নিজস্ব সংবাদদাতা:
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে গলায় ছুরি দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে করা মামলার আসামিরা বাদীকে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাও আসামিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে চার্জশিটে দুই আসামিকে বাদ দিয়েছেন বলেও অভিযোগ বাদীর। এই ঘটনায় জেলা পুলিশ সুপার ও থানা পুলিশের ওসির কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছেন তিনি। গত ১ মার্চ রাতে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের গ্যারেজের ভেতর চৌকিতে ঘুমন্ত অবস্থায় মোঃ মাসুদ (২৭) নামে ইজিবাইক চালকের গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করা হয়। গুরুতর জখম মাসুদের ভাই বিদ্যুৎ মিস্ত্রী আব্দুল মালেক বাদী হয়ে গ্যারেজ মালিক মোঃ সুলতান (৩৮) ও ইজিবাইক চালক মোঃ রিয়াজকে (৩৪) আসামি করে মামলা করেন। আসামিরা জামিনে বেরিয়ে এসে বাদীপক্ষকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। মামলা তুলে না নিলে প্রাণনাশেরও হুমকি দেন বলে অভিযোগ বাদীর। মামলার বাদী আব্দুল মালেক বলেন, আমার ভাই সুলতানের গ্যারেজের ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। ইজিবাইক চালানোসহ বিভিন্ন ঘটনায় পূর্বে তাদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়েছে। এই দ্ব›েদ্বর জের ধরেই আসামি সুলতান, তার গ্যারেজের ইজিবাইক চালক রিয়াজসহ আরও কয়েকজন মিলে ঘুমন্ত অবস্থায় আমার ভাইয়ের গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করে। মামলার পর গ্যারেজ থেকে রক্তাক্ত মশারি, বিছানার চাদর উদ্ধার করে পুলিশ। জানতে পারি এই ঘটনায় সুলতান ও রিয়াজের সাথে জালাল ও সাহাবুদ্দিনও (তারাও সুলতানের গ্যারেজের রিকশাচালক) যুক্ত আছে। পুলিশ সুলতান, রিয়াজ ও জালালকে গ্রেফতারও করে। তবে তারা বেরিয়ে এসে বাদীপক্ষকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। মামলার বাদী বলেন, ‘মামলা তুলে না নেওয়ায় আমার ও আমার ছোট ভাইয়ের নামে সুলতান তার গ্যারেজের রিকশাচালক জাহিদের স্ত্রীকে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে আদালতে মামলা করিয়েছে। অথচ যেই নারীর কথা বলা হয়েছে তাকে আমি বা আমার স্ত্রী কখনও দেখেও নি। মামলার আইও (তদন্তকারী কর্মকর্তা) আমাদের সহযোগিতা করছে না। আসামিদের পক্ষ হয়ে মিমাংসা করার জন্য কাগজে স্বাক্ষরও নিতে চেয়েছিলেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম।’ তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ মে মামলার চার্জশিট আদালতে প্রদান করেছেন তিনি। মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামিকেই তাতে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আসামিপক্ষকে সুবিধা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে তাদের মাধ্যমে যেনেছি, বাদীপক্ষরও ঝামেলা আছে।’ তবে মামলার চার্জশিট প্রদান করা হয়েছে, সে বিষয়ে অবগত নন বলে জানান বাদী আব্দুল মালেক। তিনি বলেন, ‘আমি আপনার কাছ থেকে জানলাম চার্জশিটের কথা। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাথে নিয়মিত মামলার অগ্রগতি জানতে চাইলেও তিনি চার্জশিটের কথা আমাকে জানাননি। মামলায় উল্লেখিত দুই আসামি ছাড়াও আরও মানুষ এই ঘটনায় যুক্ত আছে। এই চার্জশিটের বিরুদ্ধে আমি নারাজি দেবো। আমি সঠিক ও সুষ্ঠু তদন্ত চাই এবং ন্যায় বিচার চাই।’ যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া সাজনু বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের কিছু কুলাঙ্গার সন্তানরা জেলার উন্নয়ন বন্ধের জন্যে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। হেফাজত যখন সমাবেশ ডেকেছিল নারায়ণগঞ্জে তখন তাদেরকে যুবলীগ প্রতিহত করেছিল। ঠিক তদ্রæপ সেই নামধারী শ্রমিক নেতা ইসমাইলকে নারায়ণগঞ্জ থেকে উৎখাত করে জননেত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনকৃত সেই ক্যান্সার হাসপাতল প্রতিষ্ঠিত করবোই।’ এদিকে পুনর্বাসনের দাবিতে শ্রমিকরা রাস্তায় নামলে তাদের পেটানো হবে বলে হুমকি দেন নাসিকের ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা শফিউদ্দিন প্রধান। তিনি বলেন, ‘শ্রমিক নেতা ইসমাইল গং’দের যেখানে পাবো ওইখানেই তাদের পিটাবো। যারা নারায়ণগঞ্জ শহরে উন্নয়নের কাজে বাধা দিতে চায় তাদের কোনো ছাড় নেই। এই হাসপাতাল হতেই হবে ইনশাল্লাহ।’উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জে কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স এন্ড ক্যান্সার রিসার্চ (কেআইআইএমএস কেয়ার) স্থাপন করা হবে। গত ১৪ ফেব্রæয়ারি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। এই প্রকল্পের আওতাধীন ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণের জন্য ঈশা খাঁ সড়কের নারায়ণগঞ্জ ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের পাশের উত্তর কুমুদিনী বাগানের জায়গা নেওয়া হবে। এজন্য এই বাগানের আড়াইশ’ শ্রমিককে তাদের বাসস্থান ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা অধিকাংশই কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের বেঙ্গল বিডি লিমিটেডের জুট প্রেসের শ্রমিক। তাদের পূর্বপুরুষরাও এই কারখানার শ্রমিক ছিলেন। দীর্ঘদিনের শ্রমিকদের প্রাপ্য পাওনা পরিশোধ এবং পুনর্বাসনের দাবিতে আন্দোলন করছে শ্রমিকরা।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।