Logo
HEL [tta_listen_btn]

আদালতের নিষেধাজ্ঞা মানা হয়নি বলে দাবি দোকান মালিকদের রহমতউল্লাহ্ ইনস্টিটিউট ভাঙ্গার দায় কার

আদালতের নিষেধাজ্ঞা মানা হয়নি বলে দাবি দোকান মালিকদের রহমতউল্লাহ্ ইনস্টিটিউট ভাঙ্গার দায় কার

নিজস্ব সংবাদদাতা:
আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও রহমতউল্লাহ্ মুসলিম ইনস্টিটিউট ভবন ভাঙ্গার দায় কে নেবে? ৪২ জন দোকান মালিকে পথে বসিয়ে মেয়র আইভীর নির্দেশে নিমিষেই ভবনটি গুঁড়িয়ে দেয়া হয় বলে দোকানীদের অভিযোগ। প্রতিদিনের মতোই দোকান খুলেছিলো ব্যবসায়ীরা। করছিলেন বেচা-বিক্রিও। কিন্তু হঠাৎ করেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা শুরু করে দেয় সেই দোকান ভাঙ্গচুর। এতে তরিঘড়ি করে মালামাল নিয়ে রাস্তায় বসতে হয় ব্যবসায়ীদের।২০১৯ সালের ২০ জুনের সেই স্মৃতি মনে হলে এখনও চোখে পানি চলে আসে নগরীর ২নং রেল গেট এলাকার রহমতউল্লাহ্ মুসলিম ইনস্টিটিউট ভবনের দোকান মালিক জীবন সরকারের।২ বছর পর এখন জীবন সরকারের ভাষ্য, আমাদেরও বাবা মা ভাই বোন আছে, সংসার আছে। দোকানের আয় থেকেই ছেলে মেয়েকে ভালো স্কুলে পড়াতাম। এখন সব কিছুই স্বপ্নের মতো মনে হয়। যে ভাবে বেঁচে আছি, সেটা বেঁচে থাকা নয়। জীবন সরকারের মতো ‘রহমতউল্লাহ্ মুসলিম ইনস্টিটিউট ভবন’ এ আরও ৪২ জন দোকান মালিক ছিলেন। ‘তাদের দু’চার জন ছাড়া প্রায় সকলেরই জীবন-মান এখন ছন্ন-ছাড়া’, বলছেন সেই মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি বাবুল চোখদার। তিনি বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই ভাবি, আদালত আমাদের আবারও সেই স্বপ্ন যুগে ফিরিয়ে দিবে। আশায় বুক বেধে আছি ভালো খবরের। ভাবছি আবারো চালু করতে পারবো কনফেকশনারী। জমজমাট বেচাবিক্রী করে পরিবারের আর্থিক সংকটা গুছিয়ে নিতে পারবো।বাবুল চোখদার ও জীবন সরকারের দাবি, ‘আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও রহমতউল্লাহ্ মুসলিম ইনস্টিটিউট ভবন ভেঙ্গে দিয়ে তাদের সর্বহারা করেছেন মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।তিরিশের দশকে তৎকালীন নারায়ণগঞ্জে মুসলিম সম্পদ্রায় অনেকটাই করুণ অবস্থায় ছিল। চাকুরি, ব্যবসা, বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অনগ্রসরে সংখ্যা গরিষ্ঠ হওয়ার পরে পিছিয়ে ছিল মুসলমানরা। সেই দুর্দিনে এস রহমতউল্লাহ নামের একজন আইসিএস অফিসার নারায়ণগঞ্জের প্রথম মুসলিম মহকুমা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তাঁর সক্রিয় সাহায্য সহযোগিতা ও সাহসিকতায় পৌরসভার লীজ কমিটি থেকে চিরস্থায়ী লীজ নিয়ে ১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠত হয় ‘রহমতউল্লাহ্ মুসলিম ইনস্টিটিউট’। এরপর ৪৭ সালের মুসলিম আন্দোলন, ৫২ এর ভাষা আন্দেলন, ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ৬ দফা, ৬৯ এর গণ অভ্যুথান ও ৭১ এর স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। যেখানে বাংলার ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের পদাচরণ হয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত এ প্রতিষ্ঠানটি বাঙালী ও বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ।সেই প্রতিষ্ঠানটি মেয়র আইভীর একক সিদ্ধান্তে ২০১৯ সালের ২০ জুন সিটি করপোরেশনের দু’টি ভেকু ও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের দিয়ে তিনতলা ভবনটি মুহূর্তের মধ্যে গুড়িয়ে দেয় হয়। অভিযোগ আছে, ‘স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার কোন রকম আপিল না করে এমন কান্ড ঘটানো হয়’।
