সিদ্ধিরগঞ্জে গভীর রাতে একটি স্বর্ণের দোকানে ঢুকে ক্যাশ বাক্স থেকে নগদ টাকা লুটে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে। শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ পুল বাজারে জামান জুয়েলার্স-২ এ ঘটনাটি ঘটে। দোকান মালিক ও দোকানে থাকা ৩ জন কর্মচারি ও মার্কেটে কর্মরত নৈশপ্রহরীর অভিযোগ, পুলিশ ও তাদের সোর্স দোকানে ঢুকে তল্লাশি চালায়। গাড়ি ভাড়া বাবদ ১ হাজার টাকা দেয়ার পরও ক্যাশ বাক্সে থাকা নগদ ৪৪ হাজার টাকা লুট করে নেয় তারা। তবে পুলিশ বলছে, তাদের সাথে থাকা সাদা পোশাকের লোকটি পুলিশের সোর্স নয়। তিনি পুলিশ বহনকৃত সিএনজির চালক মজনু। পুলিশ কোনো টাকা নেয়নি, ওই সিএনজি ড্রাইভার টাকা নিয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং তাকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ও ভুক্তভোগীরা থানায় আছে জানতে পেরে গণমাধ্যমকর্মীরা থানায় ছুটে গেলে তাদের থানা ভবনের ২য় তলায় ডেকে নিয়ে যায় রাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই হুমায়ুন-৩। সেখানে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে চাইলে তারা রাজি না হওয়ায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এএসআই শংকর সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে বলেন, স্বর্ণকারের দোকানের কর্মচারিদের পক্ষে আসছেন। দালালি করছেন দেখি কি করবেন। পরে তারা থানায় আগত স্বর্ণের দোকানের মালিক ও কর্মচারিদের বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে নিষেধ করেন।
জামান জুয়েলার্স-২ এর ৩ কর্মচারি সাগর, পারভেজ ও জাহিদ জানান, তারা ওই দোকানে থাকেন এবং রাতে কাজ করেন। কাজ শেষে সেখানেই ঘুমান। শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে তারা দোকান খুলে বাইরে যায়। এসময় পুলিশের টহলরত একটি সিএনজি দোকানের পাশে দাঁড়ায়। পরে পুলিশের পোশাক পরা দু’জন ও সাদা পোশাকে একজন দোকানে ঢুকে তাদের বলে পুলিশ দেখে দৌড় দিল এটা কে? তারা বলে এখানে অন্য কোনো লোক ছিলনা, আমরা দোকানের কর্মচারি আমরাই আছি। কেউ দৌড় দেয়নি। এরপর পুলিশ ও তাদের সোর্স বিভিন্ন হুমকি ধামকি ও গ্রেফতারের ভয় দেখায় কর্মচারিদের। তারা বলে, আমরা কাজ করছি এবং কাজের নমুনাও পুলিশকে দেখাই। এরপরও পুলিশ ২ কর্মচারির হাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে দেয় এবং টাকা দাবি করে। পরে তারা গাড়ি ভাড়ার জন্য ক্যাশ বাক্সে থাকা ৪৫ হাজার টাকার একটি বান্ডিল থেকে এক হাজার টাকা দেয়। তারা এই টাকায় সন্তুষ্ট না হওয়ায় পুলিশের সামনেই ওই সোর্স সিএনজি চালক ক্যাশ বাক্স থেকে পুরো টাকাটাই নিয়ে নেয় এবং যাওয়ার সময় একটি বিকাশ নাম্বার দিয়ে বলে কালকে এই বিকাশে আরও ৫ হাজার টাকা দিবি না হলে তুলে নিয়ে যাবো। পরে হ্যান্ডকাপ খুলে দিয়ে তারা চলে যায়।
