নিজস্ব সংবাদদাতা:
বছরের শুরুতে নারায়ণগঞ্জে খুনখারাবি অকল্পনীয়ভাবে বেড়ে গেছে। নতুন বছরের প্রথম মাসে খুনের সংখ্যা কম থাকলেও, বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। আর আত্মহত্যার চেয়ে অজ্ঞাত লাশের সংখ্যাও বেড়েছে। নারায়ণগঞ্জে জানুয়ারি মাসের হত্যা, আত্মহত্যা ও লাশ নিয়ে করা নারায়ণগঞ্জের গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। এর মধ্যে হত্যা ও অজ্ঞাত লাশের সংখ্যা ১৫। সড়ক, নৌ ও অগ্নিকান্ডের মতো দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় আত্মহত্যা করেছে ৫ জন। প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ি জানা যায়, নিখোঁজ এক ট্রাক চালকের লাশ বুড়িগঙ্গা নদীর তীর থেকে ২ জানুয়ারি উদ্ধার করে পুলিশ। ফতুল্লা দাপা শৈলকুড়া এলাকায় জামানের ঘাটের কাছে থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। ৩ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া রেলষ্টেশনে চায়না কোম্পানীর কাজ করার সময় মুস্তাকিন নামের এক মিস্ত্রীর বিদ্যুৎপৃষ্টে মৃত্যু হয়।
৪ জানুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তির (৩০) মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় দুইজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। রাত ১টার সময় ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের সানারপাড় পিডেকে পাম্পের সামনে এ ঘটনাটি ঘটে। একই দিনে সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী কদমতলী মধ্যপাড়াস্থ গ্যাস লাইন এলাকায় দোকানের ভেতর থেকে এক মুদি ব্যবসায়ির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের নাম মো: সেলিম (৪০)। লাশের পকেট থেকে পুলিশ একটি চিরকুট উদ্ধার করেছে। ৭ জানুয়ারি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড সংলগ্ন জেলা পরিষদ এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক ব্যক্তি নিহত হয়। নিহত ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম (৬০)। একই দিনে আড়াইহাজারে তিতাস গ্যাসের সঞ্চালন লাইনের পাইপের লিকেজ থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে ফরিদ মিয়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। ৮ জানুয়ারি ফতুল্লায় দুলাভাইয়ের ছুরিকাঘাতে শ্যালক খুনের শিকার হয়। হত্যার শিকার যুবকের নাম সুমন (২২)। ঘাতক দুলাভাই হাবিবুল্লাহকে আটক করে পুলিশ।
৯ জানুয়ারি সোনারগাঁয়ে মদ্যপানে পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুমের ভাই ও সোনারগাঁও উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুর রহমান বাবু (৩০) মারা যায়। একই দিন আড়াইহাজারে সড়ক দূর্ঘটনায় সুমিত কুমার হৃদয় (২৪) নামের এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়। নিহত হৃদয় আড়াইহাজারে উপজেলার পাচঁগাও দেওয়ানপাড়া গ্রামের শেখর রঞ্জন করের ছেলে এবং নরসিংদী জেলা পুলিশে কর্মরত ছিলেন। ১০ জানুয়ারি রূপগঞ্জে উপজেলার নোয়াপাড়া এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর চৌধুরীঘাট থেকে এক নবজাতকের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ১২ জানুয়ারি ফতুল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় অজ্ঞাত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। রাত পৌনে ১১টায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেললাইনের আলীগঞ্জ এলাকা থেকে ওই লাশ উদ্ধার করা হয়। একই দিনে রূপগঞ্জে ভুলতা ইউনিয়নের লাভড়াপাড়া এলাকায় আমির হোসেন (২৮) নামের এক ব্যক্তি তার সৎ মা সেলিনা আক্তারকে(৩৫) জবাই করে হত্যা করে। নিহত সেলিনা আক্তার লাভড়াপাড়া এলাকার নুরু মিয়ার স্ত্রী। ১৪ জানুয়ারি বালতিতে থাকা পানিতে ডুবে এক কন্যা শিশুর মৃত্যু হয়। সোনারগাঁও পৌরসভার গোয়ালদী গনিরমোড় এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। নিহত ওই শিশুর নাম সঞ্জিতা (২)। একই দিনে সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুরের বেঙ্গল এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসমান অবস্থায় অজ্ঞাত এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
