Logo
HEL [tta_listen_btn]

নড়াইল জেলা বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ, জেলা কমিটির বিলুপ্তি চান তৃণমূলের নেতাকর্মীরা

নড়াইল জেলা বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ, জেলা কমিটির বিলুপ্তি চান তৃণমূলের নেতাকর্মীরা

মোঃ জিহাদুল ইসলাম, নড়াইল :

নড়াইল জেলা বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। জেলা বিএনপির মেয়াদউর্ত্তীণ কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটিও দেয়ার দাবি তাদের। নড়াইল জেলা বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইশতিয়াক হোসেন মঞ্জুসহ দলীয় নেতাকর্মীদের স্বাক্ষরিত প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে মেয়াদউর্ত্তীণ কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে আরো স্বাক্ষর করেছেন-বিএনপি নেতা রেজাউল খবির, ফজলুল হক ফয়েজ, সৈয়দ হারুণ অর রশিদ, সৈয়দ মোরশেদ তৌহিদ সোহেল, খন্দকার কিয়ামুল হাসান, শাহজাহান সিদ্দিকী টিটুসহ অনেকে। দলীয় নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটিতে সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম এবং সাধারণ সম্পাদক পদে মনিরুল ইসলামের নাম ঘোষিত হয়। প্রায় দেড় বছর কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন কমিটি গঠিত হয়নি। এতে ত্যাগী নেতারা দীর্ঘদিন ধরে কোনো মূল্যায়ন পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তারা। এদিকে, মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গত ১৮ মে তিনটি উপজেলা ও পৌর বিএনপিসহ সাতটি শাখার আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি, কোনো আলোচনা ও পরামর্শ ছাড়াই জেলা বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকের সুবিধামত সাতটি শাখার আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দাবি, এই কমিটিতে যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করে ‘পকেট কমিটি’ ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটি ঘোষণার পর গত ২২ মে দুপুরে নড়াইলের কালিয়া এলাকায় জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। কালিয়া পৌর বিএনপির নেতা ওমর ফারুক, সিহাব উদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, সেলিম রেজা ইউসুফ, আমস্ট্রাং সরদার, জেলা কৃষক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম রেজাউল করিম, জেলা বিএনপির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনসহ ২৫ জন নেতার স্বাক্ষরিত প্রেনবিজ্ঞপ্তিতে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। কালিয়া বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, এই কমিটি গঠনের ব্যাপারে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অবগত নন। অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অবৈধ ভাবে নিজস্ব বলয় তৈরির জন্য জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম তাদের পকেটের লোক দিয়ে কমিটি গঠন করেছেন। তৃণমূল ও পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কেন্দ্র ঘোষিত কোনো কর্মসূচী পালনে জেলা বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকের দেখা পাওয়া যায় না। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলার রায়ের প্রতিবাদসহ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম এবং সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে তেমন কোনো কর্মসূচী পালিত হয়নি বলে অভিযোগ করেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এছাড়া জেলা বিএনপির কার্যালয় থাকলেও খোলা হয় না বলে জানান তারা। এতে দল ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বিগত দিনে ছাত্র ও যুবদলের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। অপরদিকে, ২০১৮ সালের ২০ এপ্রিল জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলমের নড়াগাতি থানার খাশিয়ালস্থ গ্রামের বাড়িতে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে আলোচনা সভায় পুলিশ উপস্থিত হলে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদক নেতৃবৃন্দকে রেখে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সময় আটক করা হয় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা প্রয়াত কবির মুরাদ এবং খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ অনেক নেতাকর্মীকে। পদবঞ্চিত ত্যাগী নেতারা আরো জানান, বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের নির্দেশনা ছিল-জেলা কমিটির প্রথম সারির পাঁচ নেতার মতামতের ভিত্তিতে কমিটি গঠনসহ সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য। কিন্তু, সেই নির্দেশনা না মেনে গত ১৮ মে উপজেলা ও পৌর বিএনপির সাতটি শাখার ‘পকেট কমিটি’ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া নড়াইল জেলা বিএনপির সভাপতি-সম্পাদক কর্মীবান্ধব নয়, এমন অভিযোগ করে পদবঞ্চিতরা বলেন; তাদের প্রতি আমাদের কোনো আস্থা নেই। মেয়াদ উর্ত্তীণ এই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে প্রকৃত নেতৃত্বসুলভ কর্মীবান্ধব নতুন জেলা কমিটি দেয়ার দাবি করছি। এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বঞ্চিত নেতাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, যোগ্যদের নিয়েই সাতটি শাখার আহবায়ক কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটিতে আপনাদের কে কে বাদ পড়েছে, তাদের কথা বলুন? আর বর্তমান পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে এবং পুলিশি বাঁধায় দলীয় অনেক কর্মসূচী করতে পারি না। কার্যালয় খুলতে গেলে পুলিশ বাঁধা দেয়। তারপরও আমরা অনেক কর্মসূচী পালন করে থাকি। এছাড়া নেতাকর্মীদের নামে মামলাসহ বিভিন্ন বিপদে আমরা (সভাপতি ও সম্পাদক) সবসময় তাদের (নেতাকর্মী) পাশে থাকার চেষ্টা করি। বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম বিগত দিনে ছাত্র ও যুবদলের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না, দলীয় নেতাকর্মীদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি বলেন; ১৯৮৭ সাল থেকে ছাত্রদলের রাজনীতি শুরু করি। এরপর বিভিন্ন পর্যায়ে ছাত্রদলের পদে ছিলাম। জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সাতটি আহবায়ক কমিটিতে যোগ্যদেরই মূল্যায়ন করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ ঠিক নয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Theme Created By Raytahost.Com