ভুুক্তভোগি ও মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে পৌরসভার দায়িত্বে থাকার সময় এ ঐতিহ্যের প্রতিষ্ঠানটি ভাঙ্গার চেষ্টা করে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয় সেলিনা হায়াত আইভীর বিরুদ্ধে। সেই সময়ই ভবনটির উচ্ছেদের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে একটি রীট (১৫২৮/২০০৮) করা হয়। উচ্চ আদালত রীটের প্রেক্ষিতে ভবনটিতে কোন রকম উচ্ছেদ কার্যক্রম না করতে ১০ দিনের অন্তবর্তীকালিন নিষেধাজ্ঞা জারি করে। একই বছরের ৯ মার্চ নারায়ণগঞ্জ চতুর্থ সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে শুধু মাত্র সেলিনা হায়াত আইভীকে বিবাদী করে ভবনটি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা করা হয় (মামলা নং-২৩/২০০৮)। এই মামলায় ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর যাবতীয় শুনানী শেষে মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে ডিক্রি হয়, রহমত উল্লাহ ইনস্টিটিউট ভাঙ্গা বা বিবাদীদের বেদখল করার বিষয়ে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো। সেই স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার কোন রকম আপিল না করেই মেয়র আইভীর ২০১৯ সালের ২০ জুন ভবনটি ভেঙ্গে দেয়। এ ঘটনায়ও মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে ‘আদালতের নির্দেশ অবমাননা’র মামলা বর্তমানে চলমান রয়েছে। একই সাথে ক্ষতিপূরণের দাবিতে, আরেকটি মামলাও চলমান রয়েছে।রহমতউল্লাহ্ মুসলিম ইনস্টিটিউটের দোকান মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জীবন সরকার বলেন, এই ভবনের দোকান গুলোতে আমরা বৈধ ভাবেই ছিলাম। আইনের প্রতি আস্থা রেখে আদালতের দ্বারস্তও হয়েছি। আদালত আমাদের পক্ষে নির্দেশও দিলেন। তারপরেও পুলিশ কিংবা ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াই মেয়র আইভীর একক নির্দেশে আমাদের দোকান গুলো ভেঙ্গে দিলো সিটির পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। মালামাল বেড় করারও সময় দেওয়া হলো না। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসেও মনে হয়, আমরা পরাধীন কোন দেশে বাস করছি। কী দোষ করে ছিলাম আমরা। এ দেশে কী আইন নাই, নাকি মেয়র আইভী আইনের ঊর্ধ্বে। প্রশাসনের উচ্ছেদে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট থাকে না? কোন দেশের নিয়মে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা এই দোকান গুলো উদ্ধার করলো?ভুক্তভোগীদের পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েল ও বর্তমান সভাপতি মোহসিন মিয়া জানান, শহরের ২নং রেলগেট এলাকার রহমতউল্লাহ মুসলিম ইনস্টিটিউট ভবন গত ২০১৯ সালের ২০ জুন ভেঙে দেয় সিটি করপোরেশন। এ নিয়ে দোকান মালিকদের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের মামলা চলছিল। এ ভবন ভাঙতে আদালতের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু তারপরও ভবন ভেঙে দেয়ায় বিষয়টি আদালতে গড়ায়। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার অভিযোগে মেয়র আইভীসহ অন্যদের বিরুদ্ধে সমন জারি করা হয়েছিল। করোনাকাল চলে আসায় সেই সময় মামলাটি প্রক্রিয়াগত কাজ বন্ধ ছিল। কিন্তু মামলাটি চলমান। উল্লেখ্য, মুসলিম সংস্কৃতি চর্চার জন্য ১৯৩৯ সালে ‘রহমত উল্লাহ মুসলিম ইনস্টিটিউট’ টিনের ঘরে যাত্রা শুরু করে। ১৯৪২ সালের ২৭ অক্টোবর তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা রহমত উল্লাহ ইনস্টিটিউটকে চিরস্থায়ী লিজ প্রদান করেন। স্বাধীনতার আগে ও পরে এখানে নাটক, সঙ্গীত, আবৃত্তিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। পরবর্তীতে এখানে টিনের ঘরের পরিবর্তে ৩ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়। গঠনতন্ত্র মতে এ ইনস্টিটিউটের সভাপতি হলেন- নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক এবং প্রধান উপদেষ্টা নারায়ণগঞ্জ৫ আসনের সংসদ সদস্য যিনি থাকবেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Theme Created By Raytahost.Com