মার্কেটে কর্মরত নৈশপ্রহরী মুজিবুর জানান, দোকানের সামনে পুলিশ দেখে আমি এগিয়ে আসি। দেখি তারা দোকানে হস্তনস্ত করছে। জিনিষপত্র তছনছ করে ফেলছে। আমি পুলিশকে বলি স্যার ওরা তো দোকানের কর্মচারি, এখানে থেকেই কাজ করে। পুলিশ বলে ওরা নেশা করে। আমি বলি নেশা করেনা। এসময় সিএনজির ভিতরে আরেকজন পুলিশ বসা ছিলো। একজন পুলিশ দোকানের গেটে আরেকজন ওই সিএনজির ড্রাইভারসহ ভিতরে। তারা দু’জনকে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে রাখে আরেকজনের কলার ধরে থাকে। পরে ১০ হাজার টাকা চাইলে আমি বলি স্যার ওরা গরিব মানুষ এত টাকা দিতে পারব না। খরচের জন্য ৫শ’ টাকা নিয়ে যান। এসময় ড্রাইভার কাউন্টারের ভিতরে গিয়ে দাঁড়ায় আর পুলিশ সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। একপর্যায়ে সিএনজিতে থাকা স্যার বলেন ওই তাদের হ্যান্ডকাপ খুলে দাও। এসময় ভিতরে থাকা স্যাররা আমাকে ধমক দিয়ে বলে তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো যাও। তিনি বলেন, আমি দারোয়ান তাই দাঁড়িয়ে আছি। কিছুক্ষণ পর তারা দোকান থেকে বের হয়ে যায়। পরে কর্মচারিরা জানায় ক্যাশবাক্সের সব টাকা নিয়ে গেছে।
স্বর্ণের দোকানের মালিক মো. জিয়ন বলেন, পুলিশ বলেছে সাংবাদিকদের সাথে বিষয়টি শেয়ার না করতে। এটাই স্বাভাবিক। পুলিশ চাইবে বিষয়টি নিয়ে তাদের কোনো বিপদ না আসুক। আমারও ক্লিয়ার কথা আমিও চাইনা কেউ বিপদে পড়ুক। আমি চাই আমার এখানে যা ঘটছে এর সুষ্ঠু বিচার। আমার দোকানের লোকজন এমন কোনো অপরাধ তো করেনি যে লুটপাট হয়ে যাবে। দু’জনকে হ্যান্ডকাপ লাগিয়েছে। তারা কি করছে যে এমন করতে হবে।
গণমাধ্যমকর্মীদের ম্যানেজ করতে না পেরে হুমকি ও দালাল বলার বিষয়ে এএসআই শংকর বলেন, এ বিষয়টি আমি জানিনা। আমি ঢাকা থেকে আসছি। আমি এ ঘটনার সাথে জড়িত নই। আমি কেনো সাংবাদিকদের এসব বলবো।
তিনি কিছু জানেন না বলেও পরে বলেন, থানায় এসে শুনতে পারলাম কয়েকজন এ নিয়ে বলাবলি করছেন। নিচে সিঁড়ির কাছে সাংবাদিকদের আমি শুধু বলেছি। উপরে যান সেখানে গিয়ে দেখেন কিছু করা যায় কিনা, দেখেন কি হইছে।
রাতে স্বর্ণের দোকানে পুলিশের টিম নিয়ে যাওয়া এসআই হুমায়ুন এ বিষয়ে বলেন, পুলিশ কোনো টাকা নেয়নি। সিএনজি চালক টাকা এনেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অলরেডি সিএনজি চালককে আটক করা হয়েছে। সে বলেছে কোনা টাকা নেয়নি। এছাড়া সিএনজি চালকের সাথে দোকানের লোকদের সাথে পূর্বের কোনো ঝামেলায় তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে কিনা দেখছি।
তবে হ্যান্ডকাপ পরানোর বিষয়ে তিনি বলেন, শনিবার দিবাগত রাত প্রায় ৪টার দিকে দোকান খোলা দেখে তিনি মনে করেছেন চুরি হয়েছে। তাই তাদের হ্যান্ডকাপ লাগিয়েছেনে। ওরা দোকানের কর্মচারি নিশ্চিত হওয়ার পর হ্যান্ডকাপ খুলে দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, বিষয়টি আমার জানা আছে। সিএনজি চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিষয়টি প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।