নিজস্ব সংবাদদাতা:
২০১৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভি বলেছিলেন, ‘শীতলক্ষ্যায় ব্রিজ পেতে হলে আমাকে ভোট দিতে হবে। আবার নির্বাচিত হওয়ার পরে ২০১৮ সালে এক অনুষ্ঠানে মেয়র বলেছিলেন, ‘শীঘ্রই শীতলক্ষ্যার ব্রিজের কাজ শুরু হবে। এরপর এক কিংবা দুই নয়, পুরো ৫টি বছর কেটে গেছে। এসময়ে শীতলক্ষ্যার ব্রিজের একটি ইটের গাথুঁনিও দেখেনি কেউ। বন্দর এলাকার বাসিন্দারা জানান, ‘আবারও নির্বাচন এসে গেছে। অথচ, মেয়র আইভীর সেই শীঘ্রই শেষ হচ্ছে না। কাগজে কলমে ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর ৫৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর ৫নং গুদারাঘাট এলাকায় ব্রিজ নির্মাণের অনুমোদন দেয় একনেক। দৈর্ঘ্য আনুমানিক ১ হাজার ৩শ’ ৮৫ মিটার ধরা হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের তত্ত¡াবধানে ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালের ৩০ জুন। কিন্তু ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসেও ব্রিজের নির্মাণ কাজের কিছুই চোখে পড়েনি। নির্বাচনকে সামনে রেখে চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট অনুষ্ঠানে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘আরও ৩ মাস পূর্বেই ব্রিজের কাজের উদ্বোধন হয়ে যেতো। কিন্তু একটু সমস্যার কারণে করা সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ শহরকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছে শীতলক্ষ্যা নদী। পশ্চিম পাশে সরকারি অফিস, আদালত ছাড়াও বিসিক শিল্পাঞ্চল, রপ্তানীমুখী নীট গার্মেন্টস শিল্প, পাইকারি বাজার-আড়ৎ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য খাতের প্রতিষ্ঠান গুলোর অবস্থান। নানাবিধ শিল্প এবং স্পিনিং ফ্যাক্টরিতে সমৃদ্ধ হয়েছে। তাই দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের জন্য নদীর পূর্বপাড়ের সাড়ে ৩ লাখ মানুষকে সার্বক্ষণিক নদী পারাপার হতে হয়। নদী পারাপারে নৌ-দুর্ঘটনায় প্রতি বছর প্রাণহানি ঘটে এবং বহু লোক আহত হয়। বন্দরবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল একটি ‘ব্রিজ’। স্বাধীনতার পর সে দাবি আরও জোড়ালো হতে থাকে। ১৯৯৩ সালে বন্দরের কদম রসূল অঞ্চলকে পৌরসভা গঠনের পর পৌরসভার চেয়ারম্যানরাও একই প্রতিশ্রæতি দেন। ২০১১সালে সিটি করপোরেশন গঠনের পর মেয়র প্রার্থীরাও সেই প্রতিশ্রæতি দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার করেছেন। যে তালিকায় সেলিনা হায়াৎ আইভী অন্যতম। এ বিষয়ে বন্দর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কমল খান বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন গত এক দশকে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে যে কাজ (পার্ক, লেক) গুলো করেছে। সেগুলো জনগণের তেমন কাজে আসছে না। সে টাকার মধ্য থেকে মাত্র ৫শ’ কোটি টাকা হলেই একটা ব্রিজ করা সম্ভব হতো। কিন্তু করা হয়নি। জনগণের আকাঙ্খাখিত বলে এটাকে ইস্যু বানিয়ে জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনী বৈতরণী পার করেন। নির্বাচিত হওয়ার পর ভুলে যান, নির্বাচন আসলে প্রতিশ্রæতি দেওয়া শুরু করেন।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।