দেশের আলো রিপোর্ট
বাসার গৃহিণীদের জন্য কোন সুখবর দিচ্ছেন না নারায়ণগঞ্জের তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। গোটা নারায়ণগঞ্জ জুড়েবিগত ১ মাস ধরেই তীব্র গ্যাস সংকট চলছে। আগে দিনের কোনো না কোনো সময় গ্যাস মিললেও এখন প্রায় একেবারেই গ্যাস পাচ্ছেন না শহরের বাসিন্দারা। এ নিয়ে দফায় দফায় তিতাসের আঞ্চলিক কার্যালয় ঘেরাওসহ স্মারকলিপি দিলেও ভোগান্তি থেকে উত্তরণ ঘটছে না। জানা গেছে, শহরের বাবুরাইল, পাক্কারোড, দেওভোগ আখড়া, পালপাড়া, ভূঁইয়ারবাগ, নন্দীপাড়া, আমলাপাড়া, গলাচিপা, কলেজ রোড, জামতলা, উত্তর চাষাঢ়া, মাসদাইর, পূর্ব ইসদাইর, মিশনপাড়া, খানপুর, মেট্রো হল, দক্ষিণ সস্তাপুর, সস্তাপুর, কাঠেরপুল ও তল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। এসব এলাকার মানুষ সময়মতো রান্না করতে পারছেন না। শহরের গলাচিপা এলাকার বাসিন্দা শেখ মো. আমান বলেন, আগে দিনের কোনো না কোনো সময় গ্যাস মিললেও এখন সারাদিনই পাওয়া যাচ্ছে না। সকালে বাসা থেকে না খেয়ে বের হতে হয়। দুপুরেও বাসায় গিয়ে খেতে পারি না। রাতেরটা খেতে হয় ১২টায়। কিন্তু মাস শেষে ঠিকই বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। বিল না দিলে আবার লাইন কেটে দেয়। এভাবে চলতে থাকলে রাস্তায় নামা ছাড়া উপায় থাকবে না। শহরের দেওভোগ এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা সকালে খেয়ে স্কুলে যেতে পারছে না। প্রতিদিনই বাইরে থেকে নাস্তা কিনতে হচ্ছে। কিন্তু এভাবে কতদিন চলতে পারবো। সবসময় বাইরে থেকে নাস্তা কেনার সামর্থ্য নেই। খুব সীমিত আয়ে আমাদের দিন পার করতে হয়। একই এলাকার গৃহবধূ আকলিমা বেগম বলেন, ১৫ দিন ধরে তীব্র গ্যাস সংকট চলছে। আগে দুপুরে সামান্য গ্যাস পাওয়া যেতো। এখন সেটাও পাওয়া যায় না। বিকাল সাড়ে ৫টা পর কিছুটা গ্যাস থাকলেও সন্ধ্যার পর পর তা একেবারেই কমে যায়। রাত ১১টার আগের গ্যাসের খোঁজ থাকে না। তবে গ্যাস না থাকলেও বিল দিতে হয়েছে। এ সমস্যার সমাধান কোথায়? এদিকে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবিতে শহরের বিভিন্ন এলাকার লোকজন ঐক্যবদ্ধ হয়ে একের পর এক স্মারকলিপি দিচ্ছেন। সর্বশেষ বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শহরেব চাষাঢ়ায় তিতাস গ্যাস কার্যালয়ে নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক বিপণন ডিভিশনের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমানের হাতে বিভিন্ন এলাকার প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। এসময় মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন, আমাদের হয় গ্যাস দেয়া হোক না হয় গ্যাস বিল মওকুফ করে দেয়া হোক। কর্তৃপক্ষ যেহেতু সমস্যার কথা বলছে তাহলে অন্তত দিনে বা রাতে সময় নির্ধারণ করে ২ ঘণ্টা সময় করে গ্যাস দেয়া হোক। যাতে আমরা কোনো রকম খেয়ে বেঁচে থাকতে পারি। এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (এনসিসি) ১৫নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহের দাবিতে বিভিন্ন পঞ্চায়েত কমিটি, ব্যবসায়ী নেতা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা গ্যাস অফিসের উপমহাব্যবস্থাপকের কাছে স্মারকলিপি দেন। এসময় এনসিসির ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস বলেন, ১ সপ্তাহ ধরে টানবাজার, মিনা বাজার, নিমতলা, বংশাল, মÐলপাড়া, আর কে দাস রোড, ওল্ড ব্যাংক রোড, ছোট ভগবানগঞ্জ, নয়ামাটি, চেম্বার রোড, পুরাতন পালপাড়াসহ ওয়ার্ডের বেশিরভাগ বাসাবাড়িতে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। এতে জনগণের রান্নার কাজে বিঘœ হওয়ায় পারিবারিক জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর আবাসিক চুলায় পর্যাপ্ত গ্যাসের দাবিতে অরাজনৈতিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’র উদ্যোগে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এ ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হয়। ঘেরাও কর্মসূচি শেষে নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের আঞ্চলিক বিপণন বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. মামুনার রশীদের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এসময় আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি নূর উদ্দিন আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জে জ্বালানী গ্যাসের সংকট চলছে। সংকট সমাধানে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও কোনো উদ্যোগ নি। তিতাস কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণেই গ্যাসের এই অবস্থা। তাদের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন মন্টু বলেন, আগে রাত ১১টার পর গ্যাস থাকলেও এখন গভীর রাতেও গ্যাস পাওয়া যায় না। গ্যাসের দাবি জানালেই কর্মকর্তারা অবৈধ সংযোগসহ সিস্টেম লসের অজুহাত দেখায়। তারা কিছুদিন পর পর গ্যাসের দাম বাড়ান আমরা তা মেনে নেই। কিন্তু গ্যাস না দিলে তা মেনে নেবো না। গ্যাসের অভাবে দৈনন্দিন কার্যক্রম স্থবির হয়ে গেছে। এ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। অনতিবিলম্বে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবেক সাবেক সভাপতি এড. মাহবুবুর রহমান বলেন, গ্যাসের দাবিতে শুধু অবস্থান ধর্মঘটই নয়, হরতালও ডাকব। আর সেই হরতালের নেতৃত্ব দেবে আমাদের মা-বোনেরা। এদিকে গ্যাস সঙ্কট নিরসনের দাবি জানিয়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান। চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ তিতাস গ্যাসের আঞ্চলিক বিপণন বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. মামুনার রশিদ। তিনি বলেন, আমরা তার এ চিঠি গ্রহণ করে ইতোমধ্যে ঢাকায় হেড অফিসে পাঠিয়েছি। হেড অফিস থেকে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের আঞ্চলিক বিপণন বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. মামুনার রশীদ বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে জ্বালানীর সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে, বিদ্যুতের উৎপাদন ঠিক রাখতে বেশি গ্যাস দিতে হচ্ছে। এটা শুধু নারায়ণগঞ্জে নয় পুরো দেশের একই অবস্থা। আমরা দ্রæত এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নারায়ণগঞ্জে মানুষের কাছে আহŸান থাকবে আপনারা একটু ধৈর্য ধরুন। সরকারকে সহায়তা করুন। আশা করি, খুব শীঘ্রই এ সংকট কাটিয়ে উঠবো। উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের এলএনজি সাপ্লাই বিঘিœত হচ্ছে। যার কারণে দেশেও সাপ্লাইটা কমে গেছে। এজন্য সবারই গ্যাসের সমস্যা হচ্ছে। তবে পরবর্তী মাস থেকে অনেক উন্নতি হবে। আন্তর্জাতিক সমস্যা থেকেই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। এটা দেশের কোনো সমস্যা না।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।