধর্ষকরা মৃত্যুদন্ডকে কেয়ার না করায় দিন দিন ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। নারায়ণগঞ্জে ধর্ষকদের অবাধ বিচরণ প্রশাসনের মাথা ব্যথার কারণ। মসজিদের মুয়াজ্জিন কর্তৃক মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণের মধ্য দিয়েনারায়ণগঞ্জে শুরু হয়েছিল ২০২১ সাল। এর পর গোটা জানুয়ারি মাসে স্কুল, মাদ্রাসা, গৃহবধূসহ প্রায় ১৩টি ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বছরের করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই বছরজুড়ে আলোচনায় শীর্ষে ছিলো ধর্ষণ-নিপীড়নের নানা ঘটনা। ধর্ষণ বন্ধে সরকার শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদন্ডের বিধান করলেও এই অপরাধ বেড়েই চলছে দিনকে দিন। নারায়ণগঞ্জে যেন এটা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি এক দিন অন্তর অন্তর নারী ও শিশু ধর্ষণ বা ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হচ্ছেন। নতুন বছরে প্রথম মাসে (জানুয়ারি) ৯জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, ৪জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে বলে থানা সূত্রে জানা যায়। এদের মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জে ৪ জন, ফতুল্লায় ৩ জন, আড়াইহাজারে ১ জন, রূপগঞ্জে ২জন, বন্দরে ১জন ভুক্তভোগি রয়েছেন। নতুন বছরের ২ জানুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জে ১৪ বছরের এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণ করা অভিযোগ উঠে স্থানীয় একটি মসজিদের মুয়াজ্জিনের বিরুদ্ধে। এর পরের দিন ৩ জানুয়ারি রূপগঞ্জের তারাবো পৌরসভার মৈকুলী এলাকায় ৬ষ্ঠ শ্রেনীর মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ধর্ষনের শিকার হয়েছে। ওই ঘটনায় কিশোরীর নানা বাদী হয়ে শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে আসামী করে রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। ঠিক তার পরের দিন (৪ জানুয়ারি) ফতুল্লায় গৃহবধূকে (৩০) ধর্ষণের চেষ্টা করে জালাল (৪০) নামের এক ব্যক্তি। ভুক্তভোগির অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেদিন রাতেই ফতুল্লার ভোলাইল নিজ বাসা থেকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আড়াইহাজারে এক গৃহবধূকে প্রকাশ্যে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। এমন ঘটনায় প্রভাবশালী মহলের চাপে ভুক্তভোগী গৃহবধূ আইনি সহযোগিতা নিতে পারেনি। ঘটনার দশদিন পর ৬ জানুয়ারি স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতায় থানায় লিখিত অভিযোগ করেন নির্যাতনের শিকার ওই নারী। ৫জনকে আসামী করে আড়াইহাজার থানায় অভিযোগটি করা হয়। ৯ জানুয়ারি ফতুল্লার ভূঁইগড় এলাকায় চতুর্থ শ্রেণীর ১০ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের ঘটনা ঘটে। পরদিন অভিযুক্ত ধর্ষক রাকিবকে(২২) গ্রেফতার করে পুলিশ।
১০ জানুয়ারি বন্দরে পোশাক কারখানার এক কর্মীকে (২২) পাঁচ হাজার টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী মাসুদ। পরের দিন বন্দর থানায় ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই তরুনী। ১৪ জানুয়ারি রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো পৌরসভা এলাকায় একটি তেলের মিলের নারী শ্রমিক (১৬) ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় ধর্ষিতা ধর্ষক রাব্বি মিয়া ও তার খালাকে আসামী করে রূপগঞ্জ থানায় অভিযোগ করে। ১৭ জানুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি দক্ষিণ পাড়া এলাকায় ২১ বছর বয়সী এক যুবতীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠে এক অটোরিকশা চালকের বিরুদ্ধে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অভিযোগ করা হলে ইমরান হোসেন রনি (২১) নামের যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
২১ জানুয়ারি ফতুল্লায় মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে মর্মে একটি অভিযোগ করা হয়। ফতুল্লা থানায় অভিযোগের সূত্রে জানা যায়, ঘটনার ৩মাস পর পরিবারের সন্দেহ হলে ‘ধর্ষণের শিকার কিশোরী ৩ মাসের অন্তঃসত্ত¡া’ বলে জানায় চিকিৎসক। ২৪ জানুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জে দশ বছরের কণ্যা শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার করেছে মোশাররফ হোসেন (৫১) নামে এক বৃদ্ধ। জালকুড়ি সিকদার বাড়ি পুল এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। একই দিনে সিদ্ধিরগঞ্জে ৯ম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে মামলা করেন। ওই ঘটনায় প্রতিবেশী মোঃ সজিব (২০) আটক করে পুলিশ। ৩১ জানুয়ারি ফতুল্লায় মজা কিনে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আট বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করার অভিযোগে মোঃ হোসেন (৫৫) নামে এক বৃদ্ধ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। একই দিনে ২ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে রিফাত (৩০) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে ফতুল্লা থানা পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও পুলিশ প্রশাসন ধর্ষকদের কাছে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছেন বলেই অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।