সিদ্ধিরগঞ্জের ৭নং ওয়ার্ডে চলছে গ্যাস চুরি ও অবৈধ সংযোগের মহোৎসব। তিতাসের অসাধু কিছু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মিজানুর রহমান খান রিপন ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী জহিরসহ বেশ কয়েকজন সহযোগীদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আদমজীনগর কদমতলী এলাকার ইয়াবা ও ফেনসিডিলের ডিলার হিসেবে পরিচিত জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির শেল্টারে শক্তিশালী কয়েকটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। একই এলাকার সাইদুর রহমান ছদু, ফজল হাওলাদার, তার ছেলে রাশেদ হাওলাদার, আলমগীর হলেন সিন্ডিকেট প্রধান। সুমন, দুলাল মুন্সি, জীবন, খায়ের, সুজন ওই সিন্ডিকেটের অন্যমত সদস্য। এই চক্রের নেতৃত্বে এলাকার কদমতলী নয়াপাড়া, খালপাড়, ফলপট্টি, ভূঁইয়াপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকাজুড়ে এসব সিন্ডিকেট তিতাসের কিছু কর্মকর্তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এক থেকে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন নবনির্মিত আবাসিক ভবন ও অবৈধ মিল কারখানায় গভীর রাতে গ্যাস সংযোগ দিচ্ছেন।
কদমতলীর বাসিন্দা মো. জাকির হোসেন জানান, অদক্ষ লোকেরা ক্রুটিপূর্ণ লাইন সংযোগ দিচ্ছেন। রাতের আঁধারে তরিঘড়ি করে লাইন সংযোগ দেয়ায় লিকেজ হয়ে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে গ্যাস জমে বিস্ফোরণ ঘটে অনাকাঙ্খিতভাবে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। তিতাস কর্তৃপক্ষ মাঝে মাঝে কোন কোন বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেও দু’একদিনের মধ্যে আবার সংযোগ দিচ্ছেন সিন্ডিকেট সদস্যরা।
কদমতলী প্রধান মসজিদ এলাকার বাসিন্দা হাসান জানান, কয়েকদিন আগে তিতাস কর্তৃপক্ষ এলাকায় নামমাত্র অভিযান চালায়। তেমন কোনো অবৈধ গ্রাহকেরই লাইন কাটেনি। তিতাস কর্তৃপক্ষ কঠোর থাকলে এলাকায় এভাবে হাজার হাজার সংযোগ দিয়ে অবৈধ গ্যাস বিজনেস আমাদের কাউন্সিলরের লোকজন করতে পারতো না। তিতাস কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন এলাকায় লোক দেখানো কিছু অভিযান চালিয়ে ও জরিমানা করে তাদের অভিযান সমাপ্ত করেন। কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর পুনরায় ওই সব অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার সকল আয়োজন সম্পন্ন করেন সেই কর্মকর্তারাই। তবে তারা (তিতাসের অসাধু কর্মকর্তা) মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে যেসব বাড়িতে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে থাকেন সেগুলোতে কোন অভিযান চালাতে কখনও দেখিনি। এভাবে এই চক্র প্রতিমাসে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাড়ির মালিক বলেন, নতুন বাড়ি নির্মাণ করেছি। আমরা চাইনা অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করতে। কিন্তু বৈধভাবে সংযোগ নিতে না পারায় বাধ্য হয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দালাল ঠিকাদারদের মাধ্যমে লাইন সংযোগ নিয়ে গ্যাস ব্যবহার করছি। মাসে মাসে তারা এসেই বিল নিয়ে যান।
স্থানীয় সচেতন মহল জানায়, সরকারিভাবে গ্যাস সংযোগ দেয়া নিষিদ্ধ থাকলেও সরকারের সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এখনো গ্যাস সংযোগ দিচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। গ্রাহকদের কাছ থেকে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে বহাল তবিয়্যতে চালিয়ে যাচ্ছে এসব অপকর্ম।
এনসিসি ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান খান রিপন এর মুঠোফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে পুরো ওয়ার্ডজুড়েই আমার লোক। কারণ আমি ১৭ হাজার ভোটারের প্রতিনিধি। আমি কোন অপরাধকে প্রশ্রয় দেইনা। সমাজে অনিয়মগুলো সেই বহুকাল পূর্ব থেকে চলছে। আপনার কাছে তথ্য থাকলে সরেজমিনে এসে দেখুন এবং জানুন যারা এ অপরাধগুলো করছে তারা আমার লোক কিনা। প্রয়োজনে তিতাস কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করুন এবং জানুন কোনটা বৈধ এবং কোনটা অবৈধ সংযোগ সেটা একমাত্র তারাই বলতে পারবে।
অবৈধ গ্যাস লাইন সংযোগের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ তিতাসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রকৌশলী মো. মফিজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।