আড়াইহাজারে বহুতল ভবনে অবৈধ গ্যাস লাইন বিস্ফোরণে ৫ জন দগ্ধ হয়েছেন। এদের মধ্যে কানিজ খাদিজা নিপা (৩৯) ও চায়না আক্তার (৪০) নামে ২ নারী রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ ইনস্টিটিউটে শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টার দিকে ও দুপর ২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আগুনে দগ্ধ অন্যরা হলেন, নিহত নিপার মা হাসিনা মমতাজ (৫৫), সোহান তালুকদার (৪৫) ও নাজমুল। এদের মধ্যে শরীরের ৫৫ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে হাসিনা মমতাজ (৫৫) ও ১০০ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে সোহান তালুকদার (৪৫) শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছেন। তাদের ২ জনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। নিহত চায়না ও নিপার শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। শনিবার বিকেলে বার্ণ ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এরআগে শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে আড়াইহাজার পৌরসভাস্থ লাসাদী গোয়ালপাড়া এলাকায় একটি বহুতল ভবনের ৪ তলায় এ ঘটনা ঘটে। ওই ভবনের মালিকের নাম ছানাউল্লাহ।
নিহত নিপার বোন ইভা ইসলাম জানান, তাদের বাড়ি আড়াইহাজারের গোপালদী এলাকায়। তার বাবার নাম মো. কেসোয়ার মোল্লা। আড়াইহাজারের ওই বাসায় সাবলেট থাকতেন নিপা। তিনি ফকির ফ্যাশনে সুইং পদে কর্মরত ছিলেন । তার মা হাসিনা মমতাজ শুক্রবার সন্ধ্যায় নিপার বাসায় বেড়াতে আসেন।
দগ্ধ সোহানের ভাগনে ফাহিম মোল্লা বলেন, আড়াইহাজার বাজারের পাশে একটি বাড়ির ৪র্থ তলায় ভাড়া থাকেন সোহান ও তার স্ত্রী চায়না। রাতে তিনি খবর পান ওই বাসায় বিস্ফোরণে আগুন লেগেছে। তিনি তখন সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে শনিবার সকালে তাদের শেখ হাসিনা বার্ণ ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসেন।
ফাহিম আরও জানান, সোহান স্থানীয় ফকির গার্মেন্টসে চাকরি করেন। তার স্ত্রী চায়না গৃহিণী। রাতে আগুনে তারা দগ্ধ হন। তবে কী থেকে এই বিস্ফোরণ হয়েছে তা জানাতে পারেননি।
আহত নাজমুলের স্ত্রী রেশমি আক্তার বলেন, রহমানের কক্ষে থাকা বিদ্যুতের সুইজ থেকে বিস্ফোরণ হয়ে থাকতে পারে। কারণ তার কক্ষটি বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার কক্ষ থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাত।
শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, শত শত উৎসুক নারী-পুরুষ ঘটনাস্থলে ভিড় করছেন। ভবনের ৪তলার ৩টি কক্ষের আসবাবপত্র সব তছনছ হয়ে পড়ে রয়েছে। কক্ষগুলোর দরজা-জানালার গ্রীল ও কাঠের টুকরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। জানালার কাঁচের টুকরা ভবন থেকে অনেক দূরে ছিঁটকে পড়েছে। তবে কক্ষগুলোতে থাকা ৩টি সিলিন্ডার অক্ষত রয়েছে।
ভবনের অন্য কক্ষের ভাড়াটিয়ারা জানান, শুক্রবার দিনভরই তিতাস গ্যাসের চাপ বেশী ছিল। আবদ্ধ কক্ষে গ্যাস জমে বিস্ফোরণের এমন ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
প্রতিবেশী বাড়ির মালিক দিলরুবা বেগম বলেন, শুক্রবার গভীর রাতে হঠাৎ বিকট শব্দে আমার বাড়ির টিনের চালের মধ্যে ভবনের জানালার গ্রীলসহ বিভিন্ন অংশ ছিঁটকে পড়ে। এসময় বসত ঘরটি কেঁপে উঠে। আমি প্রথমে ভাবছিলাম কেউ আমার ঘরে বোম মেরেছে।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের আড়াইহাজার ফায়ার স্টেশনের স্টেশন অফিসার শাহ্জাহান হোসেন বলেন, ফ্ল্যাটের ভেতর ৩টি কক্ষ, মাঝখানে রান্নাঘর। ঘরে তিতাসের গ্যাসের লাইন ও গ্যাস সিলিন্ডার দু’টোই ছিল। তবে সিলিন্ডারটি অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে ঘরের ভেতর জমা গ্যাস থেকে এই বিস্ফোরণ হয়েছে বলে ধারণা করছি। তবে, নিশ্চিত করে তদন্তের পরই বলা যাবে বলে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা জানান।
আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমদাদুল হক তৈয়ব জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।