নিজস্বসংবাদদাতা
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজারের অধিক মানুষ যাতায়াত করেন। বাসের ভাড়া বৃদ্ধির ফলে ট্রেনকেই সাধারণ মানুষ এখন যাতায়াতের প্রধান বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছেন। কিন্তু ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল সাময়িক বন্ধ রয়েছে। রোববার (৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়। পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজের স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও কবে নাগাদ আবার ট্রেন চলাচল শুরু হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ। এদিকে, ট্রেন চলাচল বন্ধে সড়কপথে দুর্ভোগ বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিনিয়তই দুর্ভোগের শিকার হবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করা যাত্রীরা। কারণ, বাসের ভাড়া বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষ ট্রেনকেই যাতায়াতের প্রধান বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। তাদের আবারও সেই বাসে করেই যাতায়াত করতে হবে। ফলে যাত্রীদের চাপ বাড়বে সড়কপথে, সেইসঙ্গে ভোগান্তিও বাড়বে। সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ মানুষ রেলপথ এবং সড়কপথে ঢাকায় যাতায়াত করে থাকেন। নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চল অধ্যুষিত এলাকা এবং ঢাকা লাগোয়া জেলা হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের অসংখ্য মানুষ ঢাকায় গিয়ে এবং ঢাকা থেকেও অনেক মানুষ নারায়ণগঞ্জে এসে অফিস করেন। সেইসঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সমৃদ্ধ এলাকা হওয়ায় মানুষ বিভিন্ন কারণে ঢাকায় যাতায়াত করে থাকেন। ফলে রেলপথ এবং সড়কপথ দু’টিতেই সাধারণ মানুষের চাপ থাকে। রেলওয়ে সূত্র বলছে, ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ৩০ জুনের পর থেকে ওই রুটে ভাঙ্গা পর্যন্ত যেন ট্রেন চলতে পারে, সেই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়ার মধ্যে দু’টি নতুন ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হবে। কিন্তু গেন্ডারিয়া থেকে কমলাপুর পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি তুলনামূলক কম। ইউটিলিটি শিফটিং এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্রেন চলাচলের সময় কাজ চালিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়, যে কারণে কাজের অগ্রগতি কম। তাই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে ট্রেন বন্ধ রাখতে অনুরোধ করেছেন ঠিকাদার। এর অংশ হিসেবে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করে দ্রæত কাজটি শেষ করতে চান তারা। পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের অগ্রগতি সভায় কাজের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানেও বিষয়টি উঠে আসে। সব মিলিয়ে সাময়িকভাবে ট্রেন বন্ধ রাখার বিষয়ে একমত হয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে প্রতিদিন ৯ জোড়া ট্রেন আসা-যাওয়া করে। সব মিলিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ১৮টি ট্রেন যাত্রীদের নিয়ে আসা-যাওয়া করে। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে এই রেলপথে ১০ হাজারও বেশি মানুষ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ যাতায়াত করে থাকেন, যা মাসে ৩ লাখেরও বেশি। এদিকে, রেল কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহŸায়ক রফিউর রাব্বি। তিনি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানান, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেল লাইনের কাজ কয়েক বছর ধরে চলমান থাকলেও তার অগ্রগতি আশানুরূপ নয়। অন্যদিকে, করোনাকালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে ট্রেনের সংখ্যা যেভাবে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে তাও আর বৃদ্ধি করা হয়নি। রেল কর্তৃপক্ষ বার বার বৃদ্ধির প্রতিশ্রæতি দিলেও তা রক্ষা করা হয়নি। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বল হয়, আজকে মানুষের জীবন-জীবিকা যখন চরম সংকটে, তখন রেল কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্ত মানুষের সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। আমরা দেশে রেলসেবার আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন চাই। কিন্তু জনগণের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে সাড়ে ৩ মাসের পরিবর্তে আরও কম সময়ে কাজ সম্পন্ন করার জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি। আমরা চাই না দেশে অন্যান্য প্রকল্পের মতো এই কাজটি বিলম্বিত হোক। শুরুতেই সে দিকে সতর্ক থাকার জন্য আমরা রেল কর্তৃপক্ষের কাছে আহŸান জানাচ্ছি। রফিউর রাব্বী বলেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজারের অধিক মানুষ যাতায়াত করেন। বাসের ভাড়া বৃদ্ধির ফলে ট্রেনকেই সাধারণ মানুষ এখন যাতায়াতের প্রধান বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তবে ট্রেন বন্ধ থাকলে বাসে চাপের কারণে সড়কপথে দুর্ভোগ বাড়বে। আকাশ নামে এক যুবক বলেন, আমাকে প্রতিদিনই ঢাকায় গিয়ে অফিস করতে হয়। আমার বেতন খুবই অল্প। যার কারণে খরচ বাঁচিয়ে চলার জন্য প্রতিদিন ট্রেনেই যাতায়াত করতাম। কিন্তু এখন ট্রেন বন্ধ থাকায় আমাকে বাসে করে যাতায়াত করতে হবে। আর বাসে করে যাতায়াত করার কারণে আমার খরচ বেড়ে যাবে। প্রতিদিন প্রায় ১শ’ টাকার ওপরে অতিরিক্ত খরচ করতে হবে। সেইসঙ্গে অতিরিক্ত সময়ও নষ্ট হবে। যে কোনো সময়ই জ্যামে আটকে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। সবুজ সরকার কাজ করেন একটি কোম্পানিতে। তার অফিস ঢাকায়। সংসার খরচ কমিয়ে আনার জন্য তিনি নারায়ণগঞ্জে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা গিয়েই অফিস করেন সবুজ। তিনি বলেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার কারণে আমাকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হবে। কারণ বাসে করে যাতায়াত করলে অনেক সময় যানজটে আটকে থাকতে হয়। সেইসঙ্গে খরচও অনেক বেড়ে যাবে। নারায়ণগঞ্জ কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ইমরান হোসেন বলে, আমি প্রতিদিন গেন্ডারিয়া থেকে ট্রেনে করে নারায়ণগঞ্জে আসি। ট্রেনে আসা-যাওয়া করাটা আমার জন্য অনেক সহজ ব্যাপার। খুব কম খরচেই আমি যাতায়াত করতে পারি। কিন্তু ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আসা-যাওয়ার সময়ে অনেক দুর্ভোগের শিকার হতে হবে। পাশাপাশি প্রতিদিন অতিরিক্ত খরচও বহন করতে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ দ্রæত শেষ করার লক্ষ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কবে নাগাদ এই রুটে আবার ট্রেন চলাচল শুরু হবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে অতি দ্রæত কাজ শেষ করে জনসাধারণের জন্য যেন ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করতে আমরা চেষ্টা করছি। নারায়ণগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সোহান সরকার বলেন, রোববার থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার কারণে সড়কপথে যাত্রীদের কিছুটা চাপ থাকবে। তবে যানজট নিরসনে এবং যাত্রীদের ভোগান্তি যেন না হয় সেজন্য প্রতিটি পয়েন্টে পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় নারায়ণগঞ্জ শহরে যানজট বৃদ্ধির পরিবর্তে আরও কমবে দাবি করে তিনি বলেন, বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে যখন ট্রেন চলাচল করছে তখনই রাস্তা বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে। এখন যেহেতু ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে তাই রাস্তা বন্ধ করার প্রয়োজন হবে না। এর ফলে নারায়ণগঞ্জ শহরে যানবাহনগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করতে পারবে। বারবার সিগন্যাল দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে না।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।