Logo
HEL [tta_listen_btn]

দুপুরেও সরে না সিটির ময়লা নাক চেপে চলতে হয় সিটিবাসীকে

দুপুরেও সরে না সিটির ময়লা নাক চেপে চলতে হয় সিটিবাসীকে

নিজস্ব সংবাদদাতা
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (এনসিসি) প্রধান সড়কের ময়লা দুপুর গড়িয়ে গেলেও পরিষ্কার না করায় পথচারীদের নাক চেপে চলতে হয়। বিগত ১৮ বছর যাবত এ অবস্থা চলে আসলেও মেয়র আইভীর চোখে এ দৃশ্য পড়ে না।শিল্প অধ্যুষিত নারায়ণগঞ্জ সিটিতে বাড়ির পাশের ডোবা, নালায় গৃহস্থলির ময়লা ফেলার পথ বহু আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কৃত্রিম উপায়ে অপসারণ করা হয় গৃহস্থালির আবর্জনা। এরও সর্বোচ্চ ব্যবহার হয় না। এতে বর্জ্য নিরসণের কাজ হয় আংশিক। তাতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, ছড়াচ্ছে জীবানু, বাড়ছে স্বাস্থঝুঁকি। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে চলা ময়লা সমস্যা এই নগরীকে বসবাসের অনুপযোগী করে তুলছে। গত এক সপ্তাহে দিনে ও রাতের বিভিন্ন সময়ে এই নগরীর বিভিন্ন স্থান পর্যবেক্ষণ করে এমন ভয়ঙ্কর চিত্র পাওয়া যায়। নিয়ম হচ্ছে, বর্জ্য জমা করে সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত স্থানে ফেলবে নগরবাসী। সেই ময়লা সকাল ৮টার মধ্যে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা সংগ্রহ করে নিবেন সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে। এরপর সেখান থেকে বাছাই পর্ব শেষে চলে যাবে ল্যান্ডফিল্ডে বা ডাম্পিং জোনে। পুরো এই প্রক্রিয়ার কোথাও কোনো ব্যত্যয় ঘটলেই সৃষ্টি হয় ময়লা জট। আর তাই ঘটছে, বছরের পর বছর। দিনে ও রাতের বিভিন্ন সময়ে নগরীর মূল সড়ক গুলোতে দেখা যায়, রাস্তার উপরেই নারায়ণগঞ্জে উম্মুক্ত ভাবে ৩৪টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন করা হয়েছে। এছাড়াও সড়কের আরও প্রায় ২৪১টির অধিক স্থানে রাত ৯টার পর থেকে বাজার, হোটেল আর দোকানীরা (গৃহস্থালি ব্যতিত) ময়লা ফেলে। সেই ময়লা ভোর পর্যন্ত উপচে রাস্তার চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। ভোর থেকে সকাল ৮টার মধ্যে ময়লা অপসারণের কথা থাকলেও কখনো কখনো দুপুর গড়িয়ে যায়। কোন রকম বাছাই ছাড়াই সেই ময়লা শহীদ নগরের ল্যান্ডফিল্ডে বা ডাম্পিং জোনে খোলা স্থানে ফেলে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। সকাল থেকে দুপুর-এ পুরো সময় জুড়েই নাক ঢেকে চলাচল করতে হয় স্কুল, কলেজ, অফিস আদালতগামী নগরবাসীকে। কোন কোন স্থানে একদিন পর পর ময়লা অপসারণ করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. আলমগীর হিরণ বলেন, ‘সিটির ৩ অঞ্চলে প্রায় ১২ শত পরিচ্ছন্ন কর্মী কাজ করে। শহরের ৩৪টিসহ ৩ অঞ্চলে মোট ১০৪টি স্থান ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এর বাহিরেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে মলয়া পড়ে রাস্তায়। সকাল ৮টার মধ্যে নেওয়ার নিয়ম থাকলেও সেটা আমরা পারি না। এটা আমাদের ব্যর্থতাই বলতে পারেন। আর গৃহস্থালির ময়লা টাকার বিনিময়ে নিয়ে যায় এনজিও গুলো। মডেল কর তফসিল, ২০১৬ তে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ হারে কর আদায় নির্ধারণ করে দিয়েছে। পার্শ্ববর্তী শহর গাজীপুর সিটিতে সেবা দিতে না পাড়ায় মাত্র দু’টি অঞ্চলে ১ শতাংশ হারে ট্যাক্স নেয় আর ৬টি অঞ্চলে বর্জ্য নিরসনে কোন ট্যাক্সই নেয় না। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ সেবা দিতে না পরলেও সর্বোচ্চ নির্ধারিত ট্যাক্স ৭ শতাংশই নিচ্ছেন। অথচ, সর্বোচ্চ ময়লা কর দিয়েও এই নিয়মের সুফল পাচ্ছে না নারায়ণগঞ্জ সিটির বাসিন্দারা। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে চলা বর্জ্যর অব্যবস্থাপনার এই নগরী আবর্জনার নগরীতে পরিণত হয়েছে। আর পুরো শহরটিই যেন উন্মুক্ত ময়লার ভাগার।, মধ্য বয়সী অসিত কুমার সাহা এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি প্রতিদিন সকালে উকিল পাড়া-নারায়ণগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন এলাকায় আসি পূজার ফুল নিতে। কিন্তু খোলা ময়লার দুর্গন্ধের জন্য অস্বস্তিবোধ করি। কখনো ময়লা জমে থাকে, আবার কখনো ময়লা পরিস্কার করতে দেখি পরিচ্ছন্ন কর্মীদের। এটা আসলে নগরবাসীকে এক ধরণের হয়রানি করা হয়। ট্যাক্স নেয়ার সময় ঠিকঠাক নেয়, কিন্তু সার্ভিস দেয়ার সময় ব্যাপক অবহেলা। এটা অমানবিক। গত এক সপ্তাহে দিনে ও রাতের বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধু সড়কের চাষাঢ়া, কালির বাজার, ব্যাংকের মোড়, উকিলপাড়া, ২নং রেলগেট, ডিআইটি, মন্ডলপাড়া, নিতাইগঞ্জ হয়ে মিনা বাজার। এরপর টানবাজার থেকে নবাব সিরাজউদ্দোলা সড়ক হয়ে ১নং রেল গেট, ফলপাট্টি, চারারগোপ, কালির বাজার, বিআইডবিøউটিসি’র কার্যালয়, মেট্রো সিনেমা হলের মোড় হয়ে ঈশা খাঁ সড়ক ও নবাব সলিমুল্লাহ সড়কে ডনচেম্বার, মিশনপাড়া থেকে হকার্স মার্কেট পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে মূল সড়ক জুড়ে প্রায় আড়াইশ’ স্থানে ময়লার স্তুপ আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আবর্জনায় নগরীকে ময়লার ভাগারই মনে হবে যে কারো। আর মূল সড়কেরই যখন এমন হাল, তখন ২৭টি ওয়ার্ডের অলি-গলির চিত্র কতটা করুণ হতে পারে সহজেই অনুমেয়। নগরীর বিশিষ্টজনদের দাবি, ‘শুধু গলাবাজি করে তো আর টিকে থাকা যায় না। দেড় যুগে আইভী নগরীর দায়িত্বে, তথাকথিত অগ্নিঝড়া বক্তব্যে নগরবাসীকে বোঁকা বানিয়ে রাখবে আর কত? পরিচ্ছন্ন বাসযোগ্য শহর গড়তে না পারার ব্যর্থতা তাকে স্বীকার করতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Theme Created By Raytahost.Com