জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি কমরেড হাফিজুল ইসলাম হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেছেন, আপনারা ভোটে না বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। আপনারা নিজেদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন। আজ আমরা হুঁশিয়ারী দিয়ে বলতে চাই, যদি ক্ষমতা থাকে তাহলে ওই শীতলক্ষ্যাকে বাঁচান, তারপর আইসেন এই জেলাকে সুন্দর করতে। আপনাদের লজ্জা লাগা উচিত, চোখের সামনে দেশের সম্পদ নষ্ট হচ্চে। আর আপনারা আসছেন গরীবের পেটে লাথি মারতে। শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জেলা কমিউনিস্ট পার্টি ১৬তম শহর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য এ কথা বলেন হাফিজুল ইসলাম।
হাফিজুল ইসলাম বলেন, আপনারা মশা উচ্ছেদ করতে পারলেন না, গরীব মানুষদের উচ্ছেদ করতে আসছেন। এই মানুষেরাই আপনাদের দাঁতভাঙা জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। শীতলক্ষ্যা দিয়ে যারা পাড় হন তারা যানেন, এই নদীর পাড় করতে গেলে দুগন্ধে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। মশার কারণে এই নারায়ণগঞ্জের মানুষই বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। আপনারা এই শীতালক্ষ্যাকে উদ্ধার করেন।
তিনি আরও বলেন, ২৪ সালের কলঙ্কজনক নির্বাচনের পর সরকার ক্ষমতায় আসছে। আমাদের দেশের যে উন্নয়ন হয়ছে সেটা আমরা অস্বীকার করি না। উন্নয়ন রাষ্টের একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা চাই দেশের উন্নয়ন হোক, কিন্তু দেশের উন্নয়ন কি দেশের মানুষকে ক্ষুধার্থ রেখে তাদের অসুন্দর রেখে আপনারা কাদের সুন্দর করতে চান। আমরাও নগরীকে সুন্দর করে রাখতে চাই। নগরীর মানুষদের ক্ষুধার্থ রেখে আপনারা শুধু কয়েকজন মানুষদের উন্নয়ন করতে চাচ্ছেন। সিটি কর্পোরেশন প্রতিদিনই উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে। ওই অটোরিকশা, ইজিবাইককে তারা অবৈধ বলছে, কিন্তু এই অটো, সিএনজি, মিশুক থেকে চাঁদা তোলেন। এই চাঁদার অনেক বড় অংশ পুলিশসহ সরকারের ছত্রছায়ায় যারা থাকে তারা ভাগ পায়। তারা বিভিন্ন রকমের কার্ড দেয়, চাবি দেয় এবং মাসোয়ানা করে সাপ্তাহিক ভাবেই তারা চাঁদাবাজি করছে। এই হকাররা পেটের ভাতের জন্য ফুটপাতে বসে। এ হকারদের আগে পুনর্বাসন করা হয়েছে। যে হকার মার্কেট করা হয়েছে সেই ৩-৩ ফুটের একটি জায়গায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। পুনর্বাসনের নামে হকারদের ধোঁকা দেয়া হয়েছে। ক্ষমতায় এসে শুধু বস্তি উচ্ছেদ আর হকার উচ্ছেদ করছেন। তারা গরীব মানুষদের উচ্ছেদ করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। উন্নয়ন করতে আমাদের বাধা নেই। কিন্তু সিংহভাগ মানুষদের ক্ষুধায় রেখে আপনারা কি উন্নয়ন করতে চাচ্ছেন? এই নারায়ণগঞ্জের কতজন মানুষ প্রাইভেট কারে চড়ে? শুধু তাদের কথা বিবেচনা করছেন। আপনারা বলছেন কিভাবে ২নং গেট থেকে চাষাঢ়ায় ৩ মিনিটে যাওয়া যাবে। কিন্তু আপনাদের উচ্ছেদের জন্য হকাদের ছেলে-মেয়েরা না খেয়ে, না পড়ে অনাহারে থাকছে। আপনারা বলছেন হকারদের বিরুদ্ধে এই জেলার ৯০ শতাংশ মানুষ আছে। যদি ৯০ শতাংশ মানুষ হকারদের বিরুদ্ধে থাকে তাহলে তাদের বলে দেন, এই হকারদের থেকে কিছু কেটাকাটা না করতে। তাহল একজন হকারও ফুটপাতে থাকবে না। আমরা দেখতে চাই, আপনাদের প্রাইভেটকারে কতজন মানুষ চড়ে আর রিকশায় কতজন মানুষ চড়ে।
তিনি বলেন, আপনাদের এই সড়ক দখল হকার করে নাই। দখল করেছে হোটেল রেস্টুরেন্ট ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গাড়ি সড়কে পার্কিং করে। আজ বিভিন্ন প্রাইভেটকার আর মোটরসাইকেল যখন সড়ক দখল করে রাখে সেটা সড়কের যানজটের কারণ না, আজ কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যারা নিজ দায়িত্বে নিজের পেটের দায় কাজ করে খায়। নারায়ণগঞ্জের গর্ভের জায়গা শীতলক্ষ্যার পানি আজ বিষের রূপ নিয়েছে। পৃথিবীর কোথাও এমন হয় নাই সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন কারখানার নালা শীতলক্ষ্যায় মিলিত হয়েছে। সেই করাখানার ব্যবসায়ীরা পরিবেশ অধিদপ্তরে ঘুষ দিয়ে নিজেদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এই ব্যক্তিরা লাখ লাখ টাকা দিয়ে আমাদের মানুষদের বিষাক্ত পানিতে ডুবিয়ে মারছে। সেটা আপনারা কিছু করতে পারেন না।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এড. মন্টু ঘোষ, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড শিবনাথ চক্রবর্তী, মৈত্রি ঘোষ, আব্দুস সোবহান, শোভা সাহা, সাহানারা বেগম, আব্দুল হাই শরীফ প্রমুখ।