নিজস্ব সংবাদদাতা:
সদর মডেল থানার ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আমরা একশ’ পুলিশ নিয়ে পনেরো লাখ মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে সেবা দিতে পারবো না। তারা বলেন, যেখানে সিসি ক্যামেরা থাকে সেখানে অপরাধ হয় না। নারায়ণগঞ্জের মানুষ টাকা পয়সার অভাবে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করেন না এটা বিশ্বাস করি না। যেখানে অন্ধকার সেখানেই অপরাধ, যেখানে লাইট থাকে সেখানে অপরাধ হয় না। বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সদর মডেল থানা প্রাঙ্গনে ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শাহ্জামান’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( ক সার্কেল ) মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্যে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( ক সার্কেল ) মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা প্রতি মাসেই ওপেন হাউজ ডে থানায় আয়োজন করছি। আপনাদের সমস্যার কথা এখানে বলবেন। অপরাধ দমনে পুলিশের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। সেবা নিতে গেলে আপনার ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, ভালো ডাক্তারের কাছে গেলে ভিজিট দিতে হয়। কিন্তু আমার কাছ থেকে পুলিশের কাছ থেকে সেবা নিতে গেলে কোন খরচ দিতে হয় না। আমাকে বা ৯৯৯ এ কল দিলে পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মধ্যেই পুলিশ পৌঁছে যায়। পুলিশের পরিবর্তন এসেছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ী আপনার বাসায় ভাড়া থেকে নারায়ণগঞ্জে মাদক ব্যবসা করছে। বাড়িওয়ালা হিসেবে দায়িত্ব কে ভাড়া নিচ্ছে, তার খোঁজ নেয়া। আমরা একশ’ পুলিশ নিয়ে পনেরো লাখ মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে জানতো পারবো না, যে ভাড়াটিয়া কি করে। যেখানে সিটি ক্যামেরা সেখানে অপরাধ হয় না। টাকা পয়সার অভাবে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করেন না এটা বিশ্বাস করি না। যেখানে অন্ধকার সেখানেই অপরাধ, যেখানে লাইট সেখানে অপরাধ হয় না। নারায়ণগঞ্জের অলি গলিতে আলোর ব্যবস্থা করলে মাদক, ছিনতাই কমে যাবে। নারায়ণগঞ্জে মানুষ সচেতন ও বিত্তশালী, আমরা সকলেই মিলে সুন্দর নারায়ণগঞ্জ গড়বো’। ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠানে আগতরা চর সৈয়দপুরে তরুণদের অবাদ চলাচল, বাপ্পী চত্বর থেকে কড়ইতলা ব্রিজ এলাকায় ভোরে ছিনতাই, ১৮নং ওয়ার্ডের গুদামসহ অন্যান্য স্থানে চুরি, চাষাড়া রেললাইন থেকে কিল্লারপুল পর্যন্ত সন্ধ্যার পর মাদক ব্যবসাসহ নানা বিষয় তুলে ধরে। সকলের সমস্যার প্রেক্ষিতে বক্তব্য দেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন)। প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠানে এসে আমার মনে হয়েছে নতুন ভালো অধ্যায় শুরু হয়েছে। আমরা যারা সেবা প্রত্যাশী, তারা ওপেন হাউজ ডে তে বললে কাজ হয়। আপনারা এখানে বলার পরেই, নিতাইগঞ্জের যানজট নিয়ন্ত্রণে। এখানে(ওপেন হাউজ ডে) বলেছেন বলেই, বঙ্গবন্ধু সড়ক অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। আপনারা বলতে শুরু করেছেন, আমি আশাবাদী কাঙ্খিত সেবা পাবেন। অনেকেই বলেছেন ওপেন হাউজ ডে অন্য জায়গায় করার কথা, আমাদের পুলিশ সুপার স্যারের নির্দেশ থানায়ই ওপেন হাউজ ডে হবে সুনির্দিষ্ট তারিখে। এখানে আপনাদের ডেকে এনে আমরা সমস্যা শুনবো’। চুরি, ছিনতাই, মাদক প্রসঙ্গে মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমার মনে হয় সামাজিক যে ব্যবস্থা এখানে, পঞ্চায়েত সহ সামাজিক যে কমিটি আছে সেগুলো ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছে না। আমরা চাই যে সমস্ত কমিটি আছে, আগামী ১৫ তারিখে মধ্যে তাদের নিয়ে আমরা বসবো, তাদের