মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, ভাষাসৈনিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত পৌরপিতা আলী আহাম্মদ চুনকার ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি)। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধার সাথে তাঁকে স্মরণ করবে নারায়ণগঞ্জবাসী। তিনি ছিলেন স্বাধীনতার পর নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম ও পরপর দু’বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান।
রোববার সকালে মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শহরের ডিআইটি এলাকা থেকে আলী আহাম্মদ চুনকা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রভাত ফেরি অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টায় শহরের আলী আহাম্মদ চুনকা পাঠাগার ও মিলনায়তনের সামনে থেকে প্রভাত ফেরিতে উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক প্রদক্ষিণ করে মাসদাইর কবরস্থানে আলী আহাম্মদ চুনকার কবরে গিয়ে প্রভাত ফেরিটি শেষ হবে। সেখানে তাঁর কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন এনসিসি মেয়র ও তার বড় কন্যা ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। কবর জিয়রত ও দোয়া শেষে আলী আহাম্মদ চুনকার বাসভবন খানকায়ে দারুল ইস্কে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া তাহেরিয়া মাদ্রাসা, হোসাইনিয়া মমতাজিয়া চুনকা সুন্নিয়া মাদ্রাসা ও বঙ্গসাথী ক্লাবে মিলাদ মাহফিল এবং বিশেষ দোয়ার আয়োজন থাকবে। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় সংগঠনের উদ্যোগে নানা কর্মসূচি পালিত হবে।
প্রয়াত এই নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনায় তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের টানা ৩ বারের নির্বাচিত মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৩৪ সালে ১৬ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের দেওভোগের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে আলী আহাম্মদ চুনকা জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ওয়াহেদ আলী, মাতার নাম গোলেনুর বেগম। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ‘৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রাম পর্যন্ত সকল আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন আলী আহাম্মদ চুনকা। ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলে মনোবল ভেঙ্গে যাওয়া নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত এবং সংগঠিত করার কাজটিও করেন চুনকা। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর দীর্ঘদিন তাকে গৃহবন্দি রাখা হয়। স্থানীয় সেনা ক্যাম্প ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন।
১৯৭৮ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন আলী আহাম্মদ চুনকা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ প্রথম নির্বাচনে বিপুল ভোটে প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭৯ সালে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নে সংসদ সদস্য প্রার্থী হন। আলী আহাম্মদ চুনকা রাজনৈতিক পরিধির বাইরে গিয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় সামাজিক ও ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি সবার কাছে ‘চুনকা ভাই’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এই পরিচিতি তাকে জননেতার মর্যাদায় আসীন করে। দীর্ঘ কর্মময় জীবনে কখনও ক্লান্তি স্পর্শ করেনি তাকে। বিরামহীন এই পথচলা তাকে কিংবদন্তীতুল্য জনপ্রিয়তা এনে দেয়। তাঁর ৩ কন্যার মধ্যে বড়জন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে টানা ৩য় মেয়াদে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। ২ ছেলের মধ্যে বড় ছেলে আহাম্মদ আলী রেজা রিপন জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি এবং ছোট ছেলে আহাম্মদ আলী রেজা উজ্জ্বল মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।