Logo

করোনায় শীতলক্ষ্যা ৩য় সেতুর কাজে ধীরগতি

করোনায় শীতলক্ষ্যা ৩য় সেতুর কাজে ধীরগতি

নিজস্ব সংবাদদাতা:
করোনার প্রভাব পড়েছে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিয়মান ‘তৃতীয় সেতু’ প্রকল্পে। ফলে ধীরগতিতে এগুচ্ছে নির্মাণ কাজ। প্রসঙ্গত, একনেকে উঠে ২০১০ সালে। এরপর চলে গেছে দীর্ঘ ১০টি বছর। বার বার মেয়াদ বেড়েছে,বেড়েছে প্রকল্পের ব্যয়ও। অবশেষে দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের প্রসারিত হচ্ছে দু’হাত। মিলিত হতে যাচ্ছে শীতলক্ষ্যার দুই পাড়। সড়ক পরিবহন-মহাসড়ক বিভাগ ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে এমন তথ্যই জানা গেছে। এছাড়া সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর মধ্য বরাবর যে পিলার তা স্থাপনের কাজ শেষে, পিলারের চুড়ার দু দিকে বর্ধিত হচ্ছে। চলছে নির্মান কাজ। সেতুটির নির্মাণ শেষ হলে নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দর উপজেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ চালু হবে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ফরিদপুর ও মুন্সিগঞ্জ থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেটগামী যানবাহন চলাচলের পথ অনেকটা কমে যাবে। তথ্যমতে, ৩৫ স্প্যানবিশিষ্ট সেতুটির দৈর্ঘ্য ৪০০ মিটার ও ভায়াডাক্ট (উড়ালপথ) ৮৯০ মিটার। এর বাইরে মদনগঞ্জ প্রান্তে এক হাজার ৬৮২ মিটার ও সৈয়দপুর প্রান্তে ৪৪৮ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। সেতুটি নির্মিত হলে সোনারগাঁ উপজেলা র জনগণ সহজে ও দ্রæত নারায়ণগঞ্জ সদরে যেতে পারবেন। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-মাওয়া-খুলনা সংযোগকারী সড়কের বিকল্প রুট হিসেবেও এটি ব্যবহার করা যাবে। প্রকল্পের আওতায় শীতলক্ষ্যা নদীতে প্রায় ৫০০ মিটার নদীশাসনের কাজও করা হবে।২০১০ সালের ৯ ডিসেম্বর একনেক (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনকালে ব্যয় ধরা হয় ৩৭৭ কোটি ৬২ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। পরবর্তী সময়ে ভূমি অধিগ্রহণের খরচ বৃদ্ধি, ভ্যাট ও আইটি খাতে ব্যয় সমন্বয় করতে গিয়ে ২০১৫ সালের ২৯ মে বিশেষ সংশোধনী আনা হয়। সে সময় ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩৯ কোটি ৬৭ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।এরপর ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) আরেক দফা সংশোধন করা হয়। সে অনুযায়ী ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫৯৯ কোটি ২৭ লাখ ৫১ হাজার টাকা। আর সম্প্রতি প্রকল্পটির ডিপিপি আবার সংশোধনের প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৬১১ কোটি ছয় লাখ টাকা। সব মিলিয়ে তিন দফায় প্রকল্প ব্যয় বাড়ছে ২৩৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বা ৬১ দশমিক ৮১ শতাংশ। এদিকে চুক্তি অনুযায়ী, গত বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সেতুটির কাজটি শেষ করার কথা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশনের। কিন্তু ঋণদাতা সংস্থা সৌদি ফান্ডের অর্থ ছাড়ে বিলম্বের কারণে পরে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ৩১৭ দিন সময় বাড়িয়ে এ মেয়াদ গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বেঁধে দেয়া হয়। তবে মার্চে বাংলাদেশে কভিড-১৯ মহামারি সংক্রমণ শুরুর পর নির্মাণকাজে ব্যাঘাত ঘটে। এ যুক্তি দেখিয়ে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর ঠিকাদার সিনোহাইড্রো সময় বাড়ানোর চিঠি দেয়। তাতে ৫৭৪ দিন সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়। তবে তাদের ৩৬৫ দিন দেয়া হয়। এ হিসাবে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মূল সেতুর কাজ শেষ হবে।জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যায় নির্মাণাধীন সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ। চুক্তি অনুযায়ী নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল গত বছরের ১৮ ফেব্রæয়ারি। প্রকল্পের উন্নয়ন সহযোগী সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্টের (এসএফডি) অর্থ ছাড়ে বিলম্বের কারণে সময় বাড়ানো হয় ৩১৭ দিন। সে হিসাবে গত ৩১ ডিসেম্বর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনার কারণে নির্মাণকাজ ব্যাহত হয়েছে। তাই গত ২২ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো প্রকল্পের মেয়াদ আরও ৫৭৪ দিন বাড়ানোর আবেদন করে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও ঠিকাদারের সঙ্গে আলোচনা করে এখন আরও ৩৬৫ দিন তথা এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। তবে, নির্মাণ-পরবর্তী এক বছর ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ডসহ অন্যান্য কিছু বিষয় থাকায় প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Theme Created By Raytahost.Com