নিজস্ব সংবাদদাতা
জ্বালানী তেলের দাম বাড়ার পর থেকেই বাড়তে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের দাম। কয়েকদিনের ব্যবধানে অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে বেশ কিছু নিত্যপণ্যের। দুর্গাপূজায় সেগুলোর দাম এখন আর কমার কোনো লক্ষণ নেই। যার ফলে বাজারে অস্বস্তি কাটছে না সাধারণ ক্রেতাদের। শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে দ্বিগুবাবুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চালের দাম এখনো বাড়তি। কমেনি ডিম, মাছ, ব্রয়লার মুরগির দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে গরুর মাংসের দাম ২০ টাকা বেড়েছে। মুদি বাজারে বেড়েছে গুঁড়া দুধের দাম। চড়া সবজির বাজারও। মোটা চাল (স্বর্না ও চায়না ইরি) বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৫২ থেকে ৫৪ টাকায়। মাঝারি মানের চালের (বিআর ২৮) দাম কেজিপ্রতি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। সরু চাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮৫ টাকা পর্যন্ত। সরু চালের মধ্যে মিনিকেট ও নাজিরশাইলের বিক্রি বেশি। ভালো মানের মিনিকেট ৭৫ টাকা আর নাজিরশাইল কিনতে হলে গুনতে হবে প্রতি কেজিতে ৮৫ টাকা। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানী তেলের দাম বাড়ানোর পর থেকে সব ধরনের চালে কেজিপ্রতি অন্তত ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। তবে এ সপ্তাহে নতুন করে দাম বাড়েনি। চালের সঙ্গে চড়া আদা-ময়দার দামও। বিশেষত চীন থেকে আমদানি করা আদা ও রসুন কিনতে হচ্ছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দামে। প্রতি কেজি আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা আর রসুন ১২০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। গলাচিপা থেকে আসা সামিতুল হাসান নামে এক ক্রেতা বলেন, দীর্ঘদিন নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমূল্যে মানুষ নাজেহাল। কোনো পণ্যের দাম কমছে না, শুধু বাড়ছে আর বাড়ছেই। মধ্যবিত্তদের জন্য এখন আতঙ্কের জায়গা বাজার। যারা গোনা টাকা দিয়ে সংসার চালান তারা আর হিসেব-নিকেশ মেলাতে পারছেন না। বিশ্ববাজারে গমের দাম কমলে দেশের বাজারে আটার দাম এখনো বাড়তি। খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫৩ থেকে ৫৫ টাকায়। প্যাকেটজাত আটার ২ কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২৫ টাকায়। খোলা ময়দা কেজিপ্রতি রাখা হচ্ছে ৬০ টাকার কাছাকাছি।
বাজারে এখনো মোটা ডাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়। সরু দানা ডালের দাম কেজিপ্রতি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। বিশ্ববাজারে দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পাম তেল ও চিনির দাম কমিয়ে নির্ধারণ করলেও বাজারে সেগুলো এখনো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। সরকার খোলা চিনির দাম নির্ধারণ করেছে কেজিপ্রতি ৮৪ টাকা। অথচ পাইকারি বাজারে বৃহস্পতিবারও খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ৮৭ টাকা কেজি দরে। যা খুচরায় এখনো ৯০ টাকা। প্যাকেটজাত চিনি কেজিপ্রতি ৯৫ টাকা দর বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। বাজারে নতুন দামের প্যাকেটজাত চিনি এখনো আসেনি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এদিন সকালে দ্বিগুবাবুর বাজারে সবজির দামও বেশ চড়া দেখা গেছে। বাজারে সবজির কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। শসা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। লম্বা বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। বাজারে শিমের কেজি ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। করলা ৮০ টাকা, চাল কুমড়া প্রতিটি ৬০ টাকা, প্রতিটি লাউ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, পেঁপের কেজি ৪০ টাকা, বরবটির কেজি ৮০ টাকা, ধুনধুলের কেজি ৬০ টাকা। এইসব বাজারে কাঁচা মরিচের প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। এছাড়া কাঁচাকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। শুকনা মরিচের কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. আল-আমিন বলেন, সাপ্লাই কম থাকায় সবজির দাম বেড়েছে। এছাড়াও জ্বালানী তেলের দাম বাড়ায় কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। তাই বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে সবজি। শীতকাল আসছে তখন বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়লে আবার দাম কমে যাবে। বাজারে আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। পেঁয়াজের দাম কমেছে। দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি। ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা। খুচরা বাজারে এখনো বেশি দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। বাজারে হাঁসের ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের ডজন ২১০ টাকা। বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। ব্রয়লার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায়। লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায়। তবে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা। মুরগি বিক্রেতা রুবেল বলেন, মুরগির উৎপাদন থাকলেও খাবারের অজুহাতে দাম বাড়তি। পোল্ট্রি ফার্মের মালিকরা দাম কমালেই কমবে মুরগির দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে বেড়েছে গুঁড়া দুধের দাম। বিক্রেতারা জানান, চলতি বছর এর আগে তিন দফা দাম বেড়েছিল এ নিত্যপণ্যটির। এখন আবারও বাড়ানো হয়েছে। এ দফায় দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলো ব্র্যান্ড অনুযায়ী প্রতি কেজি দুধের দাম ৩০ থেকে ৫০ টাকা বাড়িয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোম্পানিভেদে দুধের দাম ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে এখন প্রতি কেজি ডানো ৮৫০ টাকা, ডিপ্লোমা ৮৪০ টাকা, ফ্রেশ ৭১০ টাকা ও মার্কস ৭৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।