দেশের আলো রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ক্ষমতায় আসার পর আমাদের সরকারের একটি নীতিমালা ছিল ব্যবসাবান্ধব নীতি গ্রহণ করা, আমরা সেটাই করেছি। কারণ আমরা ব্যবসা বান্ধবনীতিতে বিশ^াসী।রোববার (১ জানুয়ারি) রূপগঞ্জে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিইটিএফ) এর ২৭তম আসর উদ্বোধনকালে তিনি একথা বলেন। নতুন বছরের প্রথম দিন সকালে পূর্বাচলে স্থায়ী এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণিজ্যমেলা উদ্বোধন প্রসঙ্গে বলেন, পূর্বাচলে দ্বিতীয়বারের মতো বাণিজ্যমেলা শুরু হলো। প্রথমবার যখন এখানে বাণিজ্যমেলা হয়, করোনার বিধিনিষেধের কারণে আসতে পারিনি। ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেছিলাম। তবে ডিজাইন থেকে শুরু করে সবকিছুতেই আমি ছিলাম। এজন্য এখানে আসার আগ্রহ বেশি। তিনি আরও বলেন, করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক দেশের অর্থনীতি হিমশিম খাচ্ছে, তবুও বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। আমরা দুর্নীতি করতে আসিনি, দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি। বাবা-মা-পরিবার হারিয়ে এদেশে দুর্নীতি করতে ফিরে আসিনি।সব হারিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে এসেছি। ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার পর আমাদের সরকারের একটি নীতিমালা ছিল ব্যবসাবান্ধব নীতি গ্রহণ করা, সেটাই করেছি। অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান। এছাড়াও বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক), সিনিয়র বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ ও এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে একটি স্মারক গ্রন্থ আমি তোমাদেরই লোক প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং দেশের রপ্তানি কার্যক্রমের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। মেলায় এবারও সাধারণ, প্রিমিয়াম, সংরক্ষিত, ফুড স্টল ও রেস্তোরসহ ১৩ ক্যাটাগরিতে স্টল রয়েছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে রয়েছে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন। এবার দেশি-বিদেশী মিলে মেলায় মোট ৩৫১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। গতবার এই সংখ্যা ছিল ২২৫টি। দেশি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া, ভারতসহ ১০টি বিদেশী রাষ্ট্রের ১৭টি প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে। এছাড়া গতবার শিশুপার্ক ছিল না, এবার মিনি শিশুপার্ক রয়েছে। ফুডকোর্ট নিচে চলে গেছে, পরিবেশও ভালো হয়েছে। পরিসর বড় হয়েছে। মেলা উপলক্ষে কুড়িল থেকে মেলার ভেন্যু পর্যন্ত যাত্রীদের আনা-নেয়ার জন্য ৫০টি শাটল বাস চালু করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন। বাসের ভাড়া যাত্রীপ্রতি ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিকাশের মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধ করলে যাত্রীরা ৫০ শতাংশ ছাড়ও পাবেন। এবার মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রবেশ মূল্য ফ্রি।
প্রতিদিন মেলা চলবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে ছুটির দিনে এক ঘণ্টা বাড়িয়ে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এছাড়া মেলায় প্রায় ১ হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরে মেলা ও এর আশপাশের নিরাপত্তায় মেলার নিয়োজিত বিপুল পরিমাণ পুলিশ, র্যাবসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা পদক্ষেপ ছিল।মেলার নিরাপত্তা বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএফএম সায়েদ জানান, মেলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। মেলায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা দর্শনার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা বিষয় দেখভাল করবেন। সাদা পোশাকেও বিশেষ টিম নিরাপত্তায় কাজ শুরু করেছেন। ফলে নিরাপদ পরিবেশে এ মেলা পুরোপুরি জমে উঠবে। এরআগে শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে মেলার উদ্বোধন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, স্থায়ী এক্সিবিশন সেন্টার একটু দূরে হলেও মেলায় অংশগ্রহণকারী ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। মেলার মাধ্যমে আমরা দেশে তৈরি পণ্য দেশি-বিদেশী ক্রেতাদের কাছে তুলে ধরার সুযোগ পাই। বাংলাদেশে তৈরি পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে তুলে ধরাই মেলার মূল লক্ষ্য বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পণ্যের মান বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিবছর রপ্তানি বাড়ছে। গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি বেশি ছিল। মন্ত্রী আরো বলেন, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা দেশের অভ্যন্তরে ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কেবল টাকার অংকে মুনাফা করার উদ্দেশ্য মেলার আয়োজন করা হয় না। গতবছর মেলায় ২শ’ কোটি টাকা মূল্যের পণ্য রপ্তানির স্পট আদেশ পাওয়া গিয়েছিল। প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের পাশাপাশি আরও ১০টি পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আইসিটি খুবই সম্ভাবনাময় পণ্য, স্বল্পসময়ে এ খাতের রপ্তানি ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে বলে আশা করছি। উল্লেখ্য, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে মেলার আসর বসেছে রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০২০ সালে মেলার আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এরপর গতবছর ২০২২ সালে নতুন ঠিকানা রূপগঞ্জে পূর্বাচল নতুন শহরে ২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলা উপলক্ষে পূর্বাচল নতুন শহরে নির্মিত হয় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার।
যেভাবে মেলায় যাওয়া যাবে
নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই শুরু হলো ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। গতবারের ধারাবাহিকতায় এবারও মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশ-চীন এক্সিবিশন সেন্টারে। এর আগের বছরগুলোতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে আয়োজন হওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থা তুলনামূলক সহজ ছিল। এবছর মূল শহর থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় অনেকের মনেই প্রশ্ন কীভাবে যাবেন পূর্বাচলের মেলায়। শুরুর আগেই সেই সমস্যার সমাধান করেছে মেলা কর্তৃপক্ষ। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের যাতায়াতের জন্য দেয়া হয়েছে বিআরটিসির ৭০টি বিশেষ বাস। সেই বাসে করেই যেতে পারবেন এবারের মেলায়। চাইলে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও যাওয়া যাবে। পার্কিংয়ের ঝামেলায় পড়তে হবে না। কারণ যথেষ্ট জায়গা আছে পার্কিংয়ের জন্য। মেলায় প্রায় ১ হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে। মেলায় ব্যক্তিগত যানবাহন ছাড়া যেতে চাইলে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে কুড়িল বিশ্বরোড বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে মেলা প্রাঙ্গণ বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের দূরত্ব প্রায় ১৬ কিলোমিটার। যানজট না থাকলে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলায় পৌঁছাতে সময় লাগতে পারে প্রায় ১ ঘন্টা থেকে সোয়া ১ ঘণ্টা। মেলায় দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে প্রতিদিন ৭০টি বিআরটিসি বাস ও অন্য যাত্রীবাহী বাস চলাচল করবে। বিআরটিসি বাসে ভাড়া জনপ্রতি ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর নামতে হবে কাঞ্চন ব্রিজে। সেখান থেকে ১০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে যেতে পারবেন মেলা প্রাঙ্গণে। প্রতিবছরের মতো এবারের মেলাতেও দর্শনার্থীদের প্রবেশের উপর ফি ধরা হয়েছে। নির্ধারিত টাকা দিয়ে টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হবে মেলায়। বড়দের জন্য প্রবেশ ফি রাখা হচ্ছে জনপ্রতি ৪০ টাকা ও শিশুদের জন্য ২০ টাকা। তবে মেলার টিকিট অনলাইনে কিনলে ৫০ শতাংশ ছাড়। ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা ও অন্যান্য দিনে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বাণিজ্যমেলা। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে ঢাকার অদূরে পূর্বাচল উপ-শহরের ৪নং সেক্টরে ৩২ একর জায়গা নিয়ে একটি এক্সিবিশন সেন্টার তৈরির ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর চীন ও বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে বাণিজ্যমেলা ও প্রদর্শনীয় এই স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়। যা বর্তমানে বাংলাদেশ-চীন এক্সিবিশন সেন্টার নামে পরিচিত। এখানে প্রায় ৩৩ হাজার বর্গমিটারের প্রদর্শনী স্পেস রয়েছে। এক্সিবিশন হলে মোট বুথ আছে ৮শ’ টি। যার প্রতিটির আয়তন ৮ দশমিক ৬৭ বর্গমিটার। এছাড়াও বাইরে ৬ একর খোলা জায়গা আছে। যেখানে অস্থায়ী ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরও আছে ৪শ’ ৭৩ আসনবিশিষ্ট একটি মাল্টি-ফাংশনাল হল, ৫০ আসনবিশিষ্ট ১টি কনফারেন্স রুম, ৬টি সভাকক্ষ, ৫শ’ আসনের ক্যাফেটেরিয়া, শিশুদের খেলার জায়গা, নামাজের স্থান, ১৩৯টি টয়লেট, সিসিটিভি কন্ট্রোল রুম ইত্যাদির সুবিধা।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।