Logo
HEL [tta_listen_btn]

জুডিশিয়াল ভবনে করোনা হাসপাতাল নেয়া হোক

জুডিশিয়াল ভবনে করোনা হাসপাতাল নেয়া হোক

নিজস্ব সংবাদদাতা:
পুরানো কোর্টের পাশে প্রায় ৫ বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে ৮ তলার জুডিশিয়াল আদালত ভবন। আইনজীবীরা সেখানে যেতে চান না বলে ভবনটি এখন পরিত্যাক্ত ভবনে রূপ নিতে যাচ্ছে। অথচ করোনা হাসপাতালে রূপান্তরিত ৩শ’ শয্যা হাসপাতালটির অবস্থা এখন লেজে গোবরে। ওইখানে সাধারণ কিংবা করোনা কোন রোগীরই চিকিৎসা সঠিকভাবে হচ্ছে না।এ কারণে অভিজ্ঞ মহল করোনা হাসপাতালটিকে জুডিশিয়াল ভবনে স্থানান্তরের দাবি তুলেছেন। দশটি আইসিইউ নিয়ে খানপুরে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ তিনশ’ শয্যা হাসপাতালকে নারায়ণগঞ্জ করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রুপান্তর করা হয়। একবছর পরে আইসিইউ সংখ্যা সেই দশটি-ই আছে। গত এক বছরে এ হাসপাতালে ষোলশত বিশজন করোনা রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। করোনা হাসপাতালে রুপান্তরের আগে এ হাসপাতালে এক দিনেই প্রায় আড়াই হাজারের বেশি সাধারণ রোগী নানা ধরনের চিকিৎসা পেতেন। সে হিসেবে বছরে (৬৫ দিন ছুটি ধরলে) প্রায় সাড়ে সাতলাখ মানুষ চিকিৎসা নিতেন। করোনা হাসপাতালে রুপান্তরের কারণে এক বছর ধরে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা বন্ধ। অন্যদিকে করোনায় আক্রান্তের তুলনায় নারায়ণগঞ্জ তিনশ’ শয্যা হাসপাতালের সক্ষমতাও কম। করোনার চিকিৎসার চাপ কুলাতে পারছেনা এই স্বল্প শয্যার হাসপাতাল। তাই দাবি উঠেছে নারায়ণগঞ্জের অব্যবহৃত আটতলা জুডিশিয়াল এডজস্ট্রেট ভবনটিকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রুপান্তরের। এতে একদিকে তিনশ শয্যা হাসাপাতালে সাধারণ রোগীরা আগের মতোই চিকিৎসার সূযোগ পাবেন। অন্যদিকে করোনা চিকিৎসার সক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে।নারায়ণগঞ্জ তিনশ’ শয্যা হাসপাতালের সুপারইনটেনডেন্ট ডাঃ এম এ বাশার জানান, গত বছর করোনার প্রাদূর্ভাব দেখা দেয়ার পর ১৪ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ তিনশ শয্যা হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রুপান্তর করা হয়। শুরুতে হাসপাতালে দশটি আইসিইউ’র ব্যবস্থা করা হয়। গত এক বছরে আর আইসিইউ বাড়েনি। গত এক বছরে এ হাসপাতালে মোট ষোলশত বিশজন করোনা রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতাল সুপার জানান, গত দশ-বারো দিন ধরে এ হাসপাতালে রোগীর চাপ অনেক বেড়েছে। হাসপাতালে মোট দশটি আইসিইউ বেড রয়েছে। শনিবার দশটি আইসিইউ’র মধ্যে নয়টিতেই রোগী ছিলেন। অন্যদিকে একশটি আইসোলেশন বেডের মধ্যে ৮৩টিতেই রোগী ছিলেন। আগের আইসোলেশন বেডে রোগী ছিলেন ৮৫ জন। এছাড়া পিসিআর ল্যাবে করোনা টেষ্টেরও ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে এখন দৈনিক পৌনে চারশ’ পরীক্ষা করা হচ্ছে। রয়েছে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা। গড়ে প্রতিদিন দেড়শ’র মতো মানুষকে হাসপাতালে টিকা দেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত হাসপাতালে মোট ১৩৫ জন মারা গেছে। এদের মধ্যে চৌষট্টি জন করোনা পজিটিভ, ৪৩ জন নেগেটিভ ও ৬৭ জন সাসপেকটেড ছিলেন। হাসপাতালে আইসোলেশনে ও