Logo
HEL [tta_listen_btn]

দেড় যুগ ধরে উল্টো পথে হাঁটছেন মেয়র আইভী  নাগরিকসেবা পায়নি সিটিবাসী

দেড় যুগ ধরে উল্টো পথে হাঁটছেন মেয়র আইভী  নাগরিকসেবা পায়নি সিটিবাসী

নিজস্ব সংবাদদাতা:
প্রায় দেড় যুগ ধরে পর্যায়ক্রমে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন মেয়রের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের মূল শহরের কোন নজরকাড়া উন্নয়ন তিনি করতে পারেন নি। গত প্রায় দেড় যুগ নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে সিটিবাসী। মেয়র হাঁটছেন উল্টো পথে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারা দেশে উন্নয়নের মহাসড়কে, সেখানে রাস্তা-ড্রেন আর কিছু স্থাপনা গড়ে উঠলেও নারায়ণগঞ্জ নগরীবাসীর জীবন-মানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। বরং, ধীরে ধীরে ফুলেফেঁপে উঠেছে ওই সংস্থার চার পাশের মানুষের অর্থ-ভাগ্য। আর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। বলছি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ও দায়িত্বে থাকা মেয়রের কথা। দেশ স্বাধীনের পর প্রথমে ২ দফা আলী আহাম্মদ চুনকা পরে একবার নাজিম উদ্দিন মাহমুদ পৌরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৮৮ থেকে ২০০২ সাল, দীর্ঘ ১৬ বছর নারায়ণগঞ্জ পৌরসভাটি প্রশাসকদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে। পরবর্তীতে সেবার মান বৃদ্ধি করতে ২০০৩ সালে পুনরায় নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বাবা প্রয়াত আলী আহাম্মদ চুনকার নামে, আওয়ামী লীগের ঐক্যে ও বিএনপির দ্ব›েদ্বর সুবিধা নিয়ে জয় পান ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। ২০১১ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবেই দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে সিটি কর্পোরেশন হলে আবারও তিনিই নির্বাচিত হন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত এই নগরীর দায়িত্ব পালন করেছেন। দেড় যুগ হলো নগরের অভিভাবকত্ব করছেন। নগর এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পরিকল্পিত নগর উন্নয়ন, নাগরিক সুবিধার উন্নয়ন, পরিচ্ছন্ন নগরী, স্বাস্থ্য সেবা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এমন কৌশলগত উদ্দেশ্য উল্লেখ থাকলেও গত ১৮ বছরে কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে? যতটুকু উন্নয়ন হওয়া কথা, তা কী হয়েছে? কিংবা উন্নয়নের সুফল কতটুকু ভোগ করছে নগরবাসী? এমন প্রশ্নের উত্তর মিলে ‘না’। নগরবাসীর হতাশা ছাড়া পযন কিছুই করার নেই। অথচ, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বঙ্গবন্ধু কণ্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারা দেশে অভাবনীয় উন্নয়ন করছেন। নারায়ণগঞ্জের জন্যও পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করছেন। কিন্তু যাদের হাতে দায়িত্ব, তাদের অহমিকা আর ব্যক্তি স্বার্থের চিন্তায় জনগন কাংখিত সেবা বা সুফল থেকে বঞ্চিত। এমনটাই মেয়র আইভীর নিজ দলের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে আমজনতার অভিযোগ।
অবকাঠামোগত উন্নয়ন
সবুজ গাছপালা আর ছোট ঘরে বেশ জনপ্রিয় ছিল নগরী পৌর পাঠাগার। সেই ১৯২৯ সাল থেকে নগরবাসীর জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ গঠন ও দেশীয় সংস্কৃতি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সাবেক পৌরসভার চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ চুনকা পৌর পাঠাগারটি ১ম তলা থেকে ২য় তলায় উন্নীত করেন। তখনও মানুষের সমাগম ছিল বেশ। আর ২৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে বর্তমানের ৬ তলা আধুনিক ভবনে রয়েছে অডিটোরিয়াম, বসার স্থান, উন্মুক্ত গ্যালারী কিন্তু পূর্বের সেই মানুষের সমাগম নেই। নেই সর্বমহলের আনাগোনা। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এতো টাকা ব্যয়ে কী পেল সাধারণ নগরবাসী? সেই সাথে ফুটপাত দখলের অভিযোগ তো রয়েছেই। একই ভাবে প্রায় এক দশক ধরে শতকোটি টাকা ব্যয়ে পার্ক নির্মাণ হচ্ছে নগরীতে, কিন্তু প্রবেশ সংরক্ষিত। প্রশ্ন উঠেছে, এতো সময় কী লাগার কথা? শহওে বড় বড় মার্কেট ও আবাসিক ভবন নির্মাণ হচ্ছে। অনেকটায় নেই পার্কি, পরিকল্পনার হীন রূপ মোটা দাগে প্রশ্ন জাগায়। সেই সাথে অভিযোগ আছে, নির্দিষ্ট কিছু মানুষের সুযোগ-সুবিধা বেশি পাওয়ার।
