নিজস্ব সংবাদদাতা
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ৮০ টাকার চাল ১০ টাকায় আনা হবে।আজকাল মানুষ বাজারে টাকা নিয়ে যায় ব্যাগ ভরে আর নিত্যপণ্য কিনে আনে অর্ধেক ব্যাগ ভরে। মাছ-মাংস খাওয়া অনেকটা ছেড়েই দিয়েছে। এটি একটি মিথ্যুক ও ভাওতাবাজ সরকার। শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি একথা বলেন।রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে বাধা, হামলা-মামলা, দমন-পীড়ন, গুলি-হত্যা বন্ধ করার দাবিতে ৭টি দলের রাজনৈতিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চ সমাবেশটির আয়োজন করে। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, খেলা হবে শ্লোগান নিয়ে এতো কথা হলো, এই শব্দটা কিন্তু আমাদের রাজনীতিতে অনেক ব্যবহৃত হয়। এই খেলার কথা বলে ক্ষমতাশীনরা মনে করে, গায়ের জোর ছাড়া ক্ষমতায় থাকার আর কোন পথ নাই। এখন সরকারি দল ভোটে জিতবে না, কেহ ভোট দিবে না, আপনারা যতই বলেন জনগণ আপনাদের কোন কথাই শুনবে না। ওবায়দুল কাদের সাহেব বলে খেলা হবে, আসুন খেলুন। তিনি আরও বলেন, আগে বিএনপি কোন সমাবেশ ডাকলে, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এর আশপাশেও যেতে পারতো না। মানুষ যে ঢাকায় আসবে আপনারা সেটা পত্র-পত্রিকায়, অনলাইনে বা ফেসবুক থেকে জানতে পারছেন। আমরা জানি ওরা এভাবেই ক্ষমতা থেকে যাবে না। ওরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে লুট করে ধন-সম্পদ বাড়ায়। তিনি বলেন, যদি আমরা ক্ষমতায় যাই, তাহলে আমাদের দেশে যে ৬ কোটির মতো গরিব মানুষ যারা আছে তাদের প্রত্যেককে মাসে ১ হাজার করে টাকা দিবো। যে দেশের বাজেট৭ লাখ কোটি টাকা, সে দেশ গরিবদের ৭২ হাজার কোটি টাকা দিতে পারবে না? প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন যে, উনি জানেন কারা কারা বিদেশে টাকা পাঁচার করে। আমরা বলেছিলাম নাম দেন, গ্রেফতার করেন উনি তা করলেন না। তিনি আরো বলেন, আমরা ক্ষমতায় গেলে পুরো ব্যবস্থাটাকেই বদলে দিবো। আমরা কোন চোর-ডাকাতদের সাথে আঁতাত করি না। নতুন করে কেউ প্রধানমন্ত্রী হলে সে সেচ্ছাচারী, ডিকটেটর হবে কারণ আমাদের সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে এই ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এই সংবিধান বদলাবেন না? এই সংবিধানে যেখানে যেখানে সেচ্ছাচারীতাকে বৈধতা দেয়া হয়েছে সেটিকে পাল্টাতে হবে। অনেকে বলবেন এই সংবিধান কিভাবে বদলাবে, আমরা এই জন্যই আন্দোলন করছি। আর এই লক্ষ্যেই গণতন্ত্র মঞ্চ তাদের বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।নারায়ণগঞ্জ খুবই সৌভাগ্যবান, যে আমরা প্রথম বাইরের জেলার মধ্যে এইখানে সভা করতে এসেছি। আমাদের লড়াই রাষ্ট্র বিনির্মানের লড়াই। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ভালো ভাবে শুনে রাখেন, আমরা এক দফা আন্দোলন করছি। এই এক দফার ৩টা উপাদান আছে। আমরা ভোট দিতে পারি না, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে, এই সরকারের অধিনে সম্ভব না। আমাদের প্রথম শর্ত হচ্ছে, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। একটি রাজনৈতিক দলগুলোর অধীনে একটি নির্বাচন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই দেশে নির্বাচনকালীন একটি নির্দলীয় সরকারের কাঠামো তৈরি করতে হবে। সংবিধান বদলে, জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সাকি আরও বলেন, এই দেশের মানুষ এক দফার সংগ্রাম করবে, এই সংগ্রাম কেউ ঠেকাতে পারবে না। এই এক দফার ৩টি উপাদানের মধ্যে যদি কেউ একটিও বদলাতে চায়, তাহলে বুঝবেন আপনার ক্ষমতা হরণ করতে চায়। বুঝবেন আবারো নানান কায়দায় সৈরাচারী সরকার কায়েম করতে চাচ্ছে। আমরা সরকারের পদত্যাগ চাই, কোন রকমের ভুল ভ্রান্তি চলবে না। জনগণ যদি লক্ষ্য সম্পর্কে জানেন, তাহলে কারো শক্তি নাই অবৈধ ভাবে নির্বাচন করার। তিনি বলেন, ওনারা (সরকার) বলেন, উন্নয়ন হচ্ছে। কি উন্নয়ন? বিশাল বিশাল স্থাপনা। এগুলোতো আগেও বিভিন্ন আমলে হয়েছে। আজকাল চাল কেনার ক্ষমতা অনেক সাধারণ মানুষের নাই। উন্নয়নের নাম দিয়ে বছরে রিজার্ভ খালি হয়ে গেছে। অনেকে বলে, এই সরকারের আমলে ১০ লক্ষ কোটি টাকা পাঁচার হয়েছে। এই টাকা আমার দেশের মানুষের টাকা। আমরাতো শুধু শুনি নাই, দেখেছি যে কিভাবে আপনারা রাতের আঁধারে বেলট বাক্স ভর্তি করেছেন। আপনারা হাজার হাজার লোককে ক্রস ফায়ার করেছেন, আপনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ। আপনারা র্যাব এবং পুলিশকে দিয়ে এইসব কাজ করিয়েছেন। আর এখন যখন আমেরিকা এদের সেংশন দেয়, আপনারা খুব দেশপ্রেমিক হয়ে