দেশের আলো রিপোর্ট
অব্যাহত লোডশেডিং এর বিরুপ প্রভাব পড়েছে শিল্পকারখানায়। সময়মতো নির্দিষ্ট হারে বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়ায় শিল্পকারখানার উৎপাদনের ধস নেমেছে।হুমকির মুখে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ ছোট বড় শত শত কলকারখানা। মাত্রাতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীগণ। দিনে তীব্র তাপদাহ, রাতে ভ্যাপসা গরম। সেই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের শহর সহ সর্বত্র দুর্বিষহ মাত্রায় বেড়েছে লোডশেডিং। হঠাৎ করে কোনো ঘোষণা ছাড়াই শুরু হয়েছে ঘন ঘন লোডশেডিং। দিনে ১-২ বার নয় ৭-৮ বার লোডশেডিং হচ্ছে। লোডশেডিংয়ে হুমকির মুখে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ ছোট বড় শত শত কলকারখানা। ব্যঘাত ঘটছে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে। লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে বিলাস বহুল শপিংমল, বিপণী বিতানসহ ছোট-বড় মার্কেটগুলোতে বেচাকেনায় মন্দাভাব দেখা গেছে। অসহনীয় এই লোডশেডিংয়ের কবল থেকে পরিস্থিতি কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে, এ বিষয়ে কোন সদুত্তরও নেই জেলার বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে। তবে গ্যাস ও ডিজেল সংকটের কারণে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো এখানেও লোডশেডিং হচ্ছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। লোডশেডিংয়ে একদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে অন্যদিকে প্রচÐ গরমে হাপিতাস করছে মানুষ। মাত্রাতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীগণ। বিভিন্ন শিল্পকারখানা ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যুতের ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে অতিরিক্ত খরচ দিয়ে জেনারেটর চালাতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ যেমন বাড়ছে এবং মেশিনপত্রও নষ্ট হচ্ছে। চাহিদা মতো বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটর দিয়ে কারখানর আংশিক অংশ চালু রাখা হয়। এতে অনেক শ্রমিক বেকার বসে থাকে। ফলে শিল্পকারখানাগুলোতে আগের চেয়ে উৎপাদন কমে গেছে। কয়েকটি কারখানার মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিনের গ্যাস সংকটের সাথে যোগ হয়েছে বিদ্যুৎ সংকট। এতে মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে দেখা গেছে চিন্তার ভাঁজ। এভাবে চলতে থাকলে কারখানা মালিকদের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন অনেক শ্রমিক।অপরদিকে শ্রমিকদের মধ্যে যারা উৎপাদন চুক্তি অর্থাৎ প্রডাকশন রেটে কাজ করেন তারা স্বাভাবিকের চেয়ে পারিশ্রমিক কম পাচ্ছেন। ফলে তাদের দৈনন্দিন স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যহত হচ্ছে। হোসিয়ারি ব্যবসায়ীরা জানান, লোডশেডিং এর কারণে উৎপাদন কমে গেছে। এতে তারা আর্থিক সংকটে রয়েছেন। ফলে ব্যাংকের ঋণ ও কিস্তির টাকা পরিশোধে বিপাকে পড়েছেন। যখন-তখন লোডশেডিং হওয়ায় শ্রমিকেরা কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। হোসিয়ারি বারখানার অপারেটর সুমন মিয়া বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে লোডশেডিং হলে অন্য কাজ গুছিয়ে রাখার সুযোগ পাওয়া যেত। রাতে ওভারটাইম করার সুযোগ থাকলেও রাত ৮টায় সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন কাজের সুযোগ নেই। ফলে আয়ে টান পড়েছে।এদিকে লোডশেডিং এর কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন বিপাকে। লোডশেডিং আর প্রচÐ গরমে তাদের ব্যবসার অবস্থাও খুবই খারাপ। শহরের গলাচিপা এলাকার লন্ড্রি ব্যবসায়ী রনক বাবু বলেন, বিদ্যুৎ ছাড়া আমার ব্যবসা অচল। বিদ্যুৎ না থাকায় কয়েকদিন থেকে অনেক কাপড় আয়রন করতে পারিনি। সময় মতো আয়রণ করতে পারছি না। এইভাবে লোডশেডিং চলতে থাকলে ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। শিবুমার্কেট এলাকায় ফটোকপি ও প্রিন্টিং এর ব্যবসা করেন কবির হোসেন। তিনি তার ভোগান্তির বিষয় জানিয়ে বলেন, আমার ফটোকপির ব্যবসা। বিদ্যুৎ ছাড়া আমরা একেবারে অচল। অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে কাজ ঠিকমতো করতে পারছি না। এতে আমার ব্যবসার অনেক ক্ষতি হচ্ছে। একই অবস্থার কথা জানান, কলেজ রোডের একই খাতের ব্যবসায়ী ফরহাদ। তিনি বলেন, কলেজে ভর্তি বা পরীক্ষার আগে আমাদের ভালো ব্যবসা হয়। কিন্তু এখন এতো বিদ্যুৎ যায়, আমাদের ব্যবসায়ের অবস্থা খুব খারাপ। বিদ্যুৎ গেলে কাজ বন্ধ। কাস্টমার নষ্ট হয়। টানবাজার এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সেলিম আহমেদ বলেন, ১০ বছরে এভাবে কখনো বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করেনি। বিদ্যুৎ কখন যাবে আর কখন আসবে তাও বলা মুশকিল। প্রচÐ গরম আর লোডশেডিংয়ে জীবন শেষ। দোকানে বসে থাকাও সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, আমার পেসারের সমস্যা আছে। দোকান তাড়াতাড়ি বন্ধ করে রাতে বাড়ি ফিরতে হয়। ব্যবসায়ের ক্ষতি তো হয়, গরমে শরীরটাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
একই আক্ষ্যেপ শহরের মার্কটাওয়ার মার্কেটের মোবাইলের মেকানিক আল-আমিনের তিনি বলেন, লোডশেডিং আর প্রচÐ গরমে মার্কেটের অবস্থা খুবই খারাপ। জেনারেটর দিয়ে কতক্ষণ থাকা যায়। আগের মতো এখন কাজও করতে পারছি না। কাস্টোমার কাজ করাতে আসে, কারেন্ট চলে গেলে অপেক্ষা করে নয়তো চলে যায়। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ব্যবসা বন্ধ করা লাগবে। শুধু আমার একার নাহ, ইলেকট্রনিকস এর কাজ করে এমন সব ব্যবসায়ীদের একই অবস্থা। ডিআইটি এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী শহীদুল্লাহ বলেন, এখন যদি এমন লোডশেডিং হতে থাকে, তাহলে তো আমরা ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়ে যাবো। এমনিতেই করোনার পর থেকে আমাদের ব্যবসা আর আগের মতো জমে উঠেনি। জেলার বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও জনজীবনে দুর্ভোগের বিষয়ে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) নারায়ণগঞ্জ সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সমস্যা ও সমাধান নিয়ে আসলে আমার বলার কিছু নেই। যখন দেশে বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট সমস্যার সমাধান হবে, তখন এখানেও সমাধান হবে।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।