সিদ্ধিরগঞ্জ সংবাদদাতা:
গতকাল রোববার পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে বিএনপি ও জামায়াতের ৫৬ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা বিশেষ করে সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপি, জামায়াত ওহেফাজত নেতাকর্মীদের মাঝে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। বেশীরভাগ নেতাকর্মীই এলাকা ত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে। হেফাজতের ডাকা হরতাল ও মাওলানা মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে রাখায় হামলা, ভাঙচুর, আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধের ঘটনায় ১৭ মামলায় আরও ১৩ জনসহ মোট ৫৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে গত ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। দুই ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁ থানায় পুলিশ, র্যাব, সাংবাদিক, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পরিবহন মালিকরা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এসব মামলায় রোববার (১১ এপ্রিল) বিকেল পর্যন্ত ৫৬ জনকে গ্রেফতারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, বিভিন্ন থানা থেকে এ সকল আসামীদের ফেসবুকের পোস্ট, ভিডিও ফুটেজ ছাড়াও তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব মামলায় অন্য আসামিদেরও গ্রেফতারে পুলিশের বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং তাদের মধ্যে বিএনপি, জামায়াত, হেফাজতের নেতা-কর্মীরা রয়েছেন বলেও জানান তিনি। জানা গেছে, গত ২৮ মার্চ হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালের দিন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ, যানবাহনে ভাঙচুর, সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় র্যাব ও পুলিশ বাদী হয়ে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে সরকারি কাজে বাধা দেওয়াসহ নানা অভিযোগে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ছয়টি মামলা করে। হরতালের দিন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবহন মালিকদের আরও তিনটি মামলা ওই থানায় রুজু করা হয়। এইসব মামলায় এজাহারনামীয় ছাড়াও কয়েক হাজার অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এদিকে ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে হেফাজতের কেন্দ্রিয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে উপজেলার মোগরাপাড়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ, ওই রিসোর্ট ও আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় এক সাংবাদিককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে নির্যাতনের মুখে মামুনুল হকের কাছে ক্ষমা চাওয়াতে বাধ্য করার ঘটনাও ঘটে। এইসব ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, সাংবাদিক পৃথক আটটি মামলা দায়ের করে। সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁ থানায় দায়ের করা এই ১৭ মামলার কয়েকটিতে হেফাজতের কেন্দ্রিয় নেতা মামুনুল হককে প্রধান আসামি করে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত, হেফাজতের আরও কয়েকশ’ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ কয়েক হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
সোনারগাঁয়ে গ্রেফতার আতঙ্ক
সোনারগাঁয়ে হেফাজত নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যেই রয়েল রিসোর্টে গত ৩ এপ্রিল মামুনুল হক কান্ডে হেফাজতের নেতাকর্মীদের হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দায়েরকৃত ৬টি মামলায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরও ১০ হেফাজত কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার (১১ এপ্রিল) ভোর থেকে পুলিশের একাধিক টিম উপজেলার বিভি ন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে বলে জানিয়েছেন সোনারগাঁ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাফিজুর রহমান গ্রেফতারকৃতরা হলো, হেফাজতে ইসলামের কর্মী মোঃ মিন্টু (২৮), নবীর হোসেন (৩২), কবির হোসেন (৪৫), মাওলানা হাবিবুর রহমান (৩৪), হাফেজ আমজাদ হোসেন (৫৫), যোবায়ের আহম্মেদ (২১), মোঃ সোহাগ (২১), লোকমান হোসেন (৩২), শহীদুল ইসলাম (৩১) ও মোঃ হাসান (৩৫) কে গ্রেফতার করে। ঘটনার দিনের ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেফতারকৃতদের চিহ্নিত করা হয়। গ্রেফতারকৃত ১০ জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এনিয়ে ছয় মামলায় মোট ৫৬ জন হেফাজত নেতাকর্মী গ্রেফতার হলো।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।