নিজস্ব সংবাদদাতা:
খানপুরস্থ নারায়ণগঞ্জের করোনা (৩’শ শয্যা) হাসপাতালে গত ২৪ ঘন্টায় ৪জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। দুই জনের করোনা পজিটিভ ও ২ জনের করোনা সাসপেক্টে মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটে গুরুতর অবস্থায় ৬জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। ২৪ মার্চ (বুধবার) খানপুর হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. আবুল বাসার এ তথ্য জানান। ২৩ মার্চ (মঙ্গলবার) বিকেল সাড়ে ৫টায় মৃত্যু হয় ফতুল্লার পশ্চিম দেওভোগের বাসিন্দা মোঃ সোলাইমান (৭০) এর। এর আগে একই দিন বিকেল সাড়ে ৩টায় মৃত্যু হয় সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোড এলাকার হিরাঝিলের বাসিন্দা রোকেয়া বেগম (৬০)। তাদের দুই জনেরই করোনা পজিটিভ ছিলো বলে নিশ্চিত করা গেছে। এছাড়া ২৩ মার্চ বিকেলে আমীর হোসেন (৭৩) নামের আরেক রোগীর মৃত্যু হয়েছে খানপুর হাসপাতালে। ২৪ মার্চ সকাল ৬টা নাগাদ ফজলুল হক (৫৭) নামে আরেক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এই দুইজনের করোনার উপসর্গ ছিলো। গত এক দিনে (২৩ মার্চ সকাল ৮টা- ২৪ মার্চ সকাল ৮টা) নারায়ণগঞ্জে নতুন করে ৮২ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ৯৪৭৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে জেলাজুড়ে। ২০ মার্চ নারায়ণগঞ্জে করোনা শনাক্ত হয় ৩২ জনের। ২১ মার্চ আক্রান্ত হয় ৪৪ জন। ২২ মার্চ গিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ জনে। আজ ২৪ মার্চ সব রেকর্ড ভেঙ্গে ৮২ জনের শরীরে করোনা সনাক্ত হয়েছে। এ ভাবে প্রতিদিনই রেকর্ড ভাঙ্গছে করোনা শনাক্তের। খানপুরস্থ নারায়ণগঞ্জ ৩’শ শয্যা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. আবুল বাসার জানান, গত দুই দিনে (২৩মার্চ ও ২৪ মার্চ) দুই জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে ও দুই জন করোনার সাসপেক্টে মারা গেছে আমাদের হাসপাতালে। বর্তমানে আমাদের আইসিউ ইউনিটে ৬জন ও সাধারণ ইউনিটে ৩৮ জন করোনার রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। করোনার পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে শঙ্কা করে নারায়ণগঞ্জের সকলকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে ডা. আবুল বাসার জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করেছেন, দ্রুত যেন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়। তিনি জানান, বেশি বেশি সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারনার পাশপাশি স্বাস্থ্য বিধি মানতে বাধ্য করার ব্যবস্থা সমূহু প্রয়োগ করতে হবে।
ডা. জাহিদের পরামর্শ
গত বছর এই মার্চ মাসেই সারা দেশে করোনার ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। গত এক বছরে এই করোনা ভাইরাসে নারায়ণগঞ্জের ১৬৭জন প্রাণ হারিয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৯৪৭৯ জন। মাঝের কিছুটা সময় স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করলেও, গত এক সপ্তাহে নারায়ণগঞ্জের করোনা আবারও ভয়ঙ্কর অবস্থার দিকে এগোচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৪ জনের মৃত্যু আর ৮২ জনের করোনা শনাক্ত ভয়াবহ শঙ্কার বার্তা দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মেয়র-সংসদ সদস্যসহ সকল জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনতার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন জেলা করোনা ফোকাল পার্সন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম। বুধবার (২৪ মার্চ) বিকেলে তিনি বলেন, আমরা আগের মতো আবারও হটস্পটে চলে যাচ্ছি। যেহেতু আমাদের অর্থনীতি চালু রাখতে হবে, সেহেতু নো মাস্ক, নো সার্ভিস চালু রাখতে হবে। রাস্তায় কেউ মাস্ক ছাড়া চলতে পারবে না, জটলা পাকাতে পারবে না। স্বভাবিক দূরত্ব বাজায় রাখতে হবে। অফিসে, র্যালী কিংবা মিটিংয়ে স্বাস্থ্য বিধি মানছে না কেউ। যাদের আমরা ফলো করবো, তারা যদি স্বাস্থ্য বিধি না মানে, তাহলে জনগণ কিভাবে মানবে। প্রত্যেককেই সচেতন হতে হবে। প্রশাসন থেকে শুরু করে জনগণ পর্যন্ত। কেউ মাস্ক ছাড়া ঘর থেকে বের হতে পারবে না। করোনার পরিস্থিতি সর্বাধীক কাজ করা এই চিকিৎসক জানান, আপনারা বাজারে যান, মার্কেটে যান, যেখানেই যান না কেন, প্রতিটি স্ট্যাপে মাস্ক পড়তেই হবে। প্রয়োজনে সামাজিক যে অনুষ্ঠান আছে, সেগুলো কমিয়ে দিতে হবে। যদিও সরকার ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, ১’শ জনের বেশি জনসমাগম অনুমতি দেওয়া যাবে না। ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনে সকল সভা-সমাবেশ এখন বাতিল করতে হবে। বিশেষ করে সিটি করপোরেশন এলাকা, তারপরে সদর এলাকা, রূপগঞ্জ, বন্দর। সময় ক্ষেপন করা যাবে না জানিয়ে ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, কিছু পূর্ব প্রস্তুতিও নিতে হবে। এখন নারায়ণগঞ্জে ৩‘শ শয্যা হাসপাতাল আর ৪টি উপজেলা হাসপাতাল ছাড়া আর কোথাও চিকিৎসার জন্য যাওয়ার জায়গা নেই। উপজেলা হাসপাতালে নন কোভিডের পাশাপাশি কোভিড চিকিৎসা চলছে। আর খানপুর হাসপাতালে তো অর্ধেক ভাঙ্গা, বাকি অর্ধেকটায় ১০০ শয্যা আছে। পাশাপাশি নন কোভিড চিকিৎসাও চলছে। আবার ভ্যাকসিন পক্রিয়াও চলছে। সুতরাং আমাদের আরও একটা অলটারনেট খুঁজে রাখা দরকার। যাতে করে প্রাথমিক থেকে মধ্যম সারির রোগীদের আমরা সেবা দিতে পারি। যেমন আইসিইউ না থাকলেও যেখানে একটু অক্সিজেনের সেবা থাকবে, একটু নেবুলাইস করার সেবা থাকবে। কেননা, করোনার ৮০ ভাগ রোগীরই আইসিইউ লাগে না। কিন্তু করোনা রোগীর বেশির ভাগেরই আবার অক্সিজেন লাগে। ভর্তি হয়ে অক্সিজেন সাপোর্টা যদি একটা রোগী নিতে পারে। তাহলে, চিকিৎসাটা সহজে করা যায়। তিনি বলেন, মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) করোনা কমিটির যে মিটিং ছিল, সেখানে ২টি প্রস্তাবনা দিয়েছি। প্রথমটি হচ্ছে আমাদের দ্রুত রোগ শনাক্ত করতে হবে। ঘরে হউক, আর যেখানে হউক, চিকিৎসা দিতে হবে। এতে ২টি কাজ হবে, সংক্রমন নিয়ন্ত্রণ হবে ও রোগী সময় মতো চিকিৎসা পেলে সুস্থ হবে। সেই সাথে সিটি করপোরেশন আগে যে আমাদের সহযোগীতা করেছিল, সেই বুথ গুলো চালু করার প্রস্তাবনা দিয়েছি। আরেকটা প্রস্তাবনা দিয়েছি, সিটি করপোরেশনের ২টি নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। সে দুই হাসপাতালে চিকিৎসকও আছে। ওখানে একটা বেড আর অক্সজেন সিলিন্ডার দিয়ে একটা সেটআপ করতে হবে। নারায়ণগঞ্জে এক সিজিএম ভবন বিদেশগামীদের নমুনা সংগ্রহ সামলাইতে পারে না জানিয়ে ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, খানপুর হাসপাতাল একা কিভাবে সামলাবে এত নমুনা। সিটি করপোরেশন চাইলে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে দিবো। উনারা চাইলে ওয়ার্ড লেবেলে নমুনা সংগ্রহ করতে পারেন। নমুনা যতবেশি সংগ্রহ হবে, ততবেশি আইসিলশেনে আনতে পারবেন, চিকিৎসা দিতে পারবেন। রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা কমবে আবার সংগ্রমনটাও নিয়ন্ত্রণ হয়ে যাবে। নারায়ণগঞ্জকে রক্ষা করতে নিয়ন্ত্রণের কোন বিকল্প নাই।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।