নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টের অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদের ঘোষণা দিলেও ব্যস্ততম ২নং রেলগেট এলাকায় বন্ধন ও উৎসব পরিবহনের অবৈধ স্ট্যান্ড রয়েছে বহাল তবিয়্যতে। জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কতিপয় অসাধু সদস্যকে মোটা অংকের মাসোহারা দিয়ে এখানে অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে বলে দাবি পরিবহন সংশ্লিষ্টদের। ট্রাফিক সদস্যরা পালা করে নিয়মিত এখানে এসে টাকা নিয়ে যায় জানিয়ে তারা বলেন, এমনি এমনি তো আর রাস্তা বন্ধ করে দাড়িয়ে থাকি না, টাকা দেই বলে রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেয়। বক্তব্যের সত্যতার পাওয়া গেলো হাতেনাতে। বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে ২নং রেলগেট এলাকায় গড়ে উঠা অবৈধ এ স্ট্যান্ডের দিকে নজর দিতেই চোখ পড়ে এক ট্রাফিক সদস্যের দিকে। মুক্তিযুদ্ধ স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্যের র্যালিংয়ের উপর বসে থেকে বন্ধন বাসের হেলপারের সাথে কথা বলতে দেখা যায় তাকে। এসময় লক্ষ্য করে দেখা যায়, নানাভাবে ইনিয়ে বিনিয়ে টাকা দাবি করছেন ঐ ট্রাফিক পুলিশ সদস্য। পরিবহন শ্রমিকরাও ঝামেলা এড়াতে এক ব্যক্তির মাধ্যমে টাকা গুজে দেন তার হাতে। ব্যাস তিনিও চলে গেলেন সড়কের অন্যদিকে।
এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর একই স্থানে দায়িত্ব পালন করতে আসেন ট্রাফিক পুলিশের এডমিন অফিসার টিআই করিমকে। তিনি আসার পরও বন্ধন ও উৎসব পরিবহনের বাসগুলো লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে সড়কের একটি অংশ ব্লক করে রাখে। তার উপস্থিতির পরও এভাবে সড়ক দখল করে রাখার ছবি তুলতে গেলে গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে তড়িঘড়ি শুরু করেন এই ট্রাফিক সদস্য। গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে মুহুর্তের মধ্যেই সকল বাস সরিয়ে দিয়ে সড়ক যানজট মুক্ত করেন তিনি। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর তিনি চলে গেলে আবারও সড়কের ঐ অংশটি বাসগুলো দখলে নিয়ে নেয়।
এদিকে, গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে টিআই করিমের এমন তড়িঘড়ি দেখে তাকে নিয়ে বিদ্রুপ করতে দেখা যায় জনসাধারণকে। এসময় বিভিন্ন যানবাহনে যাতায়াতকারী ও পথচারীরা বলতে থাকে, ঠেলার নাম বাবাজি। এতক্ষণ এখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো কিন্তু বাসগুলোকে কিছুই বলে নাই। এখন সাংবাদিক দেখছে, আর দৌড়াদৌড়ি শুরু হইছে। সবগুলো ট্রাফিকই বদের হাড্ডি। ওদের চোখের সামনে, নাকের ডগায় অবৈধ এই স্ট্যান্ড গড়ে উঠলেও সেদিকে নজর দেয়ার সময় নেই। মাসোহারা নিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে, এদের বিচার আল্লাহ একদিন ঠিকই করবে।
সড়ক থেকে অবৈধ এসব স্ট্যান্ড উচ্ছেদে এবং মৌমিতা, বন্ধন ও উৎসব পরিবহনের এ রাম রাজত্ব বন্ধ করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তা ব্যক্তিদের নজর দেয়ার আহবান নগরবাসীর। একইসাথে, দায়িত্ব পালন করার পরিবর্তে মাসোহারা নিয়ে যে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা অবৈধ এ স্ট্যান্ড গড়ে তুলতে সহযোগিতা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের দৃষ্টি কামনা করেন তারা।
উল্লেখ্য, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ও ফুটপাত হকারমুক্ত রাখতে কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন। এ লক্ষ্যে নগরীর সকল ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদ করায় জনসাধারণের কাছ থেকে অভিনন্দন পাচ্ছেন তারা। তবে, ফুটপাত হকারমুক্ত হলেও যানজট নিরসন, অবৈধ ইজিবাইক বন্ধ ও গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনার বিষয়ে অদৃশ্য কোনো কারণে বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে প্রশাসন এমন দাবি নারায়ণগঞ্জবাসীর। তাদের মতে, গণপরিবহন মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের মাসোহারা পায় প্রশাসনের লোকজন, তাই এক্ষেত্রে শতভাগ ছাড় দিচ্ছেন তারা।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।