নিজস্ব সংবাদদাতা:
‘সাবদী’নামটি শুনলেই ফুলের কথা মনে পড়ে যায়। কারণ সাবদীকে আমরা চিনি ফুলের গ্রাম হিসেবে। এখানে প্রতিবছর লাখলাখ টাকার ফুল উৎপাদিত হয়। অথচ একদিন অন্য আট, পাচঁটি গ্রামের মতো সামান্য গ্রাম ছিল‘সাবদী’। গত ৩ দশকে সেই গ্রামটি ফুল চাষ করে দেশব্যাপি সুনাম অর্জন করেছে। ‘সাবদী’এখন নারায়ণগঞ্জের অতিসুপরিচিত একটি নাম।কিন্তু ,নানা বিধ প্রতিকুল অবস্থার কারণে সাবদীর ফুলচাষীরা তাদের ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার ফুলের বাণিজ্য হতো এই গ্রামটিকে ঘিরে। ফুলচাষে লাভ দেখে আশ পাশের আরও ২২টি গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে এই ফুলচাষের পরিসর। তবে, এখন‘সাবদী’সহআশপাশের গ্রাম তার সেই পরিচয় হারাতে বসেছে। হারাতে বসেছে ফুলচাষের সম্ভাবনাও। বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের দিঘলদী, সাবদী ও মাধবপাশা এলাকায় গিয়ে বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ফুলচাষের এমন ভয়ঙ্কর আভাস পেয়েছে। আর সেই তথ্যের সত্যতা জানিয়েছেন উপজেলা কৃষিকর্মকর্তার কার্যালয়। আগে গম, ধান, সরিষা, আখ চাষ করতেন ওই এলাকার কৃষকরা। অনেকসময় এই সব ফসল করে খরচই উঠত না। দিঘলদী গ্রামের সুবোধ চন্দ্র হালদার প্রায় ৩৫ বছর আগে বাড়ির পাশের উঁচু জমিতে ফুলচাষ শুরু করেন। প্রতিদিন অল্পস্বল্প ফুলএনে বিক্রি করতেন নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের ফটকে। তিনিই এলাকার বেশকয়েকজনকে ফুলচাষে উদ্বুদ্ধ করেন। ফুলচাষের মাধ্যমে খেয়ে-পরেভালো থাকায় অন্যরাও এগিয়ে আসেন এ ব্যবসায়। এরপর থেকে ফুলেরচাষ বেড়ে চলেছে। কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর বন্দর উপজেলা কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে বন্দরউপজেলার ৩৫ হেক্টর জমিতে ফুলেরচাষ হয়েছিল। ২০১২ সালে ৬০ হেক্টর, ২০১৩ সালে ৯৫, ২০১৪ সালে ১২০ এবং ২০১৫ সালে ১৪০ হেক্টর জমিতে ফুলচাষ হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ ও ২০ সালেও বন্দরের প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে ফুলচাষ হয়। তবে, এবছর ফুলচাষ হয়েছে মাত্র ৭০ হেক্টোর জমিতে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের মাধবপাশা, সাবদী, দিঘলদী, নৃশং, মোহনপুর, কলাবাগ, জিওধরা, আদমপুর, নয়ানগর ও মুকফুলদী এলাকায় অনেক ফুলচাষ কমে গেছে। একই ভাবে কমে গেছে বন্দর ইউনিয়নের চৌধুরীবাড়ী, মীরকুন্ডি, বাগবাড়ী, কুশিয়ারা ও তিনগাঁও; মুসাপুরের কুল চরিত্র, মিনার বাড়ী ও চর ইসলামপুর; ধামগড়ইউনিয়নের নয়ামাটি ও মনারবাড়ী এলাকার জমি গুলোতেও। কয়েকজন চাষি জানান, ‘বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা’-এই তিনটি দিবসকে ফুলের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ফুলচাষ করে উপজেলার চাষিরা। এছাড়াও সারাবছরই ফুলেরচাহিদা থাকেগ্রামে। তবে, এবছর আগের মতো ফুলচাষ হয়নি।’এ বছরফুলচাষ কম হওয়ার কারণ নিয়ে কৃষিকর্মকর্তা ফারহানা সুলতানা বলেন, ধান আলু কিংবা ফলচাষে কৃষকরা নানা সুবিধা পেলেও সরকারের পক্ষ থেকে ফুলচাষিরা তেমন কোন সুবিদা ইপায়না। আমার অফিস থেকে তেমন কিছুই করতে পারিনি। করোনা পরবর্তী সময়ে ২৭ জন ফুলচাষিকে ৩৯ লাখ টাকার প্রনোদনার কৃষি ঋণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্ষাকালে জমির পানি নামতে দেড়ি ও জমি গুলো বালিভরাট হতে থাকায় এ বছর ফুলচাষ কম হয়েছে। অনেক চাষি আবার অন্য ফসলের দিকে আগ্রহ বাড়াচ্ছে। আর যে জমিতে চাষ হয়েছে, সেইজমি গুলোতেও দেরিকরে গাছ রোপন করায় ফুলফুটতে দেরি হচ্ছে। তাই চাষিরা কিছুটা চিহিৃত। তারপরেও আশা করা হচ্ছে এ বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রায় এক থেকে দেড় কোটি টাকার ফুল বেচা-বিক্রি করতে পারবে কৃষকরা। অভিজ্ঞমহল মনেকরেন, পরিমিত সুযোগ, আর সরকারের সহযোগীতা পেলে ফুলের গ্রাম সাবদী তার ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারবে।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।