বন্দর সংবাদদাতা
বন্দরে ডিবি পুলিশ ও র্যাব পরিচয় দিয়ে বিআরটিসি বাস থামিয়ে ব্যবসায়ী টাকা ডাকাতি করে নেয়ার সময় স্থানীয় জনতার সহযোগিতায় ৪ ভুয়া ডিবি পুলিশকে আটক করেছে র্যাব-৩, সিপিসি-১ ঢাকা খিলগাও ক্যাম্পের একটি টিম। মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) রাত ১১টায় বন্দর উপজেলার ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের জাঙ্গালস্থ সুন্দরবন ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে ওই ৪ ভুয়া ডিবি পুলিশকে আটক করতে সক্ষম হয়। এসময় আটককৃত ৪ ভুয়া ডিবি পুলিশের কাছ থেকে এক জোড়া হ্যান্ডকাপ, ২টি ওয়াকিটকি সেট, নগদ ৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা, ২টি ডিবি পুলিশের জ্যাকেট, একটি পুলিশের আইডি কার্ড ও একটি র্যাবের জ্যাকেট উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো, বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানার চকিরঘাট এলাকার মৃত জয়মুদ্দিন মিয়ার ছেলে মো. কাওসার আলী (৩০), মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানার চর বুলবুলীয়া পলাশপুর এলাকার সুরুজ্জামান মিয়ার ছেলে আলী আকবর (২৪), বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ থানার দক্ষিণ ভুতেরদিয়া এলাকার মৃত মোদাচ্ছের আলী মিয়ার ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন(৪০), নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানার দাদুয়া এলাকার মৃত তাহের ফকিরের ছেলে ইমামুল হক (২৭)। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী শামছুজ্জামান সরকার ওরফে বাবুল বাদি হয়ে আটককৃত ৪ ভুয়া ডিবি পুলিশসহ অজ্ঞাত নামা আরো ৪/৫ জনকে আসামী করে বন্দর থানায় একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করেন। মামলা সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর জেলার উত্তর চাঁদপুর থানার মৃত আকরাম আলী মাস্টারের ছেলে শামছুজ্জামান সরকার ওরফে বাবুল মিয়া গত ৮ নভেম্বর ঢাকা মহানগরীর ওয়ারী থানাধীন নবাবপুর ইসামতি এন্টার প্রাইজ নামক এক দোকান থেকে ব্যবসায়ী কাজের জন্য ৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা নিয়ে গুলিস্তান বাস কাউন্টার হইতে বিআরটিসি বাস যোগে নিজ বাড়ি চাঁদপুরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করে। পরে যাত্রীবাহী গাড়ীটি বন্দর উপজেলার ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের জাঙ্গাল এলাকার সুন্দরবন ফিলিং স্টেশনের সামনে আসলে ৮/৯ জন লোক বাসটি গতি রোধ করে। এর মধ্যে ২ জন লোকের গায়ে ডিবি পুলিশ লেখা জ্যাকেট পরিহিত ছিল। এর মধ্যে আরেক জন র্যাবের জ্যাকেট ও অপর জন সাদা পোশাকে মোট ৪ জন লোক উল্লিখিত বাসে ভিতর প্রবেশ করে ডিবি ও র্যাবের পরিচয় দিয়ে ব্যবসায়ী শামছুজ্জামানকে বলে আপনার বিরুদ্ধে মাদক মামলা আছে। আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে। এসময় ব্যবসায়ী শামছুজ্জামান জানান, আমার বিরুদ্ধে কোন মাদক মামলা নাই। তখন উল্লিখিত ভুয়া ডিবি ও র্যাব ক্ষিপ্ত হয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীকে বাস থেকে টেনে হেঁচড়ে নিচে নামিয়ে মাইক্রোবাসে উঠাতে চেষ্টা করে। এসময় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী বাসের যাত্রীদেরকে বলে আমার কাছে টাকা আছে। আমি কোন মামলার আসামী না। আমরা টাকাগুলো ছিনিয়ে নিতে চাইছে। আপনারা আমাকে সাহায্য করেন। পরে বাসের অন্যান্য যাত্রীরা বিষয়টি র্যাব-৩, সিপিসি-১ ঢাকা খিলগাও ক্যাম্পের অপারেশন দলকে অবহিত করে। এ ঘটনায় র্যাব-৩ এর ডিএডি খালেকুজ্জামান বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ওই দিন রাত ১১টায় বন্দর উপজেলার জাঙ্গাল এলাকার সুন্দরবন ফিলিং স্টেশনের সামনে অভিযান চালিয়ে উল্লিখিত ৪ ভুয়া ডিবি পুলিশকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আটকৃতরা এলামেলা উত্তর দিলে র্যাবের সন্দেহ হয়। পরে তাদের দেহ ও গাড়ি তল্লাশী চালিয়ে উল্লিখিত ডিবি ও র্যাবের জ্যাকেট, হ্যান্ডক্যাপ ও ওয়াকিটকিসহ ডাকাতি করার নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী বাদি হয়ে আটককৃতদের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় ডাকাতি মামলা রুজু করে। পরে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পুলিশ পুরিদর্শক এইচএম মাহমুদ গ্রেফতারকৃত ৪ ভুয়া ডিবি ও র্যাবকে ৩ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে প্রেরণ করলে বিজ্ঞ আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বন্দর থানা পুলিশ জানায়, আটককৃতরা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় ডিবি পুলিশ ও র্যাবের পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে অমানবিক নির্যাতন করে তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।