নিজস্ব সংবাদদাতা:
নারায়ণগঞ্জ সদর থানাধীন পুরাণ সৈয়দপুর কয়লাঘাট ও সৈয়দপুর কড়ইতলা পাঠাননগর পশুর হাট জমে উঠেছে। শনিবার (১৭ জুলাই) সকাল থেকেই হাটে দেশি-বিদেশি নানা জাতের গরুর পাশাপাশি ছাগলও বিক্রি হচ্ছে। তবে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি মানছেন না ক্রেতা-বিক্রেতাসহ দর্শনার্থীরা। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে গাফিলতি। অনেক ক্রেতা-বিক্রেতাসহ দর্শনার্থীদের মুখে মাস্ক পড়তে অবহেলা লক্ষ্য করা গেছে। তবে মিডিয়াকর্মীদের দেখে অনেককে আবার তারাহুরা করে মাস্ক পড়তে দেখা গেছে। দুপুরে সদর উপজেলার অন্যতম বড় পশুর হাট ঐতিহাসিক কয়লাঘাটে প্রচুর গরু ও মানুষের ভিড় দেখা গেছে। তবে ক্রয়-বিক্রয় চলছে টুকিটাকি। বড় বড় গরুর পাশাপাশি ছাগল, মহিষও ছিল হাটে। কেউ ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন, আবার কেউ বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে আসছেন। কেউ আবার অপেক্ষায় কাঙ্খিত দামে আদরের পশু বিক্রির। তবে অনেক ত্রেতাদেরকেই দাম নিয়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করতে দেখা গেছে। এদিকে ইজারাদারের পক্ষ থেকে বার বার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মাইকিং করা হচ্ছে। তারপরও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না কেউ। সিরাজগঞ্জ জেলার শাহাদাতপুর থেকে ১৪টি গরু নিয়ে কয়লাঘাট হাটে এসেছেন ব্যাপারি আরমান হোসেন। তিনি বলেন, বড় ও মাঝারি ষাঁড় মিলে মোট ১৪টি গরু নিয়ে হাটে এসেছি। আমার মনেহয়, এ হাটের সবচেয়ে বড় ও মোটাতাজা গরু আমার এই কালাবাহার। এ গরুর দাম সাড়ে ৮ লাখ টাকা। ক্রেতারা ৬ লাখ পর্যন্ত দাম বলছে। কিন্তু আমি এত কমদামে গরু বিক্রি করবো না। ক্রেতারা দাম ছাড়তে চাচ্ছেন না। তাই অনেকটা চিন্তিত আছি। এ গরুকে মোটা তাজা করতে আমার ৫-৬ লাখ টাকার উপরে খরচই হয়েগেছে। এখন যদি ন্যায্য দাম না পাই, তাহলে আমার অনেক লোকসান হয়ে যাবে। গরু ক্রেতা সেলিম কালাচাঁন বলেন, হাটে আসলাম। অনেকক্ষণ ঘুরে দেড় লাখ টাকা দিয়ে কালো রংয়ের একটি গরু ক্রয় করেছি। সাধ্যের মধ্যেই গরুর দাম পেয়েছি, তাই বেশি দরাদরি করতে হয়নি। মানুষ বলছে আমি এ গরুটি কিনে জিতেছি। তাদের কথাশুনে আনন্দ লাগছে। এদিকে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে মাস্ক না পড়ার কারণ জানতে চাইলে ক্রেতা-বিক্রেতারা নানা অযুহাত দেখাতে শুরু করেন। আবার কোন কোন গরুর ব্যাপারিরা বলেন, মাস্ক পড়ে গরু কেনাবেচা হয় না। কয়লাঘাট হাট থেকে সামান্য কিছুটা দূরে সৈয়দপুর কড়ইতলা পাঠাননগর হাট। এই হাটেও প্রচুর দেশি-বিদেশি নানা জাতের গরুর পাশাপাশি ছাগলও লক্ষ্য করা গেছে। হাটে ২৭টি গরু নিয়ে মাস্ক ছাড়াই আছেন স্বাধীন নামে এক ব্যবসায়ী। মাস্ক পরেননি কেন, জানতে চাইলে বলেন- মাস্ক আছে। পানি আনতে গিয়েছিলাম। তাই মাস্ক খুলে রেখেছি। এইতো মাস্ক পড়ছি। তিনি দুইটি গরু ৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন বলেও জানান। পাঠাননগর হাটের সর্বোচ্চ মূল্যের গরু সোয়া ৪ লাখ টাকায় একটি ষাঁড় দাম হাকা হয়েছে। গরুটির ৬ থেকে ৭ মণ ওজন হবে বলে ব্যাপারি রহিম মিয়া জানান। তিনি বলেন, আমি মোট ৪টা গরু এনেছি। সবগুলো গরুই ৩-৪ লাখের উপরে। এ হাটে গরু কিনতে আসা আশিকুর রহমান ও জাহিদ জানান, কোরবানির পশু কেনার জন্য হাটে এসেছেন। কিন্তু বিক্রেতারা গত বছরের চেয়ে এ বছর পশুর দাম অনেক বেশি চাচ্ছেন। ফলে সামর্থ অনুযায়ী, পশু কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আরও এক-দুইদিন হাটে যাবো। যদি দাম কিছুটা কমে তাহলে ভালো, নাহলে বেশি দামেই কিনতে হবে। হাট কর্তৃপক্ষ বলেন, আমরা স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত ও মাস্ক পরানোর জন্য অনেক চেষ্টা করছি। আমরা হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ মাস্কও রেখেছি। তবে কেউ মানছেন, আবার কেউ মানছেন না। আসলে অনেক লোকের সমাগম হলে একটু কষ্টসাধ্য ব্যাপার সবকিছু মানানো। এদিকে হাট পরিদর্শনে আসা স্থানীয় গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নূর হোসেন সওদাগর জানান, হাট খুব সুন্দরভাবে চলছে। কোন প্রকার বিশৃঙ্খলার খবর আমরা আপাতত পাইনি। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বার বার অনুরোধ করা হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ পাইকাররাই স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে অবহেলা করছেন। তবুও হাট কর্তৃপক্ষ বার বার মাইকিং করছেন এবং তাদের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করছেন। আমি এ হাটের ব্যবস্থাপনা দেখে সন্তুষ্ট।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।