দীর্ঘ সময় পর নগরীর ফুটপাত দখলমুক্ত করতে ও যানজট নিরসনে একত্রিত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ৩ জনপ্রতিনিধি, ডিসি-এসপিসহ সর্বস্তরের প্রতিনিধিরা। ঐক্যবদ্ধভাবে ঘোষণা দিয়েছিলেন ফুটপাত দখল করে বসতে পারবেনা কোনো হকার। বৈঠকের পর সুফলও পাচ্ছে নগরবাসী। নগরীর প্রধান সড়কগুলোর কোথাও নেই কোনো হকার। তবে, নগরীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের দেয়াল ঘেষে সড়ক দখল করে দিব্যি ব্যবসা করছে হকাররা। এতে করে প্রশ্ন উঠছে চলমান হকার উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে। এলাকাবাসী বলছে, পুরো নগরীর হকারদের উচ্ছেদ করা হলেও এখানে কেন ভোগান্তি থেকে রেহাই পাচ্ছি না আমরা? কার স্বার্থে উচ্ছেদ করা হচ্ছে না এদেরকে?
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলটির সীমানা প্রাচীরের দেয়াল ঘেষে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দিব্যি ব্যবসা করছে হকাররা। স্কুলটির অপরপাশেও সড়ক দখল করে আছে বেশ কয়েকজন হকার। এমনকি স্কুলের প্রধান দুই ফটক ও স্কুলের পাশের দেওভোগ মার্কেট হিসেবে পরিচিত মার্কেটটির সামনেও গায়ের জোরে সড়ক দখল করে দোকান বসিয়েছে তারা। এতে করে এই সড়কে চলাচলকারী পথচারী ও যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়টিতে ৪/৫ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। তাই স্কুল শুরুর সময় এবং ছুটির সময় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি থাকে। ঐ সময় এমনিতেই এ সড়কটিতে বাড়তি চাপ থাকে। তার উপর অনেকটা স্থায়ীভাবে বড় বড় লোহার দোকান দিয়ে রাস্তা দখল করে রাখা হকারদের কারণে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের। একই অবস্থায় পড়তে হয় সাধারণ পথচারীদেরও।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সকালে স্কুলে আসার সময় এবং স্কুল ছুটির পরে বাসায় যাওয়ার সময় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। অভিভাবকরাও বলছে একই কথা। অভিভাবকরা আরও বলছে, এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি স্কুলের পাশে এতোগুলো বড় বড় লোহার দোকান রেখে সড়ক দখল করে রাখার সাহস হকাররা পায় কিভাবে?
নগরবাসী ও পথচারীদের মতে, শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান ও আইভী মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে হকার উচ্ছেদের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা কার্যকর করতে হলে শুধু বঙ্গবন্ধু সড়ক নয় শহরের সকল সড়ক থেকেই হকার উচ্ছেদ করতে হবে। তা না হলে তাদের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। পাশাপাশি প্রশাসনকেও সকল সড়ক ও ফুটপাত হকারমুক্ত করতে নজর দেয়ার আহবান জানান তারা। কেননা, একটি সড়কেও যদি হকাররা থেকে যায় তাহলে তাদের এই উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়বে নগরবাসী। তাই অনতিবিলম্বে মর্গ্যান গার্লস স্কুলের সামনের রাস্তা থেকে হকারদের উচ্ছেদ করার দাবি জানায় তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, মেয়র আইভীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে মূলত এই রাস্তাটি দখল করে রেখেছে কয়েকজন হকার। যদিও মেয়র এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলেও দাবি তাদের। তবে, প্রয়োজনে এই রাস্তা কারা দখল করে রেখেছে তাদের নাম ও পরিচয় বলবেন বলেও জানান স্থানীয়রা।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, স্কুল চলাকালীণ সময়ে হকাররা বসে না। স্কুল ছুটি হওয়ার সাথে সাথেই তারা এই জায়গাটা দখল করে। এক শ্রেণীর স্থানীয় লোকের তত্ত্বাবধানে এগুলো চলে। আমরা যখন স্কুলে যাই তখন তাদের সরিয়ে দেই। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে, ডিসি-এসপিকে জানানো হয়েছে, তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। স্কুল চলাকালীণ সময়ে আমরা যতটুকু পারি তাদেরকে সরিয়ে রাখি কিন্তু এরপরেই তারা বইসা যায়। প্রশাসনকে জানানো পরও প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ ব্যাপারে আমরা জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করবো।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে শীঘ্রই হকাদের উচ্ছেদ করা হবে। নগরীর কোথাও সড়ক বা ফুটপাত দখল করে হকাররা বসতে পারবেনা বলেও হুশিয়ারী দেন তিনি।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।