নিজস্ব সংবাদদাতা
ট্রেনের হাতল ধরতে গিয়ে হাত ফসকে চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন সরকারি তোলারাম কলেজের এক শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার (২৮ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেল পথের নারায়নগঞ্জগামী ট্রেনে ইসদাইর এলাকায় ওই দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত শিক্ষার্থীর নাম নুর হোসেন (১৮)। সে সরকারি তোলারাম কলেজের এইচএসসির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ফতুল্লার দাপা ইদ্রাকপুর শৈলপুরা এলাকার মৃত রাজু মিয়ার ছেলে বলে জানা গেছে। নিহত নূর হোসেনের বন্ধু ও নারায়ণগঞ্জ কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষর্থী স্বাধীন শেখ জানান, সকাল ৯টা ১০ এর ট্রেনের টিকিট কেটে আমরা ফতুল্লা স্টেশনে অপেক্ষা করি। কিন্তু আমাদের ট্রেন আসে ১০টা ১০ মিনিটে। আমরাঠাসাঠাসি করে ট্রেনে উঠি। প্রচুর ভিড় থাকায় ট্রেনের ভিতরে না গিয়ে দরজার সামনেই দাঁড়াই। তিনি আরও জানায়, ট্রেন ইসদাইরের সামনে আসলে ট্রেনের এক হাতল থেকে অন্য হাতলে ধরতে গিয়ে হাত ফসকে, রেলওয়ে পাশে রাখা ঢালু পাথরের উপর পরে যায় নূর। ঢালু থাকায় সাথে সাথে ট্রেনের নীচে গিয়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
এদিকে, প্রিয় সহপাঠীর মৃত্যুতে তোলারাম কলেজে শোকের ছায়া বিরাজ করছে। নিহত নূরের মরদেহ তোলারাম কলেজ প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তোলারাম কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ নিহত নূরের অকাল মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় শোক প্রকাশ করেছেন।হাবিবুর রহমান রিয়াদ জানান, মঙ্গলবার (২৮ জুন)ট্রেনে একটি দুর্ঘটনায় আমাদের তোলারাম কলেজের ইন্টার ফাস্ট ইয়ারের মেধাবী ছাত্র নূর হোসের ইন্তেকাল করেছেন। আমি তোলারাম কলেজের সকল ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করছি। বাদ যোহর নূরের জানাজা নামাজ সম্পন্ন করে আলীগঞ্জ তার নিজস্ব এলাকায় তাকে দাফন করা হবে। আমরা নিহত নূরের মাগফেরাত কামনা করছি।
মায়ের আহাজারি
পাঁচ মাসের গর্ভে সন্তান রেখে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমান শাহিনূরের স্বামী রাজু মিয়া। নিজের সুখকে বিসর্জন দিয়ে গর্ভের সন্তানের সুখের কথা চিন্তা করে দ্বিতীয়বার বিয়ে করার চিন্তা করেননি তিনি। সেই শাহিনূরের ঘরে জন্ম নেয় একটি ছেলে সন্তান। নিজের শাহিনূর নামের সাথে নাম মিলিয়ে সন্তানের নাম রাখে নূর হোসেন। প্রথমে বিভিন্ন বাসা এবং পরে গার্মেন্টেস চাকরি করে সন্তানকে লালন করে মা। কিন্তু স্রষ্টার কি খেলা, ১৮ বছর বয়সে সেই সন্তানকেও হারাতে হলো। মঙ্গলবার (২৮ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেল পথের নারায়ণগঞ্জগামী ট্রেনে ইসদাইর এলাকায়, ট্রেনের হাতল ধরতে গিয়ে হাত ফসকে চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন সরকারি তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থী নুর হোসেন (১৮)। সে সরকারি তোলারাম কলেজের এইচএসসির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। ফতুল্লার দাপা ইদ্রাকপুর শৈলপুরা এলাকার মৃত রাজু মিয়ার ছেলে বলে জানা গেছে। জানা যায়, সরকারি তোলারাম কলেজের মেধাবী ছাত্র ছিলেন নূর হোসেন। মায়ের সাথে ফতুল্লা দাপা ইদ্রাকপুর ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন তিনি। মা শাহিনূর বেগম একটি গার্মেন্টেস চাকরি করে সংসার ও ছেলের পড়াশোনার খরচ বহন করতেন। মায়ের কষ্টকে ভাগ করে নিতে রাতে নির্মাণাধীন ভবনের নৈশ্বপ্রহরীর চাকরি করতেন নূর হোসেন। রাতে নাইট গার্ডের চাকরি দিনের বেলা কলেজে ক্লাস করতেন। মা এবং ছেলে পরিশ্রমের অর্থের সমন্বয়ে চলতো তাদের সংসার। সন্তানের মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে আসে শাহিনূর বেগম। সন্তানের লাশের পাশে একাধিবার অজ্ঞান হয় এই সন্তান হারা মা। কান্না জড়িত কন্ঠে শাহিনূর বেগম বলেন, আমার একটাই পোলা, আমি ওরে ছাড়া কেমনে বাচুম (বাঁচবো)। কোনদিন কষ্ট করতে দেই নাই। বাপটা মরার পর গার্মেন্টেস কাম কইরা পোলারে পড়ালেখা করাইছি। এখন ওরে ছাড়া আমি কিভাবে থাকমু। আমার পোলাডাও আমারে একা কইরা দিলো। নিহত নূরের দূর সম্পর্কের নানা সাইদ হোসেন জানান, জন্মের আগেই স্বামী মারা গেছে আমার ভাগ্নির। পোলাডা নিয়া অনেক স্বপ্ন আছিলো মাইডার। এখন পোলাডাও চইল্লা (চলে) গেলো। অনেক ভালো ছিলো পোলাডা। কোন বাজে নেশা বাজে আড্ডা দিতো না। অনেক পরিশ্রম করতো। নূরের ইচ্ছা আছিলো, পড়াশোনা করে মাকে সুখে রাখবে। আর স্বপ্ন পূরণ হইলো না।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।