বন্দরে নিখোঁজ হওয়ার চারদিন পর তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থী সুজনের লাশ উদ্ধার করা হয় শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ১৮ জানুয়ারি। নবীগঞ্জ খেয়াঘাট এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। একই দিনে বন্দরে নবীগঞ্জ খেয়াঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে পরে এক পোষাক শ্রমিক নিখোঁজ হলে, এর ৩ দিন পর তার লাশ ভেসে উঠে। ১৯ জানুয়ারি বন্দরে গভীর রাতে পারিবারিক কলহের জের ধরে জাহাঙ্গীর আলম(২২) নামে এক অটোচালকের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। সোনাকান্দা রিপন মিয়ার ভাড়াটিয়া বাড়িতে ঘটনা ঘটে। ২০ জানুয়ারি আড়াইহাজারে সন্ধ্যায় মুল্লুকসাদী এলাকায় হাসপাতালে স্ত্রী সাবিনা (২৭) এর লাশ রেখে স্বামী ইলিয়াস মিয়া পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। পুলিশ খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে মৃতের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।একই দিনে সোনারগাঁ উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নের পূর্ব সনমান্দি এলাকায় ছোট বোনের সাথে অভিমান করে বড় বোন সুমি (১৪) গলায় ফাঁস দিয়ে আতহত্যা করার খবর পাওয়া যায়। ওই দিনই অপর এক ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলি এলাকায় বাবার সাথে অভিমান করে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর আত্মহত্যা করে। ২১ জানুয়ারি সোনারগাঁয়ে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির রক্ত মাখা লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতের মাথায় ও মুখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। একই দিনে সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে অজ্ঞাত এক ব্যাক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এনসিসি ৪নং ওয়ার্ডে পরিত্যাক্ত তাজ জুট মেইলের গোডাউনের পিছন থেকে লাশটি উদ্ধার করে। ২২ জানুয়ারি রূপগঞ্জে পূর্বাচল এলাকায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে একই পরিবারের ৪ জনের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন স্বামী মাছুম (৪০), স্ত্রী শিমা (৩২), ছেলে রাসেল (১৭) ও রহমতুল্লাহ (১০)। ওই দিন রূপগঞ্জের অপর এক ঘটনায় সাফিয়া বেগম (৭০) নামের বৃদ্ধাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ২৪ জানুয়ারি আড়াইহাজারে ছিনতাইকারীর হামলায় মালবাহি ট্রাকের হেলপার নিহত হয়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আড়াইহাজারের শেষ প্রান্তে দেবই এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম বিল্লাল হোসেন। ২৫ জানুয়ারি সদর উপজেলার গোগনগর ইউনিয়নের নতুন সৈয়দপুর এলাকায় ৩ তলা ভবনের ছাদ থেকে পরে ৮ মাসের এক কণ্যা শিশুর মৃত্যু হয়। এসময় শিশুটিকে রক্ষা করতে গিয়ে আহত হয় তার খালা। ২৭ জানুয়ারি সোনারগাঁয়ে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা কাঁচাবাজার এলাকায় রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে এক মহিলা পথচারী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। নিহত মহিলার নাম রাবেয়া খাতুন (৫৫)।
২৮ জানুয়ারি ফতুল্লার পিলকুনি এলাকার রাস্তার পাশে এক নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়না তদন্তের জন্য নবজাতকের মরদেহটি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। ৩০ জানুয়ারি সোনারগাঁয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মাহফুজ নামের ১৩ বছরের এক শিশু নিহত হয়েছে। বাড়ী থেকে সাইকেলযোগে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় ট্রাকের ধাক্কায় সে নিহত হয়। এ সময় স্থানীয়রা মালবাহী ট্রাকসহ চালককে আটক করে পুলিশের কাছে সোর্পদ করে। ৩১ জানুয়ারি ফতুল্লার শাসনগাও এলাকা থেকে লিজা বেগম (২৪) নামক এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এঘটনায় গৃহবধূর স্বামী গার্মেন্ট শ্রমিক কামাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।