তালিকা করা হয়েছে। পঞ্চায়েত ও সামাজিক কমিটি থেকেই আমাদের কাজ শুরু করতে হবে। চুরির ঘটনা বাস্তবিক অর্থে ২৪ ঘন্টা কখনও পুলিশি নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব না। এটা করতে হলে যারা সমাজের ভালো লোক আছে, তাদের সাথে যৌথভাবে কাজ করলেই সম্ভব। কথা কম কাজ যাতে হয়। সুস্পষ্ট প্ল্যানিং ছাড়া কাজ করলে বিপত্তি ঘটে। মাদকের সমস্যা পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয় বলেই মাদক দ্রব্য অধিদপ্তর করা হয়েছে। মাদক দ্রব্য অধিদপ্তর তার যে জনবল তা নিয়েও সম্ভব নয়। বাস্তবিক অর্থে আন্দোলন শুরু করতে হবে। আমরা আন্দোলন সমন্বিত ভালো করলেই এটা করা সম্ভব।’ করোনার কারণে দীর্ঘদিন বলার পরও কমিটি করা একসাথে বসা সম্ভব হচ্ছে না। সে কথা উল্লেখ্য করে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলাম মাদকের কমিটি করবো। প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বে আল্লাহর রহমতে আমরা করোনা অনেকটাই মোকাবেলা করতে পেরেছি। ফেব্রুয়ারি এখনও চলমান, আল্লাহর রহমতে আগামী মাসের ৭তারিখে করোনার টিকা শুরু হবে। আমরা এখন থেকেই সেই কার্যক্রম শুরু করবো’। মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে সবসময়ই কেউ না কেউ জড়িত। দয়া করে সকলে সচেতন থাকবেন। নারায়ণগঞ্জে অন্যান্য জেলার চেয়ে লোকসংখ্যা অধিক, কিন্তু আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর পুলিশের সদস্য সংখ্যা সেরকম না। সেজন্য নারায়ণগঞ্জকে ভালো রাখতে হলে আমাদের মধ্যে ভালো বন্ধন থাকতে হবে। আমাদের পুলিশ সুপার চান ইমানদারী পুলিশিং ব্যবস্থা। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি’।
সভাপতির বক্তব্যে সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শাহজামান বলেন, ‘দু মাসের কিছু বেশি সময় যাবত আমি সদর মডেল থানায় যোগদান করেছি। এসময়ে চেষ্টা ত্রুটি না রেখেই কাঙ্খিত সেবা দেয়ার চেষ্টা করেছি। নারায়ণগঞ্জ সদর থানার অনেক চ্যালেঞ্জ, এখানে প্রতিদিনই কোন না কোন প্রোগ্রাম থাকে। নারায়ণগঞ্জ শহরের বড় সমস্যা হকার, সেগুলো নিয়ে প্রতিদিনই কাজ করি। সুনির্দিষ্ট ডিউটি থাকে সেখানে। পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম স্যারের নির্দেশে হকার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এনেছি, আশা করি অব্যাহত থাকবে। হকার নিয়ন্ত্রণে আশায় শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণে। নারায়ণগঞ্জে নয়, সারা দেশেই মাদক আছে। মাদককে কেন্দ্র করে অনেক বড় ঘটনা ঘটেছে। আপনাদেরও এজন্য দায়িত্ব আছে মাদক নিয়ন্ত্রণে। আপনাদের কাছে অনুরোধ মাদক ব্যবসায়ীকে বাড়ি ভাড়া দিয়েন না। আর বাড়িওয়ালাই যদি করে, তাহলে তথ্য দেন একসময় জনগণই তার বাসায় তালা দিবে। অনেক ঘটনা, অঘটনের জেলা নারায়ণগঞ্জ। নারায়ণগঞ্জের মাটি ও মানুষকে ভালোবেসে চাকরি করি। ভালোবাসার তাড়না থেকেই সেবা দিবো। নারায়ণগঞ্জে প্রচুর ব্যাংক রয়েছে, সেখানে অনেক লেনদেন হয়। সেগুলো যখন লেনদেন করা হয়, আমরা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করি। এখন যদি পাবলিকের টাকা কোথাও নিতে হয়, আমাদের জানাবেন সেই নিরাপত্তা দিবো। আপনি যদি আমাদের ইনফর্ম করেন, রাত বিরাতেও আপনাদের টাকা নিয়ে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিবো। একটা ঘটনার পর তদন্ত করে অপরাধী ধরা, সেটা দুই-চার-পাঁচ ঘন্টা নয়, অনেক সময়ের প্রয়োজন। তার চেয়ে এক ঘন্টা আপনার পিছে সময় দিয়ে আপনারা টাকা নিরাপদ ও থানায় একটা মামলাও কম হলো। যেকোন প্রয়োজনের সহায়তা নিবেন’। এসময় জেলা কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরী, মহানগর কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি সলেমান, বিশিষ্ট শিল্পপতি ফজর আলী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।