নিজস্ব সংবাদদাতা:
রাষ্ট্রীয় হেফাজতে লেখক মুশতাক আহমেদের হত্যা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে প্রতিবাদী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধনে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, আমরা এ সরকারকে বলতে চাই এ কালাকানুন ও ফ্যাসিবাদী আইন দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারকে কোনভাবে টিকিয়ে রাখা সম্ভব না। এ নিরাপত্তা আইন কোন স্বৈরশাসককে রক্ষা করতে পারেনি। তাই এ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করুন এবং জনগণের বিরুদ্ধে থাকা বন্ধ করুন। শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তরুণ কবি অভি জাহিদ মুখে কালো কাপড় বেধে লেখকের হত্যা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ বিভিন্ন আলোচিত হত্যার বিচারের দাবি জানায়। রফিউর রাব্বি বলেন, যে আইনে গ্রেফতার করে এই মোশতাক আহমেদকে হত্যা করা হয়েছে এবং যে আইনটি বাতিলের জন্য সারাদেশে প্রতিবাদ হচ্ছে সেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে করা হয়েছিল। এটিতে বলা হয়েছিল ডিজিটাল পদ্ধতিতে অন্যের মত প্রকাশের বা চেতনার বিরুদ্ধে আঘাত করা হয় তাহলে তার জামিন অযোগ্য একটি মামলা করা হবে। এ আইন হওয়ার আড়াই মাস আগে ডিসেম্বরের ৩১ তারিখে ছিলো নির্বাচন। অর্থাৎ আগে থেকে ঠিক করে রেখেছে নির্বাচনে কি হবে আর এর বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদে করতে না পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অন্যান্য বিষয়ে যাতে প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষকে সরকারের নগ্ন চেহারা উদঘাটিত করতে না পারে। এবং জনগণকে সেই ভয় দেখানোর জন্য এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ আইন করার পর আমরা দেখেছি কতজন মানুষকে এ আইনের মাধ্যমে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যটি একটি অবাক করার বিষয়। আমরা চরিত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে একটি সরকারকে ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী সরকার বলে থাকি। আমরা তাদের স্বৈরাচারী সরকার বলছি কারণ তারা জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে ঘাতকদের পক্ষে অবস্থান করেছে। জনগণের মৌলিক অধিকার, বাক স্বাধীনতা, ভোটের অধিকার, জীবনের নিরাপত্তা কোনটিই এ সরকার রক্ষা করতে পারেনি। আমাদের সংবিধানে বলা আছে নাগরিকে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হোক। চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা তো দূরের কথা তারা কথা বলার স্বাধীনতা হরণ করে তাহলে কিভাবে তারা নিজেদের গণতান্ত্রিক সরকার বলে দাবি করে। তারা স্বৈরশাসনের সমস্ত বৈশিষ্ট্য নিয়ে ও জনগণের অধিকার হরণ করে টিকে থাকতে চাচ্ছে। একটি বিষয় তারা স্পষ্ট বুঝেছে যে যদি জনগণকে ভোটের অধিকার দেওয়া হয় তাহলে তারা টিকে থাকতে পারবে না। এ সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে শুধু মাত্র এ সরকারের অনিয়ম দুর্নীতি,দুঃশাসন, খুন ও লুটপাটের বিরুদ্ধে জনগণ কথা বলতে না পারে। তারা যে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে, বন উজাড় করছে, নদী ধ্বংস করছে ও সর্বোপরি এ দেশ ধ্বংস করছে তাদের নিরাপত্তার জন্য এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আইয়ুব খান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছিল। আর জনগণ সে আইন উপেক্ষা না করে আইয়ুব খানকে উৎখাত করেছিল। আজকে যারা প্রধানমন্ত্রীকে মানবতার জননী ও বিশ্বনেত্রী আখ্যা দিচ্ছে সেই তাবেদার ও চাটুকাররা এ সরকারের পতন হলে থাকবে না। কারণ তাবেদাররা তাবেদারি করে নিজের আখের গোছানোর জন্য, লুটপাট করার জন্য। জনগণকে ভয় দেখিয়ে তারা জনগণের মুখ বন্ধ করতে চায়। বিগত স্বৈরশাসকরা এ সরকারের কৃতকর্ম দেখে লজ্জিত হবে। মোশতাকের সাথে কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার অপরাধ সে কার্টুন এঁকে এ সরকারের নগ্ন চেহারা উদঘাটন করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যাদের যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে আমরা সবার তাদের মুক্তি চাচ্ছি। সকল স্বৈরশাসক ক্ষমতায় থাকলে তারা অন্ধ থাকে। তারা তাদের দুষ্কর্ম, অপকর্ম দেখে না এবং তাদের প্রতি কোন উপদেশ তাদের কোনে ঢুকে না। যে জন্য সকল স্বৈরশাসকের ফায়সালা হয়েছে রাজপথে আজকে এ স্বৈরশাসকেরও ফায়সালা রাজপথেই হবে। সে আন্দোলনে আমরা সকলে থাকবো। মানববন্ধনে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানিশংকর রায় এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল, এড. প্রদীপ ঘোষ, ন্যাপ সাধারণ সম্পাদক এড. আওলাদ হোসেন, সিপিবির জেলা সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, বাসদ জেলা সমন্বক নিখিল দাস, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন সবুজ, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্রের সংগঠক রঘু অভিজিৎ রায়, সমমনার সভাপতি দুলাল সাহা, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন মন্টু, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, নারী সংহতির পপি রাণী সরকার, ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস জামান, নারায়ণগঞ্জ ছাত্র ইউনিয়ন মহানগরের সভাপতি পরমা ঘোষসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।