Logo
HEL [tta_listen_btn]

তৃণমূল সামলাতে ব্যর্থ না’গঞ্জ বিএনপি

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ কিছুতেই তৃণমূলকে সামলাতে পারছেন না। বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই মারামারিতে লিপ্ত হয়ে পড়ছে তৃণমূলের অতিউৎসাহীরা। মারামারির দৃশ্য দেখে হতাশ হচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। প্রসঙ্গত, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। কর্মসূচির মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত এবং ঐক্যবদ্ধ করাই দলটির প্রধান লক্ষ্য। তবে, নারায়ণগঞ্জে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সামলাতে অনেকটা ব্যর্থ হতে হচ্ছে দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলায় বেশ কিছু কর্মসূচিতে ঘটেছে অপ্রীতিকর ঘটনা। যাতে হতাশ হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। তবে, বিষয়গুলোকে খুব সামান্য হিসেবেই দেখছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির প্রায় প্রতিটি কর্মসূচিতেই সামনে দাঁড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ধাক্কা-ধাক্কি এমনকি মারামারি পর্যন্ত হয়েছে। বেশির ভাগ কর্মসূচির মধ্যেই প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় হেভিওয়েট নেতৃবৃন্দ। যা বিভিন্ন মিডিয়া প্রচারও করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯ মে বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জনসমাবেশের আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি। ১০ দফা দাবি বাস্তবায়ন ও দেশব্যাপী বিএনপির গণসমাবেশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওই জনসমাবেশের আয়োজন করা হয়। যাতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
সমাবেশের একপর্যায়ে সামনে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে প্রথমে ধাক্কা-ধাক্কি পরে চেয়ার ছোড়াছোড়ির ঘটনা ঘটে। যাতে অনেকটা বিব্রত অবস্থায় পরেন মির্জা আব্বাস। এসময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, যদি বিএনপিকে ভালোবাসেন, খালেদা জিয়াকে ভালোবাসেন, তারেক রহমানকে ভালোবাসেন তাহলে আপনাদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলে, আগামীতে আমরা শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করবো নিজেদের বিরুদ্ধে না।
এদিকে, ২৩ মে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা বাস্তবায়নে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচির আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি। যাতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। দুপুর ৩টা থেকে খানপুরে জড়ো হতে থাকে নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের এক অংশ পদযাত্রা নিয়ে ডনচেম্বার এলাকা অতিক্রম করতে গেলে পুনরায় আবারও শুরু হয় মারামারি। এই মারামারি চলে রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্যের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত।
এই দৃশ্য দেখে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে রিজভী বলেন, আপনারা কেউ ঝগড়া-ঝাটি করবেন না, আপনাদের অনেককেই আমি চিনেছি। তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে, তার এমন হুমকির পরেও থেমে থাকেনি কেউ।
জানা গেছে, জেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কথা উপেক্ষা করে এসব হাতাহাতিতে জড়ায় নেতা-কর্মীরা। তবে এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার কাছ থেকে জানতে চাইলে এগুলোকে সামান্য বিষয় এবং আগামীতে এগুলো হবেনা বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, এসব সংঘর্ষ বা নিজেদের মধ্যে হাতাহাতির যে ঘটনা, সেগুলো আসলে দলিও কোন কোন্দল না। ভুল বুঝাবুঝি এবং সামনে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে এগুলো হয়ে থাকে। আমরা আমাদের নেতা-কার্মীদের আহ্বান করবো এসব কর্মকান্ড না করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকতে। ২৩ মে মহানগর বিএনপির কর্মসূচিতে সংঘর্ষের বিষয়ে তিনি বলেন, ওই দিন কি ঘটেছিলো সেটা আমি নিজ চোখে দেখি নাই, তবে শুনেছি। আমরা খবর নিচ্ছে কারা এসব করেছে এবং দোষ কাদের ছিলো।
বিএনপি নিজে মারামারি করে আওয়ামী লীগের উপর দোষ চাপাতে চায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, সরকার দলিও লোকেরা এসব বলে আগে থেকে নিজেদের সেফ করে রাখতে চাচ্ছে। পরে যাতে তারা কোন একটি ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের উপর চাপাতে পারে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, বর্তমানে আমাদের কর্মসূচিতে অনেক পরিমাণে নেতা-কর্মী জড়ো হয়। তাই একটু হাতাহাতি-ধাক্কাধাক্কি হয়ে থাকে। তবে, মিডিয়া বিষয়টাকে যত বড় করে তুলে ধরে তত বড় কিছু হয় না। সামনে যুবদল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন কমিটি আসছে, তাই অনেকেই নিজের শক্তি জাহির করতে চাচ্ছে। তবে আমাদের নেতাকর্মীরা অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও সহনশীল। আগামীতে বৃহত্তর পর্যায়ে আন্দোলন গুলোতে এসব হাতাহাতির ঘটান অনেকটা কমে আসবে।
তিনি বলেন, সরকার দলীয় লোক পিস্তল নিয়ে সমাবেশ করছে সেটি কিন্তু বেশি প্রচার করা হচ্ছে না। আমাদের নেত্রীকে নারায়ণগঞ্জের এক নেতা অকথ্য ভাষায় গালাগালি করলো সেটিও কিন্তু বেশি প্রচার করা হলো না। আসলে মিডিয়াকেও সরকার জিম্মি করে রেখেছে। আমরা ভোটের অধিকারের পাশাপাশি মিডিয়ার অধিকার নিয়েও আন্দোলন করে যাচ্ছি।
মহানগর বিএনপির কর্মসূচিতে হওয়া সংঘর্ষকে ছোট বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, কর্মসূচিতে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা বড় বিষয় না, যত বড় করে দেখানো হচ্ছে। আস্তে আস্তে এগুলিও কমে আসবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখওয়াত হোসেন খান বলেন, মোবাইল চুরিকে কেন্দ্র করে ওই দিনের ঘটনাটা ঘটেছিলো। বিএনপির সবাই ঐক্যবদ্ধ, আমাদের মধ্যে কোন বিভেদ নাই। জনগণও আমাদের সাথে শরিক হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি এসব ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য আমরা যথেষ্ট সতর্ক।

 

 

 

 

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Theme Created By Raytahost.Com