যান। এই সরকার বাংলাদেশকে বিদেশের কাছে হেও করছে। প্রতিপক্ষের হাত পা বেঁধে, আর নিজেরা পুলিশ বাহিনীকে সাথে নিয়ে তারা বলে খেলা হবে। খেলা পরে হবে, আগে আন্দোলন হবে, লড়াই হবে। নির্বাচনের খেলায় আসেন, আমরা আপনাদের হাত পা বাধবো না, সমস্ত অধিকার নিয়েই নির্বাচন করতে পারবেন। এতোদিন বিদেশীদের সমর্থনে মানুষের উপর অত্যাচার করে, শাসন চালিয়ে যেতে পেরেছেন। এখন গণজোয়ার তৈরি হচ্ছে। তাই বিদেশীরাও পিছন থেকে সরে যাচ্ছে। তাদের পায়ের তলায় এখন আর মাটি নাই। বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, আমি নারায়ণগঞ্জের সমাবেশ থেকে বলতে চাই, বাংলাদেশের সকল বিরোধী দল, বামগণতান্ত্রিক জোট, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রীক দেশ প্রেমিক দলগুলো সবাই, এই জালেমের বিরুদ্ধে জুলুমের বিরুদ্ধে সাহসের সাথে দাঁড়াতে হবে। বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই এগিয়ে নিতে হবে। নারায়ণগঞ্জের মানুষ ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান আইয়ুব সাহেবের বিরুদ্ধে সাহসী ভূমিকা পালন করেছে। আদমজীর শ্রমিকেরা নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকায় গণঅভ্যুত্থান গড়ে তুলেছিলেন। এই নারায়ণগাঞ্জ ৯ বছর এরশাদ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। এবার আরেকটা গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব প্রদান করবে নারায়ণগঞ্জের মানুষ এবং মানুষকে জাগিয়ে তুলবেন। তিনি বলেন, শ্রমিকরা বলছে যে মজুরি পাই এই মজুরি দিয়ে বর্তমান বাজারে ১৫ দিনও চলে না। শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে দুভির্ক্ষ কথা ঘোষণা করে রাখছেন। কেন হাসিনা আগে আগে দুভির্ক্ষের কথা বলছে? ইতোমধ্যে জাতিসংজ্ঞ র্যাবের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এবং এর পরেও সরকার যা করছে ইঙ্গিতটা অত্যন্ত স্পষ্ট। মানুষ ইতোমধ্যে ভয়কে জয় করেছে। আমরা বলেছি নির্বাচনের আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। এই সরকারের অধিনে বাংলাদেশে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ গ্রহণ যোগ্য নির্বাচনের কোন সুযোগ নাই। তার আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। আলাপ আলোচনা করে নির্বাচনকালীন একটা অর্ন্তগতকালীন সরকার গঠন করতে হবে। যে সরকার অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ গ্রহণ যোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারবে। আজকে শুধু ক্ষমতার পালাবদল ঘটলেই চলবে না, যে ব্যবস্থা প্রতিবাদকে জন্ম দেয়, কর্তৃত্ববাদী শাসনের জন্ম দেয়। যে সংবিধান রাষ্ট্র ব্যবস্থা, প্রশাসনিক ব্যবস্থার গুণগত বদল ছাড়া বাংলাদেশকে আমরা বদলাতে পারবো না। দেশের মানুষ এখন দেখতে চায়, সকল বিরোধী দল রাজপথে একসাথে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে, সকল বিরোধী দল এখন এই ফ্যাসিবাদী বিরুদ্ধে আছে। তিনি আরও বলেন, আমরা ইতোমধ্যে গণমন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে বিএনপি সাথে আলোচনা করেছি। বিএনপি আমাদের অফিসগুলোতে আসছে, আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের সাথে আলোচনা করছে। ৩ দিন আগে বিএনপির সাথে আমাদের গণতন্ত্র মঞ্চের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা সংলাপ হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে এই লড়াইটাকে শেষ পর্যন্ত এগিয়ে নিতে একটি লিয়াজু কমিটি গঠন করা হবে। এই যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি কি হবে সেটা নিয়ে আলোচনা হবে। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি (জেএসডি) আব্দুর রব, গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহŸায়ক রাশেদ খাঁন, সদস্য সচিব নুরুল হক নুর, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহŸায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম। এসময় উপস্থিত ছিলেন, গণঅধিকার পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি মাহমুদুল হোসেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির মোতালেব সভাপতি মাস্টার, জেএসডি নেতা এড. খলিলুর রহমান, গণসংহতি আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, ওয়াকার্স পার্টির নেতা আবু হাসান টিপু, ভসানী অনুসারী পরিষদের নেতা মজিবুর রহমান, নাগরিক ঐক্যের নারায়ণগঞ্জের সদস্য সচিব কবির হোসেন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জের নেতা রিফাকুল ইসলাম প্রমুখ।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।