আইসিইউতে থাকা অনেক রোগীর আত্মীয় হাসপাতালের ফ্লোরে অবস্থান করছিলেন। তাদের একজন আবু জাফর জানান, চিকিৎসা ভালোই। কিন্তু চাহিদার তুলনায় বেড কম হওয়ায় হাসপাতালে বেড পাওয়া খুবই কঠিন। বড় বড় ভিআইপিদের ধরে এখানে বেড পেতে হয়। কয়েকদিন আগেও অক্সিজেনের খুবই সংকট ছিলো। এমপি সেলিম ওসমান সাহেব বেশ কিছু অক্সিজেন সিলিন্ডার দেয়ায় সে সমস্যাটি কমেছে। কিন্তু বেডের সংখ্যা না বাড়ালে মানুষের প্রত্যাশা পূরন হবেনা। মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে এখান থেকে ফিরে যাচ্ছে, যাবেও। ‘নারায়ণগঞ্জ প্রায় এক কোটি মানুষের নগরী। করোনার প্রাদূর্ভাবের সময় এই একটি মাত্র হাসপাতালে অপ্রতুল। করোনা রোগীদের জন্য আরো আইসোলেশন বেড, আইসিইউসহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক সেবা দেয়া প্রয়োজন। কিন্তু হাসপাতালের সংস্কার কাজ চলতে থাকায় এখানে স্থান সংকট রয়েছে। তাই এখানে আর এসব সেবা বাড়ানো সম্ভব না।’ নারায়ণগঞ্জ তিনশ’ শয্যা হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রুপান্তর করার আগে এখানে আউটডোর ও ইনডোর মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতেন বলে জানালেন হাসপাতাল সুপার ডাঃ এম এ বাশার। অথচ ডাঃ বাশারের দেয়া তথ্যানুযায়ী-ই গত এক বছরে এ হাসপাতালে করোনা রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন মাত্র ষোলশত বিশজন। অর্থাত পুরো এক বছরের করোনা রোগীর সংখ্যা একদিনের অন্যান্য রোগীর সংখ্যার চাইতেও কম। বিষয়টি সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সহ-সভাপতি রফিউর রাব্বি বলেন, ‘গতবছর নারায়ণগঞ্জে বেসরকারি একটি হাসপাতালের আইসিইউ থাকলে এ বছর তা-ও নেই। চিকিৎসার অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে। এখন নারায়ণগঞ্জবাসির জন্য তিনশ’ শয্যা হাসপাতালই ভরসা। তাই এখানে আইসিইউ ১০ টির জায়গায় ১০০টি ও আইসোলেশন বেড ১০০ টির জায়গায় চারশটি করা দরকার। খানপুর হাসপাতাল করোনা ডেডিকেটেড করায় সাধারণ রোগীরা চিকিৎসা থেকে ব্যাপকভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। এর সমাধানের জন্য নারায়ণগঞ্জের পুরাতন কোর্ট এলাকায় অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা আট তলা জুডিশিয়াল আদালত ভবনকে জরুরি ভিত্তিতে করোনা হাসপাতালে রুপান্তর করা প্রয়োজন। এতে সুবিধা যেটা হবে এতে আইসিইউ সংখ্যা ও আইসোলেশন বেড সংখ্যা তিন চারগুণ বাড়ানোর মতো জায়গা এখানে রয়েছে। অন্যদিকে করোনা হাসপাতাল এ ভবনে চলে আসলে তিনশ শয্যা হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা আগের মতোই করা যাবে।’ ২০১৬ সালে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ ভবনটি নির্মাণ করা হয়। এ ভবন থেকে নতুন আদালত ভবন প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে হওয়ায় আইনজীবিরা এখানে আসতে চাননা। ফলে নির্মাণের পর থেকে প্রায় পাঁচ বছর ধরে এ ভবন অব্যবহৃত পড়ে আছে। এ প্রসঙ্গে, নারায়ণগঞ্জ তিনশ’ শয্যা হাসপাতালের সুপার ডাঃ বাশার বলেন, অব্যবহৃত জুডিশিয়াল আদালত ভবনে করোনা হাসপাতাল গড়ে তোলার প্রস্তাবটি আমিও অনেকবার দিয়েছি। সে ব্যাপারে এখন রাজনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Theme Created By Raytahost.Com