দেশের আলো রিপোর্ট
খালের ২ পাড়ে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে বাড়িঘর, ছোট-বড় শিল্পকারখানাসহ অসংখ্য স্থাপনা। খালের উপরেও তৈরি করা হয়েছে দোকান। খালের অংশ বিশেষ ভরাট করে যে যেভাবে পেরেছে দখল করছে। খালের পার্শ¦বর্তী এসব দোকান আর বাসাবাড়ি থেকে খালে প্রতিনিয়তই ফেলা হচ্ছে ময়লা-আর্বজনা। খালের কালচে রঙের পানি ছড়াছে দুর্গন্ধ। দিনে দিনে অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে খালটি। ইতোমধ্যে খালের পানি প্রবাহ প্রায় বন্ধ বললেই চলে। দখলের পর খালের যেটুকুমাত্র অবশিষ্ট রয়েছে, সেটুকুও যেন ময়লার ভাগাড়। হঠাৎ করে দেখলে মনে হবে সড়কের উপর ময়লার আবরণ। কিন্তু আসলে খালটি এখন ময়লার ডাম্পিং পয়েন্টে রূপ নিয়েছে। এতে খালের পানি নিষ্কাশণ ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফলে বৃষ্টি হলে দুর্ভোগে পড়ে খালের আশপাশের মানুষ। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা ইউনিয়নের পানি নিষ্কাশনে অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ এই খালটির নাম নলখালী খাল। কিন্তু নলখালী খালের এই চিত্রই বলে দেয় এবারের বর্ষায় এই ইউনিয়নের জলাবদ্ধতার পরিস্থিতি কেমন হতে পারে। অপরিকল্পিতভাবে বর্জ্য ফেলায় জলাবদ্ধতা নিরসনের অন্যতম এই হাতিয়ার দিনে দিনে পানি নিষ্কাশনে গলার কাটা হয়ে উঠছে। প্রতিবছর পানি নিষ্কাশনের অভাবে সামান্য বৃষ্টিতেই ফতুল্লায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন ফতুল্লার লাখ লাখ নিবাসী। এদিকে খালটি ডিএনডি প্রকল্পের আওতাধীন হওয়ায় সেনাবাহিনী খালের কিছু অংশ বেকু দিয়ে পরিষ্কার করছে। কিন্তু যেখানে বেকু প্রবেশ করতে পারে না সেখানে বর্জ্যে সয়লাব হয়ে পড়ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতে, সেনাবাহিনী খাল পরিষ্কার করলেও কিছুদিনের মধ্যেই খালটি বর্জ্যে পরিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ভুক্তভোগী কাঠেরপুল এলাকার বাসিন্দা নুরুল আমিন বলেন, ময়লায় ভর্তি হয়ে গেছে খালটা। খাল পাড়ের মানুষরা ময়লা বর্জ্য সংগ্রহকারীদের না দিয়ে খালে ফেলে। আর খালগুলো নিয়মিত পরিষ্কারও করা হয় না। একটু বৃষ্টি হলেই পুরো ফতুল্লার রাস্তাগুলো হাঁটু পর্যন্ত ডুবে যায়। খালের পাশের রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে কষ্ট হয়, ঘরে পানি ঢুকে। লামাপাড়ার বাসিন্দা গৃহ শিক্ষক নাদিয়া বলেন, আমি এখানে পড়াতে আসি। দুর্গন্ধের কারণে এই রাস্তার দিয়ে চলাচল কষ্টকর। আশেপাশের মানুষদেরও সচেতন হওয়া দরকার। গৃহস্থালী ময়লা বর্জ্য সংগ্রহকারীদের দেওয়া উচিত। এটা না করে অনেকেই খালে ময়লা ফেলে দেয়। খাল ময়লাতে ভরে গেছে। বৃষ্টি আসলেই এই দিকের রাস্তার করুণ অবস্থা হয়। খালের পাশর্^বর্তী বাজার ও স্থানীয়দের বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা নিয়মিত এখানে ফেলা হচ্ছে। এতে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে খালটি। ময়লার স্তূপ এমন আকার ধারণ করেছে যে, সেখানে এখন আর পানি প্রবাহ দূরের কথা খালটি নালায় পরিণত হয়েছে। যদিও ক্ষোভ প্রকাশ করে বেশ কয়েকজন স্থানীয়রা জানান, ইউনিয়ন থেকে ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট কোনো স্থান নির্ধারিত না করায়, নিয়মিত ময়লা সংগ্রহকারীরা বর্জ্য সংগ্রহ করে না। উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী খালে ময়লা ফেলে। আবর্জনার কারণে খালটি এখন ভরাট প্রায়। অতি দ্রæত প্রদক্ষেপ না গ্রহণ করা হলে এই বর্ষায় মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতে পারে তারা মনে করেন। ফতুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপন এ বিষয়ে বলেন, আমাদের ইউনিয়নের ময়লা ফেলার স্থায়ী ডাম্পিং স্পটের ব্যবস্থা হয়নি। এ কারণে এখানের বাসিন্দারা ময়লা খালে ফেলে। তবে আমরা বর্জ্য সংগ্রহকারীদের কাছেই বর্জ্য দেওয়ার জন্য সকলকে বলেছি। নলখালী খালটি ডিএনডি প্রজেক্টের আওতায় থাকায় এই খাল পরিষ্কার কিংবা খালে কোন ধরনের কাজ করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। এ কারণে আমি খালে কোন ধরনের পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা আমার আওতায় নেই। সেনাবাহিনী পরিষ্কার করছে কিন্তু সব জায়গায় বেকু না যেতে পারায় তারাও সব জায়গার ময়লা পরিষ্কার করতে পারছে না। জলাবদ্ধতার নিরসনে আমরা ইতিমধ্যে আমাদের আওতায় প্রতি ওয়ার্ডে একটি কমিটি গঠন করছি। এই কমিটি ড্রেন পরিষ্কারসহ সকল এলাকায় সচেতনামূলক প্রচারণা করবে।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।