রূপগঞ্জ সংবাদদাতা
রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্র এলাকাটি এখন মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকান্ড ঘটছে। বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে মাদক উদ্ধারের জন্য অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে মাদক কারবারীরা র্যাবের উপর অতর্কিত গুলিবর্ষণের পর মাদক কারবারীদের সঙ্গে র্যাবের গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। এসময় র্যাবের ৪ সদস্য আহত হয়েছেন।
র্যাবের দাবি, এসময় মাদক কারবারীদের গুলিতেই আহত হয়ে মাদক কারবারী শাহিন ওরফে সিটি শাহিনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় শুক্রবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে উত্তরা র্যাব-১ এর সিপিসি-১ এর পুলিশ পরিদর্শক আশরাফুজ্জামান বাদি হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি বর্ষণ, হত্যা, অস্ত্র-গুলি উদ্ধার ও মাদক উদ্ধারসহ আহতের ঘটনায় অজ্ঞাত ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামী করে আলাদা ভাবে ৩টি মামলা দায়ের করেন। র্যাব-১ এর সিপিসি-১ এর পুলিশ পরিদর্শক আশরাফুজ্জামান জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে তারা জানতে পারে চনপাড়া পুর্ণবাসন কেন্দ্র এলাকার ৩নং ওয়ার্ডের বালুর মাঠে মাদক কারবারীরা মাদকের একটি বড় ধরণের চালান বিক্রয় ও হস্তান্তর করার জন্য অবস্থান করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিত্বে র্যাব-১ এর একটি বিশেষ দল সেখানে পৌঁছে অভিযান পরিচালনা শুরু করেন। এসময় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক কারবারীরা র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ শুরু করে। এসময় নিজেদের জানমাল ও সরকারি মালামাল রক্ষার্থে র্যাবও পাল্টা গুলি বর্ষণ শুরু করে। র্যাবকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও লাঠিসোটাও নিক্ষেপ করা হয়। প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট গুলিবিনিময় হয়। এসময় মাদক কারবারীদের হামলায় র্যাব-১ এর সদস্য এএসআই আসাদুল ইসলাম, নায়েক আমির হোসেন, কর্পোরাল গানার সোহেল মিয়া ও নায়েক আরিফুল ইসলাম আহত হন। তখন মাদক কারবারীরা গুলি করতে করতে পালিয়ে যায়। এসময় স্থানীয় লোকজন ও রূপগঞ্জ থানা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে র্যাব সদস্যরা দেখতে পান শাহিন ওরফে সিটি শাহিন নামের এক মাদক কারবারী গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আহত হয়ে পড়ে রয়েছে। অজ্ঞাত নামা মাদক কারবারীদের গুলিতেই গুলিবিদ্ধ হন শাহিন ওরফে সিটি শাহিন। পরে সিটি শাহিনের পাশে থাকা একটি পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলি ও ২০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করে র্যাব। তাৎক্ষনিক শাহিন ওরফে সিটি শাহিনকে ঢাকার মুগদা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। র্যাব কর্মকর্তা আরো জানান, র্যাব সদস্যরা ২৮ রাউন্ড গুলি ও কার্তুজ ফায়ার করেন। তবে, নিহত শাহিন মিয়া ওরফে সিটি শাহিনের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সিটি শাহিনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। এছাড়া শাহিন একজন ইন্টারনেট ব্যবসায়ী।
এরআগে, ২৭ সেপ্টেম্বর র্যাবের বিশেষ টিমের সদস্যরা চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্র এলাকায় অভিযান পরিচালনা করতে গেলে মাদক কারবারীরা র্যাবকে উদ্দেশ্যে করে গুলি বর্ষণ ও হামলার ঘটনা ঘটায়। এসময় র্যাবের বেশ কয়েক জন সদস্য আহত হন। ওই ঘটনায় র্যাব-১ এর নায়েক সুবেদার তৌফিকুল ইসলাম বাদি হয়ে রূপগঞ্জ থানায় আলাদা ভাবে ৩টি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য ও রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের নবগঠিত কমিটির সদস্য বজলুর রহমান বজলুসহ ৩১ জনকে আসামী করা হয়। ওই মামলায় বজলুর রহমান বজলুর ছোট ভাই হাসান গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলছে, চনপাড়া পুর্ণবাসন কেন্দ্র এলাকার বিভিন্ন মহল্লা ও ওয়ার্ড নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ৫টি বাহিনী। এসব বাহিনী মাদক কেনাবেচা, হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, নারী ব্যবসা, চাঁদাবাজি, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টিসহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধে জড়িত। এরা ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে অপরাধ মূলক কর্মকান্ড ঘটিয়ে আসছে। একেক জনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকা সত্বেও ধরাছোয়ার বাইরে থেকে অপরাধ করেই যাচ্ছে। পুলিশ গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠালেও জামিন নিয়ে এসে ফের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। মনে হয়, তাদের পেশাটাই অপরাধের। নাম না প্রকাশ শর্তে স্থানীয়দের মধ্যে অনেকেই জানান, প্রথম বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছে জয়নাল আবেদীন, দ্বিতীয়টির নেতৃত্বে শাহীন মিয়া ওরফে সিটি শাহীন, তৃতীয় বাহিনী চালান সাদ্দাম হোসেন ওরফে স্বপন, চতুর্থ বাহিনীর প্রধান মো. রাজা এবং পঞ্চম বাহিনীর নেতা আনোয়ার হোসেন। এসব বাহিনীদের নিয়ন্ত্রক কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য ও রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের নবগঠিত কমিটির সদস্য বজলুর রহমান বজলু। এদের মধ্যে শাহিন মিয়া ওরফে সিটি শাহিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় এবং আনোয়ার হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তারা সবাই বিউটি হত্যা মামলার আসামী। বিউটির স্বামী হাসান হত্যা মামলার আসামীও তারা। এ বিষয়ে যোগাযোগ করতে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য ও রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের নবগঠিত কমিটির সদস্য বজলুর রহমান বজলুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে বার বার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করে নি। এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, এ ঘটনায় অজ্ঞাত আসামীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্র এলাকায় মাদক নির্মূল করতে আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।