বন্দর সংবাদদাতা:
শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গোর ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে ৩৪ জনের প্রানহানী ও ক্ষতির ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। গত মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) রাতে নারায়ণগঞ্জ বিআইডবিøউটিএ (ভারপ্রাপ্ত) পরিচালক বাবু লাল বৈদ্য বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে বন্দর থানায় এ মামলা দায়ের করেন তিনি। মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ এপ্রিল বিকেলে ৫টা ৫৬ মিনিটে নারায়নগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে এম. এল সাবিত আল হাসান (এম নং-১০৩৮৩) নামে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ ৪৫ জন যাত্রী নিয়ে মুন্সিগঞ্জ লঞ্চ ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পরে যাত্রীবাহী লঞ্চটি র্নিমাণাধীন ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতুর সামনে আসলে ওই সময় মালবাহী কার্গো জাহাজ পিছন দিক থেকে অবৈধ ভাবে ধাক্কা দিয়ে যাত্রীবাহী লঞ্চটিকে ডুবিয়ে দেয়। লঞ্চ ডুবির ঘটনায় ১৫ জন পুরুষ, ১৭ জন মহিলা ও ২জন শিশুসহনিহত হয়। এবং বাকিরা সাঁতার কেটে তীরে উঠতে সক্ষম হয়। দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে বিআইডবিøউটিএ এর তত্বাবধানে উদ্ধারকারী দল দীর্ঘ ১৮ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে দুর্ঘটনা কবলিত স্থান থেকে ৩৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে। নিহতরা হলো মুন্সিগঞ্জ মদ্য কোন্ডাগাও এলাকার মতিউর রহমান কাজীর ছেলে ইউসুফ কাজী (৫২) ঢাকা মিরপুর ১১ এর বাসিন্দা সিরাজুল ইসলামের ছেলে সোহাগ হাওলাদার (২৩) মুন্সিগঞ্জ সদরের দক্ষিন ইসলামপুর এলাকার নুরুল আমিনের ছেলে তানভির হোসেন হৃদয় (১৬) মালপাড়া এলাকার সিরাজ মিয়ার ছেলে রিজভী (২০) মুন্সিগঞ্জ কলাপাড়া এলাকার হারাধর সাহার ছেলে আকাশ সাহা (১২) মুন্সিগঞ্জ কোর্টগাও এলাকার পখিনা (৪৫) একই এলাকার বিথী (১৮) ও তার এক বছরের মেয়ে আরিফা দোলা বেগম (৩৪) মুন্সীগঞ্জ সদর এলাকার আক্তার (২৪) মুন্সিগঞ্জ মোল্লাকান্দির সোলেমান বেপারী (৬০) ও তার স্ত্রী বেবী বেগম (৫৫) মুন্সীগঞ্জ মালপাড়া এলাকার সুনিত সাহা (৪০) তার ছেলে বিকাশ (২২) আকাশ সাহা (১২) মুন্সীগঞ্জ সদরের প্রতিমা শর্মা ((৫৩) মুন্সগিঞ্জের মোল্লাকান্দির চর কিশোরগঞ্জের শামসুদ্দিন (৯) ও তার স্ত্রী রেহেনা বেগম (৬৫) বরিশালের উটরা উজিরপুর এলাকার হাফিজুর রহমান (২৪) তার স্ত্রী তাহমিনা (২০) এক বছরের শিশুপুত্র আব্দুল্লাহ মুন্সীগঞ্জ দক্ষিন কেওয়ারের নারায়ণ দাস (৬৫) তার স্ত্রী পার্বতী দাস (৪৫) নারায়নগঞ্জ বন্দরের কল্যান্দী এলাকার আজমির (২) মুন্সিগঞ্জ সদরে শাহ আরম মৃধা (৫৫)একই এলাকার মহারানী (৩৭) ঢাকা শনিআখড়া এলাকার আনোয়ার হোসেন (৪৫) তার স্ত্রী মাকসুদা (৩০) তাদের ৭ মাস বয়সী মেয়ে মানসুরা, মুন্সীগঞ্জ সদরের ছাউদা আক্তার লতা (১৮) শরিয়তপুর নড়িয়া এলাকার আব্দুল খালেক (৭০) ঝালকাঠী কাঠারিয়া এলাকার জিবু (১৩) মুন্সীগঞ্জের খাদিজা বেগম ৯৫০) বন্দরে দক্ষিন সাবদী এলাকার নুরু মিয়ার ছেলে নয়ন (১৯) ও সাদিয়া (১১) মুন্সীগঞ্জ মদ্র কোন্ডাগাও এলাকার মতিউর রহমান কাজী ছেলে ইউসুফ কাজী, ঢাকা মিরপুর ১১ এলাকার সিরাজুল ইসলামের পুত্র সোহাগ হাওলাদার (২৩) মুন্সিগঞ্জের সদরের দক্ষিন ইসলামপুর এলাকার নুরুল আমিনের ছেলে তানবীর হোসেন হৃদয় (১৬) মালপাড়া এলাকার সিরাজ মিয়ার ছেলে রিজবী (২০)। পরে নিহতের স্বজনদের কাছে মৃতদেহ গুলো হস্তান্তর করা হয়।
জেলা প্রশাসনের গণশুনানি:
শীতলক্ষ্যা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনায় আগামী ৮ এপ্রিল ঘটনা স্থলের পশ্চিম পাড়ে গণশুনানি করবে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। সকাল ১০টায় ওই গণশুনানি শুরু হয়ে চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। গণশুনানিতে অংশ নিতে, সাক্ষ্য দিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে আসতে অনুরোধ জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। এছাড়া গণশুনানীতে লঞ্চ দুর্ঘটনায় মৃত যাত্রীদের আত্মীয় স্বজন বেঁচে যাওয়া যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো। বুধবার (৭ এপ্রিল) তদন্ত কমিটির আহব্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরা ববি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন। গত ৪ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টার দিকে বি আইডবিøউটিএ টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি সাবিত আল হাসানকে শহরের কয়লা ঘাট এলাকায় একটি কার্গো জাহাজ এসকেএল-৩ বেপরোয়াভাবে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে লঞ্চটি ডুবে যায়। লঞ্চের অনেকে সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও নিখোঁজ থাকেন অনেকে। পরে ৩৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ৫ এপ্রিল বিকালে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধারের পর অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। পরে লঞ্চ ডুবির ঘটনায় জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরী ববিকে আহবায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী ৫ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।