নিজস্ব সংবাদদাতা:
পাণের ছোঁয়া লেগেছে নারায়ণগঞ্জের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। শিক্ষার্থীদের কলতানে মুখর শিক্ষাঙ্গন। দীর্গ দেড়বছর পর শিক্ষাঙ্গনে এমন দৃশ্য দেখা গেলো। দশম শ্রেণীর ছাত্রী সানজিদা আক্তার মন্তব্য করলেন এভাবে- প্রথমে ভয় লাগছিলো, তবে এতো বন্ধুদের এক সাথে পেয়ে এখন আর ভয় লাগছে না। মনে হচ্ছে ঈদের মতো সবাই এক সাথে আনন্দ উপভোগ করছি। টানা দেড় বছরেরও বেশি সময়পর রোববার (১২ সেপ্টেম্বর)নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয় খোলায় শিক্ষার্থীরা যেন প্রাণ ফিরে পেল। দীর্ঘদিন পর স্কুলে এসে স্কুলের মাঠে ছোটাছুটি করছে শিক্ষার্থীরা। এ যেনো শিক্ষার্থীদের এক আত্মতৃপ্তি। নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীর ঔশী আক্তার বলেন, অনেকদিন পর স্কুলে আসছি তাই অনেক ভালো লাগছে। সব বন্ধুরা অনেকদিন পর একসাথে হয়েছি। এতো ভালো লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না। অনুভূতিটাই ভিন্ন।
নারায়ণগঞ্জে প্রায় সবকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নেয়া হয়েছে আলাদা স্বাস্থ্য সুরক্ষা। গঠন করা হয়েছে স্বাস্থ্য সচেতনতা জন্য আলাদা টিম। রয়েছে একটি করে আইসোলেশন কক্ষ। যদি কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে যায়, তাৎক্ষণিক তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষমোঃ কামরুল ইসলাম জানান, করোনা মহামারি কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল এন্ড কলেজ একটি ঐতিহ্যবাহী স্কুল। করোনার মধ্যেও আমরা চেষ্টা করেছি। শিক্ষার্থীদের কাছে যতটুকু সম্ভব শিক্ষার আলো পৌঁছে দেয়া। নারায়ণগঞ্জে আমরা সর্ব প্রথম অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছি, ইউটিউবে নিয়মিত ক্লাসের ভিডিও আপলোড করেছি। ইতিমধ্যে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ভিডিও ক্লাস আমরা আপলোড করেছি। তিনি বলেন, আমাদের স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করেছি। গেট থেকেই তাদের মাস্ক পরিয়ে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে। হ্যান্ড সেনিটাইজার, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রক মেশিনসহ সকল স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। আশা করি ভালো ভাবেই আমরা পাঠদান পরিচালনা করতে পারবো। নারায়ণগঞ্জের অন্যতম একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে সরেজমিন দেখা যায়, বিদ্যালয়ের চার পাশের ভবন জুরেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। আনন্দ উল্লাসে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে। স্কুলের মাঠ, বারান্দা, ক্লাস রুম গুলোতে যেনো প্রাণ ফিরে এসেছে। মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছে, তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। শিশুদের মনে আমরা আনন্দ দেখতে পেয়েছি, এটা শিক্ষকদের জন্যও বড় আনন্দ। আমরা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছি। মাস্ক পরিধান করে স্কুলে প্রবেশ করা, হেন্ড সেনিটাইজার দিয়ে জীবানুমুক্ত করাসহ। সকল নিয়মই আমরা যথাযথ পালন করছি। তিনি বলেন, আমরা আজ প্রত্যাকটা শিক্ষার্থীকেই ফুলের শুভেচ্ছা দিয়ে বরণ করেছি। আজ কলেজ শাখার ক্লাস চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি মাধ্যমিকের কিছু শ্রেণীর ক্লাস আমরা করিয়েছি। এসএসসি পরিক্ষার্থী, এইচএসসি পরিক্ষার্থী ২০২১ ও ২০২২ সালের এবং ৫ম শ্রেণীর ক্লাস শুরু করেছি। আমাদের বিভিন্ন শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন সচেতনাতা মূলক পরামর্শ দিচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি সাধারণ পরামর্শ ছিল-শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে এলেই যেন সবকিছু খুলে দেওয়া হয়। গেল সপ্তাহজুড়ে আমাদের গড় শনাক্তের হার ১০ শতাংশের নিচে ছিল, তবে তা ৫ শতাংশের কাছাকাছি নয়। তারপরও অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়েই সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেওভোগে ২৬,২৭ নং লক্ষীনারায়ণ বালক বালিকা সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তাপসী সাহা বলেন, আমরা সরকারের বিধিনিষেধ যথাযথ পালনের মধ্যে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছি। আজকে প্রথম দিনে মোটামুটি ভালো উপস্থিতি ছিলো শিক্ষার্থীদের। এছাড়া আমরা শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ রেখেছি। তাদের কোনো ভাবে হতাশ হতে দেয়নি। যার ফলে খুব আনন্দ নিয়েই ক্লাস করাতে পারছি।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন জানান, বিগত একসপ্তাহ ধরে আমরা স্কুল খোলার প্রস্তুতি নিয়েছি। আজ আমরা প্রত্যকিটা শিক্ষার্থীকে গোলাপ ফুল দিয়ে বরণ করেছি। স্কুলে ঢোকার আগে আমরা মাস্ক নিশ্চিত করেছি, হ্যান্ড সেনিটাইজ করেছি। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দশম শ্রেণীর ক্লাসের পাশাপাশি একটি নতুন শ্রেণীর ক্লাস করার সুযোগ করে দিয়েছি। এছাড়া আমাদের স্কুলে একটি আইসোলেশন রুম করা হয়েছে। যদি কোন শিক্ষার্থী অসুস্থবোধ করে। তাহলে তাকে তাৎক্ষনিক আইসোলেশন রুমে নেয়া হবে। নারায়ণগঞ্জ প্রিপারেটরী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল বারী এ প্রতিবেদককে জানান, স্কুল খোলায় শিক্ষার্থীরা আনন্দ নিয়ে ক্লাস করছে। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছি। প্রত্যাকটা শিক্ষার্থীকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ক্লাস করানো হচ্ছে। এছাড়া আমরা একটি আইসোলেশন কক্ষ বানানো হয়েছে। আশা করি নিরাপদেই শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকবে। নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, নারায়ণগঞ্জে সকল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্কুল গুলোতে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রথমিক শিক্ষা অফিসার পরিদর্শন করেছেন। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এখন পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছে এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে আসেনি। এছাড়া উপস্থিতি সন্তোষজনক রয়েছে। সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাস্ক হ্যান্ড সেনিটাইজারসহ সমস্ত স্বাস্থ্য উপকরণ রয়েছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।