সড়ক যেন নদী  সিটি কর্পোরেশনের ওয়েবসাইটে পরিকল্পিত নগর উন্নয়নের বিভিন্ন কথা লেখা রয়েছে। হয়তো লেখা রয়েছে খাতা কলমেও। কিন্তু বাস্তবে কতটুকু পরিকল্পিত; সেটা এই নগরবাসীর হাড়ে-হাড়ে টের পান। যখন একটু বৃষ্টি হলেই নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কে জমে যায় পানি। একই ভাবে অর্ধ ঘন্টার বৃষ্টি হলে দেওভোগ, গলাচিপা, মাসদাইর এলাকা পরিনত হয় জলাভুমিতে। আর সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দরের কিছু এলাকাতো বসবাস করাই কষ্টের হয়ে উঠে। গত ১৮ বছরে এই নগরীর দায়িত্বে রয়েছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। যিনি বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তার দলেরই নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সাধারণ সম্পাদক খোকান সাহা। সম্প্রতি নগরীর একটি রাস্তায় হাটু পানিতে দাঁড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার একটি ছবি প্রকাশ হলে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনকে ব্যাপক নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
অপরিচ্ছন্ন নগরী
পৌরসভা থাকাকালীন নারায়ণগঞ্জের প্রায় প্রতিটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে ডাস্টবিনের বক্স ছিল। মানুষের সেবার মান বৃদ্ধি করতে বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সালে পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশন করার পর এই সেবার মান আরও বৃদ্ধি পাওয়ার কথা ছিল। অথচ, উল্টো হয়েছে। এখন মূল রাস্তার বেশ কযেকটি স্থানে সিটি কর্পোরেশন থেকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে ময়লা ফেলতে। পিচ ঢালা সড়কে আরসিসি ঢালাই করে দেয়া হয়েছে, সেখানেই উন্মুক্ত স্থানে ময়লা-আর্বজনা ফেলাতে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে সেই ময়লা অপসারণ। তাতে যানজটেরও সৃস্টি হয়। এছাড়া ময়লা অপসারণের জন্য প্রতিবছর নগরবাসীর থেকে ট্যাক্স আদায় করা হলেও নগরীর বাসাবাড়ির ময়লা গুলোও নেওয়া হয় না। নগরবাসীকে এ সেবা নিতে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে ১ থেকে ২ শত টাকা প্রতি মাসে দিতে হয়। আবার সেই ময়লাও গুরুত্বপূণ সড়কের দুই পাশেসহ খাল ও নদীতে ফেলা হয়। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কৌশলগত অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন। সম্প্রতি সময়ে করোনা ভাইরাস চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এই খাতটিতে নারায়ণগঞ্জ নগরীর অবস্থান কোথায়। গত দেড় বছর ধরে চলমান করোনা ভাইরাসে জেলায় সবচেয়ে বেশি রোগীর মৃত্যু ও শনাক্ত হয়েছে এই সিটি কর্পোরেশন এলাকাতেই। সরকারের নানা পদক্ষেপ ও কাউন্সিলরদের ব্যক্তিগত উদ্যোগ ছাড়া বাস্তবতা হচ্ছে কোন সেবাই পায়নি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নামক এই সংস্থার কাছ থেকে। করোনা ভাইরাসের মতো অন্যান্য সেবাও তেমন একটি চোখে পড়ে না। অথচ, সরকার প্রচুর অর্থ সহায়তা ও পর্যাপ্ত টিকার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নগরবাসী কাংখিত সেবা পায় না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Theme Created By Raytahost.Com